ফিরে এসো সোনালি

একজন ভারতীয় মডেল, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও সুদক্ষ অভিনেত্রী তিনি। শারীরিক গঠন, আবেদন, লাস্যময়তা, সৌন্দযর্ ও অভিনয়গুণে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় হয়েছেন। দশর্ক চাহিদার তুঙ্গে থেকেই চলচ্চিত্রকে গুডবাই জানান তিনি। তার ব্যক্তিত্ব ও অভিরুচি এখনো দশর্ক হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। হ্যঁা, বলছি বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের কথা।

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

ষ শেখ সামিরাহ
সোনালি বেন্দ্রে
একজন ভারতীয় মডেল, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও সুদক্ষ অভিনেত্রী তিনি। শারীরিক গঠন, আবেদন, লাস্যময়ী সৌন্দযর্্য ও অভিনয়গুণে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও জনপ্রিয় ছিলেন। দশর্ক চাহিদার তুঙ্গে থেকেই চলচ্চিত্রকে গুডবাই জানান তিনি। তার ব্যক্তিত্ব ও অভিরুচি এখনো দশর্ক হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। হ্যঁা, বলছি বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের কথা। এই মুহূতের্ ৪৩ বছর বয়সী এই গুণী নায়িকা ক্যান্সারের চ‚ড়ান্ত পযাের্য় রয়েছেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন। এই বিষয়টা কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই তিনি জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে এই প্রসঙ্গে সোনালি এক দীঘর্ টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘যখনই তুমি খারাপ কিছু আশা করবে না তখনই জীবন তোমাকে বঁাকা পথে নিয়ে যাবে। সম্প্রতি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমার চ‚ড়ান্ত পযাের্য় ক্যান্সার ধরা পড়েছে, এবং সেটা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। যেটা আমি কখনওই আশা করিনি। একটা ব্যথা হচ্ছিল। সেটা পরীক্ষা করতেই ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমার পাশে আছে। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।’ তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও তিনি যে ভেঙে পড়েননি, তা তার লেখাতেই স্পষ্ট। সোনালি আরও লিখেছেন, ‘এখন এটার মোকাবিলা করা ছাড়া আর উপায় নেই। চিকিৎসকরা যতটা সম্ভব দ্রæত পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি বতর্মানে নিউইয়কের্ চিকিৎসারত রয়েছি। তবে আমি আশাবাদী, এবং প্রতিটা পদক্ষেপে লড়াই করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’ এ খবর জানার পর গোটা বলিউডই সোনালির পাশে দঁাড়িয়েছে। সোশাল মিডিয়ায় তার আরোগ্য কামনা করে অনেকেই বাতার্ দিয়েছেন। তবে আগেই খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করে তাকে সাহস দিয়েছেন অক্ষয় কুমার। জানা গেছে সোনালির অসুস্থতার কথা জানতে পেরেই অক্ষয় দুদিন আগেই নিউইয়কের্ দেখা করেন সোনালির সঙ্গে। তাকে লড়াইয়ের জন্য উৎসাহ দেন। অক্ষয় জানিয়েছেন সোনালি অত্যন্ত লড়াকু মানসিকতার। তাই তিনি নিশ্চিত এই লড়াইতে সোনালি ঠিক জয়ী হবেন। একসঙ্গে পঁাচ-পঁাচটি ছবি করেছেন অক্ষয় ও সোনালি। সবের্শষ তারা অভিনয় করেছেন ২০১৩ সালে, ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন মুম্বই দোবারা’ ছবিতে। এ ছাড়াও অক্ষয় ও সোনালিকে ‘সাপুত’, ‘তারাজু’, ‘কীমাত’, ‘অঙ্গারে’ ছবিতে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে। অক্ষয় কুমার ছাড়াও সোনালিকে এই কঠিন লড়াই জয়ের জন্য মনের জোর দিলেন লিসা রে। নিজেকে ক্যান্সার গ্র্যাজুয়েট বলেন লিসা। শনিবার তিনি টুইট করে বলেন, ‘তোমাকে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। শব্দ কম পড়বে যদি কিছু বলতে চাই। আমিও এই মরণ রোগের বলি হয়েছিলাম। আমি তোমায় শুধু ভালোবাসা পাঠালাম।’? তবে শুধু লিসা রে নয়, অভিনেত্রী মনীষা কৈরালাও মেসেজ করে সোনালি দ্রæত সুস্থতা কামনা করেন। এক কথায় এখন পুরো বলিউড বলছে ‘গেট ওয়েল সুন সোনালি’। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির এই তারকা ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে মুম্বাইয়ে এক মারাঠি পরিবারে জন্ম। তিনি বেঙ্গালুরু এবং মুম্বাইয়ে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় এবং হলিক্রস কনভেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়, থানেতে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি ওয়েলহাম গালর্স স্কুল, দেরাদুনে অধ্যয়ন করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে গোবিন্দর বিপরীতে ‘আগ’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন সোনালি বেন্দ্রে। পরে রূপ ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দশের্কর হৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। শুধু রোমান্সই নয়, সোনালি অ্যাকশন এবং কমেডি ধরনের পঞ্চাশটির অধিক হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন তামিল, তেলেগু, মারাঠি এবং কন্নড় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ ‘নারাজ’, ‘ইংলিশ বাবু দেশি ম্যাম’, ‘ডুবলিক্যাট’, ‘জখম’, ‘মেজর সাব’, ‘হ্যাম সাথ সাথ হ্যায়’ ইত্যাদি। ২০০২ সালে ১২ নভেম্বর হিন্দি ছবির ক্ষমতাধর পরিচালক, প্রযোজক এবং পরিবেশক গোল্ডি বেহেলকে বিয়ে করে বলিউডকে বিদায় বলেন সোনালি। অবশ্য পরে কয়েকটি ছবিতে অতিথি চরিত্রে দেখা গেছে। সবের্শষ ২০১৩ সালে ওয়ান্স আপন অ্যায় টাইম ইন মুম্বাই দোবারা সিনেমায় অতিথি হিসেবে দেখা গেছে সোনালিকে। এরপর থেকে ছোট পদার্য় একটি ফিকশন ও একটি রিয়েলিটি শো করতেন এই অভিনেত্রী। সোনালি ইন্ডিয়ান আইডল মৌসুম চার এবং ইন্ডিয়াস গট টেলেন্ট প্রতিযোগিতার চারজন বিচারকের মধ্যে একজন। এ ছাড়া কিছুদিন আগে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘ইন্ডিয়াস বেস্ট ড্রামেবাজ’-এর বিচারকের ভূমিকায় ফিরে বেশ খুশি ছিলেন সোনালি। তবে সপ্তাহ খানেক আগেই আবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শোয়ের বিচারকের ভূমিকা থেকে সরে দঁাড়ান। আর এরপরেই তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলল। সোনালি মহারাষ্ট্র এবং অন্ধ্র প্রদেশের কল্যাণ কাঞ্চিতে প্রিল সোপ, সূযর্ বাল্বস অ্যান্ড টিউব্স, ওমেগা ওয়াচেস, ড. মরপেন, ডাবর, ভি-জন গ্রæপ ইত্যাদির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর (মুখপাত্র) হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি কালার্স টিভি প্রদশির্ত মিশন সাপনে টেলিভিশন রিয়ালিটি শোর কথক হিসেবে কাজ করেছেন। সোনালি শুধু সুদক্ষ অভিনেত্রী নন, একজন সুবিবেচক মানুষও বটে। সম্প্রতি ‘পাচর্ড’ ছবির অভিনেত্রী তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায় বণর্বাদের শিকার হওয়ার পরে বলিউড তারকাদের মধ্যে তিনি প্রথম প্রতিবাদ জানান। এর প্রতিবাদে কখনও ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করবেন না বলে বলিউডের এক সময়ের লাস্যময়ী অভিনেত্রী সোনালি জানান। ওই সময় তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এভাবে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা একেবারেই শোভনীয় নয়, এটা একেবারেই ভুল। তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত প্রোডাক্ট মেয়েদের ভোগ্য পণ্য হিসেবে দেখায় এবার তাদেরও ত্যাগ করার সময় এসেছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে আর কখনও ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন করব না।