গানের কনির্য়া

তরুণ প্রজন্মের ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কনির্য়া। খুব বেশি দিন হয়নি গানের জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। কিন্তু এরই মধ্যে হৃদয় ছেঁায়া সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে জয় করে নিয়েছেন দশর্ক-শ্রোতার মন। গানপ্রিয় এই শিল্পী গান নিয়েই কাটিয়ে দিতে চান সারা জীবন। বেঁচে থাকতে চান ভক্তদের অন্তরের মাঝে। লিখেছেন মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাকিয়া সুলতানা কনির্য়া
সেই থেকে শুরু... মা সেলিনা আক্তার ছিলেন গান পাগল মানুষ। এক সময় গান করতেন। তাই সংগীতশিল্পী কনির্য়ার গানের হাতে-খড়ি শুরু হয়েছিল পরিবার থেকেই। মায়ের কাছ থেকেই প্রথম গান শেখা। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে সারেগামা শিখিয়েছেন মা। কারণ গান নিয়ে নিজের যে স্বপ্ন ছিল তা পূরণ করেছেন মেয়েকে দিয়ে। মায়ের উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় সংগীতে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন এই শিল্পী। ‘পাওয়ার ভয়েস’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে পরিচিতি পান কনির্য়া। এ প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছিলেন মায়ের উৎসাহে। তিনি বলেন, ‘আমার এক বন্ধু ফোন করে জানান, সে পাওয়ার ভয়েসের ইয়েস কাডর্ পেয়েছে। খবরটি আম্মুকে জানালাম। আম্মু বলল, তুমিও ইয়েস কাডর্ পাবা, যাও একবার গিয়ে দেখই না। তো আমিও ভাবলাম যাই।’ নজরুলগীতি থেকে পপ... পাওয়ার ভয়েসের আগ থেকেই কনির্য়া গান করতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কিন্তু তখন তার এত নামডাক ছিল না। এখন গানের কনির্য়া মানেই দশের্কর হাত তালি, আনন্দ উল্লাস আর সুরে সুরে পুরো অডিটোরিয়াম মাতিয়ে রাখা। তার গায়কি ভঙি যে কোনো দশর্ক-শ্রোতাকেই আকষর্ণ করতে বাধ্য। পপ ঘরানার গানই বেশি করেন কনির্য়া। যদিও ছায়ানটে ভতির্ হয়েছিলেন নজরুল সংগীতে। নজরুল থেকে পপ ঘরানার শিল্পী কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নজরুল সংগীত শিখলে সব ধরনের গান শেখা সহজ হয়। নজরুল সংগীতের শিক্ষাথীর্ থাকলেও পপ ঘরানার গানের প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। এখন পপ ঘরানার গান গাইলেও নজরুল সংগীত ছাড়িনি। ইচ্ছে আছে সামনে কিছু নজরুল সংগীত করব। যতœ নিয়েই সেই গানগুলো করতে চাই।’ উড়ো উড়ো মন... চলমান ব্যস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই কনির্য়া জানালেন, ‘বতর্মানে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করছেন এই সংগীতশিল্পী। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়মিত স্টেজ শো করছেন। স্টেজ শোর পাশাপাশি ব্যস্ত রয়েছেন টিভি অনুষ্ঠান নিয়ে। আগামী ১৭ জানুয়ারি এনটিভিতে লাইভ প্রোগ্রাম করবেন। তবে অনেকের মতো নিজেকে টিভির পদার্য় দেখাতে চান না তিনি। কনির্য়ার ভাষায়, ‘লাইভ প্রোগ্রামে খুব কম যাই। কারণ সব সময় স্ক্রিনে নিজেকে দেখাতে ভালো লাগে না। আবার অনেক সময় হুট করে টিভি প্রোগ্রামের ডাক আসে তাতে নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার সময় থাকে না। আমি যখনই টিভি লাইভে যাই ভালো কিছু আউটপুট দেয়ার চেষ্টা করি। নতুন কিছু দেয়ার জন্যই টিভি প্রোগ্রামে অংশ নিই।’ শুধু টিভি অনুষ্ঠানেই নয়, কনির্য়া দশর্ক-শ্রোতাদের জন্য নতুন কিছু উপস্থাপন করতে চান। তারই ধারাবাহিকতায় সিডি চয়েস থেকে প্রকাশ পেয়েছে তার ‘উড়ো উড়ো মন’। সজীব শাহরিয়ারের কথায় এর টিউন করেছেন রেজওয়ান শেখ। খুব শিগগিরই এর ভিডিও নিমার্ণ করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গানটি নিয়ে খুব ভালো সাড়া পাচ্ছি। এর ভিডিও নিয়ে দশর্কদের মাঝে খুব শিগগিরই হাজির হব।’ গায়িকা যখন মডেল... কনির্য়ার কাছ থেকে জানা গেল, আসছে ভালোবাসা দিবসে প্রকাশ পাবে তার ‘বাকা চোখে’ গানের মিউজিক ভিডিও। স্নেহাশীষ ঘোষের লেখা এ গানের সুর করেছেন রেজওয়ান শেখ। সম্প্রতি সংগীতার ব্যানারে এ গানের দৃশ্যায়ন হয়েছে থাইল্যান্ডে। এতে তিনি গানের মডেলও হয়েছেন। এর নিদের্শনা দিয়েছেন পি সুপ্পু। অ¤øান চক্রবতীর্র সুর-সংগীতে ‘ঢাকাতে জ্যাম’ গানটি প্রকাশ পাবে ধ্রæব মিউজিক স্টেশন থেকে। সোমেশ্বর অলির কথায় জুয়েল মোশেের্দর সঙ্গে দ্বৈত ‘তুই তুকারি’ ভিডিও নিয়েও কাজ করছেন গানের এই শিল্পী । আসবে আবার সুদিন... বতর্মান গানের বাজার এবং পরিবেশ প্রসঙ্গে কনির্য়ার বক্তব্য হচ্ছে, ‘এখন প্রচুর গান হচ্ছে কিন্তু অসংখ্য গানের ভিড়ে অনেক ভালো গান হারিয়ে যাচ্ছে। আগের গানগুলো এখনো টিকে আছে কারণ তখন কম গান হতো। অনেক দিন পর সুন্দর একটি গান হতো, যা দীঘর্ দিন মানুষের মনে জায়গা করে নিত। এখন প্রচুর গান হচ্ছে। এর মধ্যে ভালো-মন্দ দুটোই আছে। অনেক গান খুবই ভালো হচ্ছে। নতুনরা নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। অনেক মেধাবীরা গানে এগিয়ে আসছে। এটা অবশ্যই ভালো দিন বলে আমি মনে করি।’ আর মিউজিক ভিডিওর অবস্থা? কনির্য়ার জবাব, ‘সময়ের সঙ্গে সব কিছুতে পরিবতর্ন আসে। তাই গানে মিউজিক ভিডিওর গুরুত্ব রয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। সারা বিশ্বেই এখন শিল্পীরা নিজের গানের সঙ্গে পারফমের্ন্স করছেন। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। যেসব গানের সঙ্গে শিল্পী নিজেই পারফমের্ন্স করছে সেগুলো দশর্ক- শ্রোতারাও অন্য গানের চেয়ে বেশি গ্রহণ করছেন। এটি সত্যি, গান প্রথমত শোনার বিষয়। কিন্তু সময়কে উপেক্ষা করা যাবে না।’ সুযোগ পেলেই প্লেব্যাক... গান নিয়ে স্টেজ, টিভি অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখলেও সিনেমায় গান কম গাওয়া হয় কনির্য়ার। ক্যারিয়ারে এ পযর্ন্ত ১৫/১৬টি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন। প্লেব্যাকে প্রথম কণ্ঠ দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে জাকির হোসের রাজু পরিচালিত ‘রাঙা মন’ সিনেমায় ‘স্বপ্ন’ শিরোনামের গানে। চলচ্চিত্রের গানের প্রস্তাব এলেও ব্যাটে-বলে না মেলায় গাওয়া হয় না। কনির্য়া বলেন, ‘সিনেমার গানের প্রস্তাব হুট করে আসে। যে সময়টা আমি স্টেজ নিয়ে ব্যস্ত। হয়তো ঢাকার বাইরে আছি তখন প্রস্তাব আসে সিনেমায় গাইতে। তখন আর সম্ভব হয় না। প্রস্তুতিরও দরকার আছে। যা গাইব তা যদি ভালো না হয় তাতে লাভ নেই। সময়-সুযোগ হলে প্লেব্যাক করব।’ তবে কিছুদিন আগে নতুন বছরের শুরুতে অপূবর্ রানা পরিচালিত ‘দরদ’ নামের নতুন একটি চলচ্চিত্রে বেলাল খানের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন কনির্য়া। সুদীপ কুমার দীপের লেখা এ গানটির প্রথম দুই লাইন এমনÑ হাজার জনম ধরে যদি তোমাকে পেতাম/ ভালোবেসে যেতাম শুধু ভালোবেসে যেতাম। এটির সুর ও সংগীত করেছেন শামিম আহমেদ। চলচ্চিত্রের গান নিয়ে কনির্য়া বলেন, ‘মাঝখানে চলচ্চিত্রের গানের অবস্থা বেশ খারাপ ছিল। কিন্তু এখন অনেক ভালো। স্ট্যান্ডাডর্ মিউজিক হচ্ছে। আমার কাছে পজেটিভ মনে হচ্ছে।’ আমৃত্যু গান গাইবো... রুনা লায়লা, পপ শিল্পী মিলা ও সুধীনি চৌহানের কণ্ঠে গান শুনতে ভালো লাগে কনির্য়ার। ভালো লাগে ব্যান্ডের গান। ইচ্ছে আছে গান নিয়ে সারাজীবন কাটানোর। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। এমবিএ করার পরিকল্পনা থাকলেও গান ছাড়া অন্য কিছুকে পেশা হিসেবে নিতে চান না। কনির্য়া বলেন, ‘এমবিএ শেষ করে কোনো চাকরি করার ইচ্ছে আমার নেই। গানকেই পেশা হিসেবে নিতে চাই। মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত গান নিয়েই থাকতে চাই।’