‘নায়িকা নয়, গায়িকা হতে চেয়েছিলাম’

বাংলাদেশে আধুনিক গানের জগতে উজ্জ্বল এক নাম অঁাখি আলমগীর। মঞ্চে যতক্ষণ থাকেন, গান দিয়ে মাতিয়ে রাখেন দশর্কদের । গানের পাশাপাশি রয়েছে তার সদা উজ্জ্বল, বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি টিভি, চলচ্চিত্র ও মঞ্চে গেয়ে চলেছেন ক্লান্তিহীন। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত ‘যোধপুর পাকর্ উৎসব’-এ সঙ্গীত পরিবেশন করে দেশে ফিরেছেন। গান নিয়ে তার ভাবনা, অনুভ‚তি, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ নানা বিষয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। লিখেছেন সালেহীন বাবু

প্রকাশ | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তারার মেলা : যোধপুর পাকর্ উৎসব দিয়েই শুরু করা যাক। সেখানকার গান গাওয়ার পরিবেশ এবং পরিবেশনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? অঁাখি আলমগীর : তার আগে আমি একটা তথ্য দিই। শুধু এবারই নয়, গত বছরও এ উৎসবে গান করেছিলাম। এখানকার শ্রোতাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এবার গান করতে যাওয়া। তবে উৎসবে এবারের শিল্পীদের তালিকা আরও সমৃদ্ধ ছিল। উৎসবে আশা ভেঁাসলে, শ্রেয়া ঘোষালের মতো শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। দেশের বাইরে কনসাটের্ গান গাইতে পারা সব সময় অনেক বেশি সম্মানের। কারণ সেখানে আমি আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। যোধপুরে গান গেয়ে শ্রোতাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। পাশাপাশি আমাকে তারা সংবধর্নাও দিয়েছে। তারার মেলা : ইদানীং স্টেজ শো নিয়ে আপনাকে বেশি ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে কেন? অঁাখি আলমগীর : আমি গত ২২ বছর ধরেই স্টেজে একই গতিতে পারফমর্ করছি। এখন হয়তো প্রচার মাধ্যম বেশি, তাই প্রকাশ পাচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ফেসবুক রয়েছে। এখন বিভিন্ন স্থানে স্টেজ শো করতে গেলে ফেসবুকে ছবি দিই। তাই মানুষও বেশি জানছে। তবে দীঘর্ সময় ধরে স্টেজে কাজ করে আমি দশর্ক- শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটা অমূল্য। এটা ভাগ্যবানদের ক্ষেত্রেই হয়। এভাবেই যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন স্টেজে গান করে যেতে চাই। তা ছাড়া বাজেট সংকটের কারণে টিভিতে আমাকে তেমন একটা দেখা যায় না। টিভিতে শুধু বিশেষ দিবসগুলোতে গানের জন্য শিল্পীদের ভালো সম্মানী দেয়া হয়। তাই বিশেষ দিবস ছাড়া টিভিতে গান করি না। তারার মেলা : চলতি বছরে ভক্তরা কি কি নতুন চমক পেতে পারে আপনার কাছ থেকে? অঁাখি আলমগীর :শ্রোতাদের জন্য নতুন কোনো নতুন চমক নতুন বছরে দশর্ক- শ্রোতাদের জন্য নতুন একটি গান করা শেষ। খুব শিগগিরই গানটি ধ্রæব মিউজিক স্টেশন থেকে প্রকাশ হবে। এ ছাড়া গত বছর আমার গাওয়া আসিফ আকবরের সঙ্গে ‘ওরে পাখি’, ‘টিপটিপ বৃষ্টি’, ‘মন বাক্স’ ও ‘দস্যি মেয়ে’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ ছাড়া সিনেমার গানে সব সময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছি। এগুলো চলতি বছরে প্রকাশ পাবে। তারার মেলা : সঙ্গীত জগতে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণ করতে বললে কিভাবে ব্যাখ্যা দেবেন? অঁাখি আলমগীর :গান গেয়ে মানুষের অনেক ভালোবাসা, সম্মান পেয়েছি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে? আমার অপ্রাপ্তির কিছু নেই। প্রথম যখন ছবিতে গান গাইব গাইব করছি তখন আমাদের বাসায় প্রায়ই ঘরোয়াভাবে গানের আসর বসত। সেখানে প্রায়ই সৈয়দ আবদুল হাদী আঙ্কেল, সুবীর নন্দী আঙ্কেলরা আসতেন। আমার মা গান লিখতেন। বাবাও ছিলেন গানপ্রিয় একজন মানুষ। একসঙ্গে বসে গান হতো। এমন এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে সুবীর আঙ্কেলকে বাবা বললেন, আমার মেয়ের গান শোনেন, যদি মনে হয় আমার মেয়ে গান গাইতে পারে, গান গাইবার যোগ্য মনে হয় তাহলে ওকে গান গাইতে দেব। যদি না হয় তাহলে দেব না। এখন তো স্কুলে পড়ে, কলেজে উঠলে গান গাইতে দেব। একটা পুরনো গান গেয়েছিলাম সেদিন। আমার গান শুনে সুবীর আঙ্কেল বাবাকে বললেন, আপনি কলেজ পযর্ন্ত অপেক্ষা করবেন? ততদিনে তো একটা ভালো শিল্পীকে দেশ হারাবে। সে সময় থেকেই বড় বড় শিল্পীর উৎসাহ পেয়েছিÑ যা আমার অনেক বড় পাওয়া। তাই প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সমীকরণটা নিয়ে এতটা ভাবি না। তারার মেলা : আপনার মা একজন খ্যাতিমান গীতিকবি। তার লেখা গানগুলো নিয়ে অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা আছে কি? অঁাখি আলমগীর : মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পীরা যারা মায়ের গানগুলো গেয়েছেন, তাদেও সেই হিট গানগুলো নিয়ে পূণার্ঙ্গ একটি অ্যালবাম বের করার পরিকল্পনা করছি। ব্যস্ততার মাঝে থেকে সময় বের করার চেষ্টা করছি। তারার মেলা : খ্যাতিমান অভিনেতা আলমগীরের কন্যা আপনি। মা খোশনূর একজন স্বনামখ্যাত গীতিকবি। এটা নিয়ে বাড়তি কোনো চাপ অনুভব করেছেন? অঁাখি আলমগীর : অবশ্যই বাড়তি একটা চাপ ছিল। এখনো এই চাপ থেকে বের হতে পারিনি। একটা বিষয় দেখবেন, অনেকে মনে করেন যারা বড় তারকার ছেলেমেয়ে তাদের জন্য তারকা হওয়া খুব সহজ। আলমগীরের মেয়ে হিসেবে মিডিয়ার মানুষ আমাকে সবাই চেনে। একবার হয়তো সেই পরিচয়ে সুযোগ দিলেন। বারবার কিন্তু সুযোগ দেবেন না। প্রতিনিয়ত তারকার বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের তুলনা করা হয়। এই তুলনা করাটা ঠিক নয়। কেননা, তারা হলেন লিজেন্ড। এখনো কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বাবা-মার পরামশর্ আগে নিই। তাদের সঙ্গে তুলনা চলে না, কিন্তু তুলনা চলে আসে। এটা আসবে বলেই বড় হয়ে কখনো ছবির নায়িকা হতে চাইনি। এই কারণে নিজের ক্ষেত্র নিজেই তৈরি করে নিয়েছি। আসলে সবদিক দিয়ে গানটাই আমার জন্য ভালো। এখন বুঝি গান বেছে নেয়াটাই আমার জন্য ইতিবাচক ছিল। তারার মেলা : এক সময় ৮-১০টি গান দিয়ে অ্যালবাম সাজানো হতো। কিন্তু আজকাল একটি গান দিয়েও অ্যালবাম বের করছেন কেউ কেউ। এসব নিয়ে আপনার মতামত যদি জানাতেন! অঁাখি আলমগীর : মিনি অ্যালবামের ব্যাপারটা সময়ের প্রয়োজনেই চলে এসেছে। শ্রোতাদের কথা বিবেচনা করলে ব্যাপারটা অবশ্যই ভালো নয়। কারণ অ্যালবামে প্রিয় শিল্পীর যত বেশি গান থাকে শ্রোতারা ততই খুশি হয়। বেশি গানের মধ্য থেকে পছন্দের গানটি যেমন খুঁজে নিতে পারে, তেমনি বিভিন্ন রকমের গান শোনারও সুযোগ পায়। তারার মেলা : মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এখনকার অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে আপনার দৃষ্টিতে? অঁাখি আলমগীর : আমি বলব, মিউজিক ইন্ড্রাস্টি মোটামুটি ভালো অবস্থানেই আছে। এখন অনেক কোম্পানি নতুন গান প্রকাশে এগিয়ে আসছে। আবার অনেকেই নিজের গান প্রকাশ করছেন। অ্যালবামের সেই যুগ নেই, এটা ঠিক। তবে সময়ের সঙ্গেই তো চলতে হবে। তাই সিঙ্গেল গানের প্রকাশটাও মেনে নিতে হবে। এখন অবশ্য বেশিরভাগ গান মিউজিক ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হয়। ইউটিউবের কথা মাথায় রেখে সবাই এ পথ বেছে নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে অনেকের অভিযোগ থাকলেও আমি দোষের কিছু দেখি না। ডিজিটালি গান প্রকাশে অভ্যস্ত হলে ইন্ডাস্ট্রি আরও ভালোর দিকে যাবে। তারার মেলা : আপনার নিজের কাছে এখনকার গান কেমন লাগে? অঁাখি আলমগীর : তরুণরা এখন অনেক ভালো করছে। অনেক ভালো ভালো শিল্পী দেখছি। আমি মনে করি, মেধাবীদের সুযোগ তৈরি করার দায়িত্ব সবার। তবে অন্যের গান গাওয়ার চেয়ে নিজের মৌলিক গানের ওপর জোর দিতে হবে বেশি। একজন শিল্পীর বড় অজর্ন হচ্ছে তার মৌলিক গান। কারণ মৌলিক গান শিল্পীর নিজস্বতা বহন করে। তারার মেলা : এবার একটু ব্যক্তিগত বিষয়ে আসি। আপনি তো অনেকের প্রিয় শিল্পী। কিন্তু আপনার প্রিয় শিল্পী কারা? অঁাখি আলমগীর : ভারতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকর আমার প্রিয় একজন শিল্পী। এ ছাড়া এই তালিকায় আছেন সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, শাহনাজ রহমতুল্লাহ, সুবীর নন্দী, আবদুল হাদীসহ আরো অনেক শিল্পী। তারার মেলা : আপনি গান দিয়ে সবাইকে বিনোদন দেন। আপনি কিনে বিনোদন পান? অঁাখি আলমগীর : আমার বিনোদনও গান। এ ছাড়া আমার বিনোদন আমার পরিবার, সন্তান। তাদের নিয়ে সময় কাটানো, ঘুরে বেড়ানো। আমরা শিল্পী তার থেকেও বড় পরিচয় আমরা মানুষ। সেই পরিচয়ে আমি কারো মা, কারো মেয়ে। এসব জায়গা থেকে আমার দায়িত্ব পালন করা।