‘বড় নয়, ভালো অভিনেত্রী হয়ে থাকতে চাই’

ভালো এবং আলোচিত অভিনেত্রী হতে হলে যে সুন্দর কিংবা সুশ্রী হতে হয়Ñ এই ধারণা ভেঙে দিয়েছেন ফারজানা ছবি। পারিবারিক গÐিতে যিনি ‘ছবিমণি’ নামেই সুপরিচিত। সাত ভাইবোনের মাঝে সবার ছোট তিনি। বেড়ে উঠেছেন একটি সাংস্কৃতিক পরিমÐলের মাঝে। শুরুটা ছিল নাচ দিয়ে। টিভি পদার্য় আসেন আবদুল্লাহ আল মামুনের হাত ধরে। দীঘর্ সময় কেটে গেলেও অভিনয়ের নৈপুণ্যতায় এখনও কাজ করছেন টিভি নাটকে। বতর্মান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসুদুর রহমান

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তারার মেলা : দেখতে দেখতে প্রায় ২০ বছর হলো ক্যারিয়ারের। দীঘর্ এই পথ চলার পেছনে কোনটা বেশি গুরুত্বপূণর্ ছিল বলে মনে করেন আপনি? ফারজানা ছবি : একজন শিল্পীকে তার অভিনয় গুণে টিকে থাকতে হয়। এখানে কাজ ছাড়া কোনো প্রকার পলিটিক্স দিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। যখন কোনো একজন শিল্পী তার কাজ দিয়ে নিমার্তাদের আস্থা তৈরি করবেন তখন সবাই তাকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এ ছাড়া বৈচিত্র্যময় চরিত্র দিয়ে দশর্কদের মনে জায়গা করে নিতে হয়। তারার মেলা : আগের পরিবেশের সঙ্গে এখনকার নাটকের পরিবেশে কতটা পাথর্ক্য মনে হচ্ছে আপনার কাছে? ফারজানা ছবি : আমি অনেকের মতো গড়পড়তা মন্তব্য করতে চাই না যে, এ সময়ের নাটকগুলো মন্দ হচ্ছে। এক সময় শুধু বিটিভি ছিল। এখন চ্যানেল অনেক, প্রচুর নাটক প্রচার হচ্ছে। নাটকের পেছনে অসংখ্য লোক কাজ করছেন। অভিনয় কিংবা নিদের্শনাকে এখন পেশা হিসেবে নেয়ার সুযোগ হয়েছে। আর পেশাদারিত্বের জায়গায় ভালো-মন্দ থাকবেই। এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। ভালো চচার্র বিকাশ ঘটছে। এসব বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা সমভাবে করা দরকার বলে আমি মনে করি। তবে নাটকের ভালো গল্প ও ভালো বাজেটের প্রতি গুরুত্ব বাড়ানো দরকার। তারার মেলা : গত বছর আপনার ‘কানি মা’ শিরোনামের টেলিফিল্মে নাম ভ‚মিকায় অভিনয় করে বেশ সাড়া ফেলেছিলেন। এত সাড়া পড়ার বিশেষ কোনো কারণ ছিল? ফারজানা ছবি : হ্যঁা। আসলে বৈচিত্র্যময় চরিত্র ফুটিয়ে তোলা এবং এর গ্রহণযোগ্যতা একজন শিল্পীর জন্য বড় প্রাপ্তি। ‘কানি মা’ টেলিছবির আগে নারী প্রধান গল্পে এর আগেও আমি বেশ কয়েকবার অভিনয় করেছি। তবে ‘কানি মা’র কাজটি ছিল একেবারেই ভিন্ন এক গল্পের বিস্তার ও অভিনব গেটআপের। চরিত্রের প্রয়োজনে শুটিং চলাকালীন পুরোটা সময় আমাকে এক চোখ বন্ধ রেখে পাথরের চোখ লাগিয়ে শুটিং করতে হয়েছে। চোখটি তিনদিন বন্ধ রাখতে হয়েছিল। এই টেলিছবিতে আমার ২৫ থেকে ৮০ বছর বয়স পযর্ন্ত জীবনের বিভিন্ন পযার্য় উপস্থাপিত হয়েছে। আর এ সবকিছুই আমার অভিনয় জীবনে কঠিন এক নতুন সংযোজন। তারার মেলা : অনেকেই চলচ্চিত্রে ব্যস্ত হচ্ছেন। আপনাকে তেমন দেখা যায় না কেন? ফারজানা ছবি : প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয় করি হাসিনা বানু সোমা পরিচালিত ‘জীবনও মরণও সীমানা ছাড়ায়ে’। এরপর আরও কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছি। গত বছর মোহাম্মদ হোসেন জেমি পরিচালিত ‘নদী কাব্য’ নামে সরকারি অনুদানের একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এ ছাড়া এম সাখাওয়াত হোসেনের ‘জমিদার’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্রের কাজও করেছি। দুটি ছবিই মুক্তির অপেক্ষায়। ভালো গল্পের ভালো চরিত্র পেলে চলচ্চিত্রে কাজ করতে কোনো বাধা নেই। আর আমি এভাবেই আস্তে ধীরে কাজ করতে চাই। তারার মেলা : চলমান ওয়েব সিরিজ জোয়ারকে কিভাবে দেখছেন? ফারজানা ছবি : ভালো চোখেই দেখছি। এখানে নিমার্তারা নিজের মতো করে কাজ করতে পারছেন। যেসব নিমার্তারা তাদের নাটক চ্যানেলে প্রচারের সুযোগ পান না, তারা ওয়েব সিরিজে প্রচার করতে পারছেন। আবার অনেক পেশাদার নিমার্তা এখান এর প্রতি বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এটা মেধা বিকাশের একটি মাধ্যম বলে আমি মনে কির। এর মাধ্যমে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব। তবে এতে যেন কোনো ধরনের অসামাজিক, অশ্লীল কিছু প্রচার না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। যুগের পরিবতের্ন প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় এলেও এর সঠিক ব্যবহার আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারার মেলা : আপনার চলমান ব্যস্ততার কথা জানতে চাই- ফারজানা ছবি : ঘর সংসার আর অভিনয় নিয়েই সময় কাটছে। বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার চলতি ধারাবাহিক নাটকগুলোতে কাজ করছি। এর মধ্যে বাংলাভিশনে দীপনের পরিচালনায় ‘টক্কর’, আরটিভিতে ফরিদুল হাসানের ‘লাকি থাটির্ন’, মাছরাঙায় শাহাদাত হোসেন ভুবনের ‘ঢাকা মেট্রো’, এটিএন বাংলায় এস এম শাহীনের ‘সোনাভান’। আগামী ফেব্রæয়ারি মাস থেকে বাংলাভিশনে প্রচার শুরু হবে কাওসার আহমেদের পরিচালনায় নতুন ধারাবাহিক নাটক ‘বকুলপুর’। এ ছাড়া খÐ নাটকেও কাজ করছি। বিটিভির প্রযোজনায় এল রোমার পরিচালনায় ‘হাত চিঠি’ নামের একটি খÐ নাটকে কাজ করেছি। সাজু আহসানের পরিচালনায় ইউনিসেফের সচেতনমূলক ওয়েব সিরিজ ‘অন্ধকার থেকে আলোয়’ কাজ করেছি। তারার মেলা : সব শেষে আপনার শেষ ইচ্ছে কিংবা পরিকল্পনার কথা যদি বলতেন! ফারজানা ছবি : ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই পেয়েছি। তবে সব চেয়ে বড় পাওয়া মানুষের ভালোভাসা। দশের্কর ভালোবাসা নিয়ে জীবনের শেষ মুহূতর্ পযর্ন্ত অভিনয় করে যেতে চাই। সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চাই একজন অভিনয়শিল্পী হয়ে।