দ্যুতিময় সাবিলা নূর

২০১৮ সালজুড়ে নাটকপাড়ায় তিনি আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করে দশের্কর মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছেন। বছরের শেষদিকে তার অভিনীত ‘চাকা’ নাটক প্রচারের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন এ অভিনেত্রী। গত ১৪ ডিসেম্বর নাটকটি একসঙ্গে প্রচার হয়েছে যে চারটি টেলিভিশনে, তা হচ্ছে মাছরাঙা, নাগরিক টেলিভিশন, এসএ টিভি ও একুশে টেলিভিশনে। নাটকটিতে তিনি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করলেও সবার নজর কাড়েন সাবিলা...

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মাসুদুর রহমান শুরুতেই একটু পেছন থেকেই শুরু করা যাক। আজ থেকে ৫ বছর আগে ২০১৪ সালের মাঝামাঝিতে মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে পা রাখেন সাবিলা নূর নামের এক নতুন মডেল। প্রথম বিজ্ঞাপনেরই নজর কাড়েন তিনি। পাশাপাশি খুব অল্পসময়েই দশের্কর কাছে পরিচিতি পেয়ে যান এই নতুন মুখ। তারপর ক্রমেই সমানের দিকে এগিয়ে চলে তিনি। মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে খ্যাতিমান সব নিমার্তাদের কাছ থেকে। সেই যে শুরু। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে অনেকটা রাতারাতিই তারকাখ্যাতি পেয়ে যান এই মডেল অভিনেত্রী। টিভি পদার্য় বতর্মানে চাহিদাসম্পন্ন এবং অপরিহাযর্ একটি নাম সাবিলা নূর। ২০১৮ সালজুড়ে নাটক পাড়ায় তিনি আলোচনায় ছিলেন। বিভিন্ন নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করে দশের্কর মাঝে দারুণ সাড়া ফেলেছেন। বছরের শেষ দিকে তার অভিনীত ‘চাকা’ নাটক প্রচারের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন এ অভিনেত্রী। গত ১৪ ডিসেম্বর নাটকটি একসঙ্গে প্রচার হয়েছে চারটি টেলিভিশনেÑ মাছরাঙা, নাগরিক টেলিভিশন, এসএ টিভি ও একুশে টেলিভিশনে। নাটকটিতে তিনি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করলেও সবার নজর কাড়েন সাবিলা। নতুন বছরটিও শুরু হয়েছে ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই। জানালেন, আগামী ৩ ফেব্রæয়ারি থেকে নতুন একটি নাটকের শুটিং শুরু করবেন তিনি। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা করেছেন মেহেদী হাসান হৃদয়। তবে এখনো এর নাম ঠিক হয়নি। এ ছাড়া বতর্মানেও কিছু কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভালোবাসা দিবসের ছয়টি নাটকের কাজ তার হাতে রয়েছে। সাবিলা নূর বলেন, ‘এবার ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে প্রায় ছয়টি নাটকে কাজ করছি। এর মধ্যে কিছু নাটক ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে প্রচারিত হবে। আবার কিছু পরে প্রচারিত হবে।’ সাধারণত রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করেন এ অভিনেত্রী। সিরিয়াস চরিত্রেও তাকে দেখা গেছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো অভিনয় করলেন একটি ব্যতিক্রমী চরিত্রে। তার চরিত্রটি একটি ভ‚তের চরিত্র। তবে এটি নাটক নয়, স্বল্পদৈঘর্্য চলচ্চিত্রে। ছবিটির নাম ‘দ্য নক’। ছবিটির পরিচালক আসিফ ইসলাম। চলতি মাসেই এর শুটিং হয় গাজীপুরের একটি জমিদারবাড়িতে। সাবিলা বলেন, ‘আমি ছবিতে একটি ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছি। যদিও আমি বাস্তব জীবনে ভূত খুবই ভয় পাই।’ কিন্তু কাজটা করেছি। শুটিংয়ের সময় বেশ ভয় লেগেছিল। এর আগেও স্বল্পদৈঘর্্য চলচ্চিত্রে দেখা গেছে এই অভিনেত্রীকে। ‘সাতশো টাকা’ শিরোনামের সেই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন নুহাশ হুমায়ূন। এতে সাবিলার সহশিল্পী ছিলেন কণ্ঠশিল্পী প্রীতম। চলচ্চিত্রটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে আইফ্লিক্সে প্রকাশ হয়। বিজ্ঞাপন, নাটক, টেলিছবি, ওয়েব সিরিজ ও স্বল্পদৈঘর্র্্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও সাবিলার দেখা মেলেনি পূণৈর্দঘর্্য চলচ্চিত্রে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চলচ্চিত্রে কাজ করার আগ্রহ সবার থাকে। বড়পদার্য় অভিনয় করার আলাদা আনন্দ রয়েছে। কিন্তু আমি নাটক নিয়েই খুশি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছি। কিন্তু এখন চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই না। ভালো গল্প, চিত্রনাট্য, পরিচালক ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করার কথা ভাবব।’ এখন প্রায়ই অভিনয় শিল্পীরা দেশের বাইরে যান নাটকের শুটিং করতে। দিনকে দিন এর প্রবণতা বাড়ছে। বিষয়টি অনেকের কাছে আনন্দের হলেও এতে বাদ সাধেন সাবিলা। এটি একবারেই তার অপছন্দ। তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরে শুটিং করা কোনো নাটকে আমি কাজ করি না। অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু করিনি। দেশেই শুটিং করব, আবার দেশের বাইরেও? না, এই কাজ করব না। আমি মনে করি, শুধু ঘুরতেই দেশের বাইরে যাওয়া উচিত।’ চলমান সময়ের নাটক নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নাটকের মান কিন্তু খারাপ না। অনেক ভালো নাটক নিমার্ণ হচ্ছে। দশর্করাও তা দেখছে। হয়তো টিভি পদার্র সামনে বসে দেখা হচ্ছে না, কিন্তু ইউটিউবে দেখছে। প্রচুর কাজের মাঝে কিছু খারাপ তো থাকতেই পারে। তবে মানের ব্যাপারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। নাটকের বাজেট বাড়িয়ে টিভি চ্যানেলে তা স্বল্প বিরতিতে প্রচার করা দরকার।’ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়েব সিরিজ। অনেক নামিদামি অভিনয় শিল্পীরাও কাজ করছেন এই মাধ্যমে। সাবিলা নূরও কাজ করেছেন একটি ওয়েব সিরিজে। এটি পরিচালনা করেছন এহসান কবির। ওয়েব সিরিজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো সবাই ওয়েব সিরিজের দিকে ঝুঁকছেন। তা ছাড়া এখানে টেলিভিশনের মতো সেন্সরশিপ নেই। গল্পটাকে ঠিকঠাকভাবেই উপস্থাপন করা যায়।’ অভিনয়ের পাশাপাশি সাবিলা নূর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিির্ট-বাংলাদেশে ইংরেজি বিভাগে পড়াশোনা করছেন। চতুথর্ সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ করেছেন গেল বছরের শেষের দিকে। অভিনয়ে ব্যস্ততা বাড়তে থাকলেও পড়াশোনায় অমনোযোগী নন বলেই বিজয় দিবসের নাটকে তাকে খুব বেশি দেখা যায়নি। তবুও পরীক্ষার দুইদিন আগে শুটিং করেছেন। পড়াশোনা ও অভিনয় দুটো চালাতে গিয়ে অনেক কষ্টও করতে হয়। তিনি বলেন, ‘রোজ আমাকে ক্লাস করতে হয়। ৬টায় ঘুম থেকে উঠে ক্লাস থেকে সরাসরি শুটিংয়ে যাই। যেহেতু শুটিংয়ে যেতে দেরি হয়ে যায়; সেহেতু আগে ছাড়ার কথাও বলতে পারি না। পরের দিন কোনো পরীক্ষা থাকলেও শুটিং করতে হয়। আমার তরফ থেকে অনেক চেষ্টা থাকে। গাড়িতে যেতে যেতে মেকাপ করে নিতে হয়। এর জন্য অনেক সাক্রিফাইস করে নিতে হচ্ছে। অনেক ভালো কাজ আসেÑ সেগুলো পরীক্ষার কারণে করতে পারি না। আমি ব্যালেন্স করে দুটিই করতে পারছি।’ অভিনয় জগতে এসে অতীতের অনেকেই পড়ালেখায় ইতি টেনেছেন। অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু সাবিলা নূরের বেলায় দেখা যাচ্ছে ভিন্ন কিছু। অভিনয়ের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেও পেশা হিসেবে অভিনয়কে পছন্দ নয় তার। তিনি বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে খুব ইচ্ছা আছে শিক্ষক হওয়ার। শিক্ষাথীের্দর জীবনকে একজন শিক্ষক দারুণভাবে প্রভাবিত করতে পারেন। শিক্ষকরা আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। ওনাদের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই শিক্ষকতা করার ইচ্ছাটা জন্মেছে মনে। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা করলেও অভিনয় ছাড়ার ইচ্ছে নেই। অনেকেই তো অভিনয়ের পাশাপাশি পেশা হিসেবে অন্য কিছু করছেন। আমিও তাই করতে চাই। দুইটিই দুইটিকে সহায়তা করবে। আমার যত বেশি জ্ঞান থাকবে সেটা আমার জন্য ভালো। আমি শিক্ষক হলে অনেক কিছু শিখতে পারি যেগুলো আমার অভিনয়ে কাজে লাগাতে পারি।’