চৌকস অভিনেতা ইরেশ

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
ছোট ও বড়পর্দা- দুটি মাধ্যমেই সুনাম কুড়ানো অভিনেতা ইরেশ যাকের। যতই দিন গড়াচ্ছে, ততই অভিনেতা হিসেবে আরও বেশি ক্ষুরধার, আরও বেশি চৌকস হয়ে উঠছেন বরেণ্য তারকাদম্পতি আলী যাকের ও সারা যাকেরের পুত্র। নাটক কিংবা সিনেমা যখন যেখানে যে চরিত্রেই অভিনয় করছেন তা যুৎসইভাবেই ফুটিয়ে তুলছেন ইরেশ। বৈচিত্র্যপূর্ণ অভিনয় গুণে মুগ্ধতা কাড়ছেন দর্শকদের। এখনো অভিনয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে তালিম নেন নাট্যকার আজাদ আবুল কালাম এবং নায়লা আজাদ নূপুরের কাছে। এছাড়া অন্য কেউ অভিনয়ে একটু খুঁত ধরিয়ে দিলেও সেটা সহাস্য মুখে আমলে নিয়ে নতুন করে শুরু করেন। ২০১৫ সালে 'ছুঁয়ে দিলে মন' সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ খলচরিত্র অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই ক্যারিশম্যাটিক অভিনেতা যথেষ্ঠ চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কেন কম অভিনয় করেন যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তাকে অনেক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এশিয়াটিকের ব্যবসা, পরিবারকে সময় দেওয়াসহ টুকটাক লেখালেখি করেন বলে তখন তার আর আট/দশজনের মতো অভিনয়ে পুরো সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে যা-ই করেন বেছে বেছে পছন্দের চরিত্রেই অভিনয় করেন। সম্প্রতি শেষ করেছেন 'কাজল রেখা' সিনেমার কাজ। যেটা এখন পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ চলছে। প্রায় ৫০০ বছর আগের কাহিনীর এই ছবিটিতে তিনি নাম চরিত্র 'কাজল রেখা' তথা মন্দিরা চক্রবর্তীর বাবা ধনেশ্বর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিটি এখন সামনের রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন ইরেশ। ছবিটিতে তাকে একেবারে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা যাবে বলেও জানান তিনি। অথচ খলচরিত্রে বেশ ভালোই প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন এই অভিনেতা। অনেকেই বর্তমানে খল সংকটে তাকে বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে ইরেশ যাকের বলেন, 'সর্বশেষ কয়েকটি সিনেমা, ওয়েবসিরিজের যেসব চরিত্রে অভিনয় করলাম, সেখানে তো ওই অর্থে আমি খল চরিত্রে অভিনয় করিনি। কোনো চরিত্র যদি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তখনই সেটাতে আমি অভিনয় করি। ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক- সেটা আমার কাছে বিবেচ্য নয়। সেটা খলই হোক আর যা-ই হোক। বড় কথা হচ্ছে, চরিত্রটি চরিত্র হিসেবে আমার পছন্দ হতে হবে।' তবে কি খলনায়ক হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না? এমন প্রশ্নে তিনি সরাসরিই বলেন- 'না, আমি একজন চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই অভিনয় করতে চাই। বিশেষ কোনো চরিত্রে বা খলচরিত্রে নিজেকে সীমাবদ্ধ করতে চাই না। কোনো চরিত্র আমার কাছে চিত্তাকর্ষক মনে হলেই তাতে অভিনয় করি। পজেটিভ নাকি নেগেটিভ আমার কাছে সেটা কোনো বিষয়ই নয়।' সেজন্য তো একজন নির্মাতার কোয়ালিটিও গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে তিনি চরিত্র তথা গল্প নাকি নির্মাতাকে গুরুত্ব দেন? এমন প্রশ্নে ইরেশ বলেন, 'দেখেন, বাংলাদেশে ভালো নির্মাতা এমনিতেই হাতেগোনা। সেরকম পারফেক্ট ভালো নির্মাতা বাছতে গেলে আমাদের জন্য অভিনয় করাই কঠিন হয়ে পড়বে। তবে আমার কাছে প্রথম প্রায়োরিটি গল্পই। নির্মাতার গুরুত্ব অবশ্যই আছে। কারণ, দেখা গেছে, গল্প ভালো হলেও নির্মাতার যে শ্রম, পস্ন্যানিং, পরিকল্পনা ও অনুশীলন লাগে সেটা অনেকের থাকে না। গল্প যতই ভালো হোক যদি বুঝি নির্মাতার ওই স্কিলটা নেই তখন আমার জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন হবে- আমি যে শ্রমটা দেব সে নির্মাতা আমার শ্রমটা নিয়ে ঠিকমতো কিছু করতে পারবে। কারণ, সিনেমা মানেই কম্বিনেশন। ভালো গল্প ও ভালো নির্মাতা দুটোরই ভালো কম্বিনেশন থাকা উচিত। দেখা গেছে, এই স্কিলের অভাবে ভালো গল্পও অনেকের সিনেমায় ভালোভাবে ফুটে ওঠেনি।' অনেকেই তো বলেন ভালো গল্পের অভাবে ভালো সিনেমা হচ্ছে না? তখন যেন এ অভিনেতা একটু দ্বিধায় পড়ে যান। বলেন, 'আমার মনে হয় দুটোই।' পরক্ষণেই সেটা সামলে বলেন, 'আর কে বলেছে, আমাদের ভালো গল্প নেই? আমাদের আশপাশে অনেক ভালো গল্প আছে। অনেক ভালো সাহিত্যিক আছেন। যাদের লেখায় অনেক ভালো ও বিশ্বমানের সিনেমা হতে পারে। কিন্তু সে জন্য যে শ্রম ও মেধার কম্বিনেশন থাকা উচিত সেটা আমাদের নির্মাতাদের অনেকেরই নেই। এখানে প্রথম সমস্যাটিই হচ্ছে আমরা প্রিপ্রোডাকশনে মনোযোগ কম দেই। সিনেমা নির্মাণে আমরা পোস্টপ্রোডাকশনে যে মনোযোগটি দিই সেটা যদি প্রিপ্রোডাকশনে দিতাম তাহলে আমরা বোধ হয় আরো শক্তিশালী কাজ দিতে পারতাম।' হালে সরকারি অনুদানের সিনেমা 'কাজল রেখা'র কাজ শেষ করেছেন ইরেশ। এখন অনুদানের সিনেমা এবং তার বাইরের সিনেমা- এ দুটোর সম্পর্ককে কীভাবে দেখেন; এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সব সিনেমাকেই ব্যবসায়িকভাবে সফল করার চেষ্টা করা উচিত। কমার্শিয়ালি সাসটেইনবল না হলে কোনো ইন্ডাস্ট্রিই দাঁড়াতে পারে না। অবশ্য অনেক সময় এসব ক্ষেত্রে ইন্টারেস্টিং কাজের সুযোগ হয়। সেটা অবশ্য মনের খোরাকের জন্য। যেহেতু এ ধরনের সিনেমা অনেকেই দেখেন না আর সেটা আপনারাও ভালো করে জানেন। তাছাড়া এখন হলের যে অবস্থা তাতে হলেও আগের মতো বেশি দিন সিনেমা থাকে না। কাজেই সিনেমা নির্দিষ্ট দর্শকের জন্য না হয়ে সবার জন্যই বানানো উচিত। অনুদানের সিনেমা, অফট্র্যাকের সিনেমা- এভাবে কেন সিনেমাকে পার্থক্য করা হবে? সিনেমা তো বানাবে যেটা মানুষ দেখবে- সেভাবেই। আমার মনে হয়, আমাদের সিনেমাকে ওই রকম জায়গায় যেতে পারাই হবে মঙ্গলজনক।'