লাস্যময়ী ঈশানা

মৌনতা খান ঈশানা। চলমান সময়ের টিভি নাটকের ব্যস্ত ও আলোচিত মুখ। লাক্স তারকা হয়ে মিডিয়াতে তার আগমন। নাটক ছাড়াও মডেলিং ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেন তিনি। সম্প্রতি চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজেও কাজ শুরু করেছেন লাস্যময়ী এ অভিনেত্রী। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচও করেন তিনি। বতর্মান ব্যস্ততা ও সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি করেছেন

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
মৌনিতা খান ঈশানা
টিভি খুললেই দেখা মেলে তার। চোখে পড়ে তার সুন্দর ও সাবলীল অভিনয়। সুন্দর মানানসই ঢং আর কথা বলার নিজস্ব ভঙিমা দিয়ে ক্রমেই যেন দশের্কর মনে শক্ত একটা অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন ঈশানা। বতর্মানে ঈশানা এতই ব্যস্ত, যে নাটকগুলোতে কাজ করছেন, হাতের আঙুল গুণেও শেষ করতে পারছেন না সেগুলোর সঠিক হিসাব। সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে পঁাচ দিনে ৬ নাটকের কাজ শেষ করে ঢাকায় এসেছেন তিনি। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? আর এতে নাটকের মান ক্ষুণœœ হয়েছে কিনাÑ জানতে চাইলে ঈশানা বললেন, ‘সম্ভব হয়েছে ঠিকই, নাটকের মানেও কোনো ঘাটতি দেখা দেয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে এক দিনে একটি নাটক শেষ করার পক্ষে আমি নই। যদিও এই প্রজেক্ট করতে আমাদের কারও কষ্ট হয়নি। ভালো পরিচালক ছিল এবং নাটকের টিমটি যথেষ্ট ভালো ছিল। যার কারণে সমস্যা হয়নি। গল্প লোকেশন পরিকল্পনা সব কিছু সুন্দরভাবে গোছানো ছিল। যেহেতু সময় কম ছিল তাই আমি চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটি চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে। নিমার্তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন যার যার অবস্থানে থেকে। যে কারণে অল্প সময়ে এতগুলো নাটকে কাজ করা সম্ভব হয়েছে। আমি কাজ করে মুগ্ধ।’ গত বছর মীর সাব্বিরের পরিচালনায় ‘নোয়াশাল’, সৈয়দ শাকিলের ‘উল্টো স্রোত’, দেওয়ান নাজমুলের ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’, এফ জামান তাপসের ‘নিউটনের তৃতীয় সূত্র’ ধারাবাহিক নাটকগুলো দিয়ে তিনি গত বছর বেশ আলোচনায় ছিলেন। প্রতিটি নাটকে নিজেকে আবিষ্কার করেন ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে। চলতি বছরেও কাজ করছেন কয়েকটি ধারাবাহিকে, খÐ নাটক ও ওয়েব সিরিজে। এর মধ্যে ফেরদৌস হাসানের পরিচালনায় নাগরিক টিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘এক পা দুই পা’ ও দীপ্ত টিভির মেগা সিরিয়াল ‘খল নায়ক’ উল্লেখযোগ্য। জুনায়েদ হোসেন ও ওয়াহিদুজ্জামান সবুজের রচনায় এবং ফিরোজ কবীর ডলারের পরিচালনায় ‘খল নায়ক’ নাটকে তিনি অভিনয় করেছন মেঘ চরিত্রে। যে চরিত্রটি দশর্ক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছে। নাটকটি নিয়ে ঈশানা বলেন, ‘গল্প ও চরিত্র ভালো লাগার কারণেই ‘খল নায়ক’ নাটকে অভিনয় করা। নাটকের নিমার্ণ সময়োপযোগীÑ এমন কথাও শুনেছি অনেকের কাছে। ভালো লাগার আরেকটি কারণ এই নাটকের অনেক গুণী শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তাদের কাছে কিছু না কিছু শিখতেও পারছি। যা আগামীতে আমার ক্যারিয়ারে কাজে দেবে। নিমার্তা ফিরোজ কবীর ডলারের সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। সঙ্গত কারণেই তার সঙ্গে কাজের রসায়নটা ভালো।’ ধারাবাহিক ও খÐ নাটক দুটোতেই কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেও ঈশানা বছরের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন ধারাবাহিক নাটকেই । তবে ধারাবাহিক নাটক নিয়ে তার অভিযোগও আছে। এ সময়ের ধারাবাহিক নাটক নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের ধারাবাহিকে গল্পের সংকট রয়েছে। বেলায় কিছুদূর এগিয়ে গল্প ঝুলে যায়। গল্প আর সামনে টানে না। পাশের দেশের সিরিয়ালের প্রতি আমাদের দেশের দশের্কর দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। অথচ আমাদের এত শিল্পী-নিমার্তা থাকতেও দশর্কদের ভালো কিছু দিতে পারছি না। এটি আমাদের ব্যথর্তা। তবে এসবের পেছনে কিছু সমস্যাও রয়েছে। একদিকে আমাদের বাজেট সংকট। আরেক দিকে ভালো স্ক্রিপ্টের অভাব রয়েছে। তবে আমাদের অনেক মেধাবী স্ক্রিপ্ট রাইটার, নিমার্তা ও অভিনয়শিল্পী আছেন। বাজেটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তাদের কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। এসব সমাধানে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।’ অভিনয়ের ক্ষেত্রে গল্প ও চরিত্র পছন্দসই না হলে কাজ করেন না এ অভিনেত্রী। সব সময় একই ধরনের চরিত্রে অভিনয় না করে বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়কেই প্রাধান্য দেন তিনি। ঈশানা, ‘অভিনয়ের জন্য সবার আগে চাই ভালো গল্প। অবশ্যই তা মৌলিক গল্প হতে হবে। অভিনয়ে নিজেকে ভাঙা যাবেÑ এমনই চরিত্র গুরুত্ব দিয়ে দেখি। সত্যি বলতে, আমি চ্যালেঞ্জিং চরিত্র খুঁজি। গতানুগতিক চরিত্রের বাইরে কাজ করতে চাই। যে কাজটি দেখে দশর্ক আমাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করবে।’ বতর্মানে নাটকে শুটিংয়ের ক্ষেত্রে কম সময়ে বেশি কাজের প্রবণতা শুরু হয়েছে। গত ডিসেম্বরেও কক্সবাজারে পঁাচটি নাটকের শুটিং করেছেন ঈশানা। সম্প্রতি দেশের বাইরে কয়েকটি নাটকের শুটিং করে দেশে ফিরেছেন তিনি। কম সময়ে বেশি কাজ নিয়ে ঈশানা বলেন, ‘কম সময়ে বেশি কাজ হলে সেটা ভালো হয় না। ছয় দিনে পঁাচটি নাটকে শুটিং করেছি। প্রত্যেকটি নাটকেরই গল্প সুন্দর। তবে যেহেতু সময় কম ছিল তাই আমাকে অনেক চাপের মধ্য দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। যে কারণে অভিনয়ে পূণর্ মনোযোগ দেয়া কঠিন ছিল। কিন্তু তারপরও আমি চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটি চরিত্র যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে। নিমার্তারাও আমাকে সহযোগিতা করেছেন যার যার অবস্থান থেকে।’ নতুন বছরে এখনো বিজ্ঞাপনে কাজ না করলেও গত বছর কোহিনূর কেমিক্যাল লিমিটেড (তিব্বত) এর এ বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে ঈশানাকে। এতে তার সঙ্গে ছিলেন টিবি নাটকের গুণী অভিনেত্রী সাবেরি আলম। বিজ্ঞাপনটি নিমার্ণ করেছেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। এ ছাড়া গত বছরে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব সিনেমা ‘জনি পিটার’। আহমেদ জিহাদ পরিচালিত এই ওয়েব সিনেমাটি প্রচারের পর প্রশংসা পায় ঈশানার অভিনয়। গত সোম ও মঙ্গলবার ঈশানা অভিনয় করেন আলী সুজনের পরিচালনায় ‘মিড নাইট ক্লাব’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে। এতে তিনি অভিনয় করেছেন ক্লাবের নাচনেওয়ালীর চরিত্রে। জীবন সংগ্রামে যে নারী পরিবার চালাতে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন ভয়ঙ্কর অপরাধে। ঈশানা বলেন, ক্রাইমভিত্তিক ও ওয়েব সিরিজে আমার চরিত্রটি সত্যিই একটু চ্যালেঞ্জিং। এর আগে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করলেও ক্লাবের ড্যান্সার চরিত্রে প্রথম। এ জন্য নিজের আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।’ এর আগেও গোয়েন্দা ওয়েব সিরিজ ‘ডিটেকটিভ লাভলু মিয়া’র নতুন গল্প ‘সিরিয়াল কিলার’-এ কাজ করেছেন ঈশানা। সাকিব রায়হান পরিচালিত এ ওয়েব সিরিজটিতে তিনি অভিনয় করেছেন ডিবি পুলিশের চরিত্রে। এতে তার সহশিল্পী ছিলেন কল্যাণ কোরাইয়া। বতর্মান সময়ের ওয়েব সিরিজের জোয়ার নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মাধ্যম এখন চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবেই দেখিছি। এতে কাজের অনেক সুবিধা আছে। নিমার্তারা নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন। অনেক বড় বড় অভিনয় শিল্পীরাও এতে কাজ করছেন।’ ছোট পদার্র অনেক অভিনয় শিল্পীই চলচ্চিত্রে কাজের জন্য মুখিয়ে থাকেন। দীঘির্দন ধরে অভিনয়ের দ্যুতি ছড়ালেও চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি এই অভিনেত্রীকে। ছয়-সাত বছর আগে তন্ময় তানসেনের একটি ছবিতে কাজ করার কথা থাকলেও নানা কারণে ওই ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কী চলচ্চিত্রে দেখা মিলবে না অভিনেত্রী ঈশানার? এমন প্রশ্নে জবাবে নাটকের গøামার এ কন্যা হেসে জবাব দেন, ‘চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেই করা যায়। প্রস্তাব আসে, কিন্তু পছন্দসই চিত্রনাট্য ও চরিত্র পাচ্ছি না।। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে হয়তো চলচ্চিত্রে দেখা যাবে।’ শুধু অভিনয় নয়, নাচেও পারদশীর্ ঈশানা। নাগরিক টিভিতে সপ্তাহের প্রতি সোম, মঙ্গল, বুধ এবং বৃহস্পতিবার দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে ‘বাজলো ঝুমুর তারার নূপুর’ শিরোনামের একটি নাচের রিয়েলিটি শো প্রচার হয়। এতেও অংশ নিয়েছেন এ অভিনেত্রী। অনুষ্ঠানটি প্রচারে আসার পর থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান ইশানা। এই ধরনের অনুষ্ঠান আরো বেশি প্রয়োজন মন্তব্য করেন তিনি বলেন, ‘আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো ইচ্ছে করলেই গতানুগতিকের বাইরে এমন নতুন নতুন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে পারে। কারণ দশর্ক সব সময় নতুন কিছু দেখেতে চায়।’