বিজরী বরকতুল্লাহ অভিনয়ের ৩০ বছর

‘দেখতে দেখতে ৩০টি বছর কেটে গেছে। মনে হয়, এই তো সেদিন শুরু করলাম। মাঝে এতগুলো বছর গেল, টেরই পাইনি! ক্যারিয়ারে দশর্কদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের ভালোবাসার ডানায় ভর করেই এতটা সুখের পথ পাড়ি দিতে পেরেছি।’

প্রকাশ | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোটর্
বিজরী বরকতুল্লাহ
মেধা, পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে যে কোনো কাজ অজর্ন করা যায়। এ যোগ্যতাকে পুঁজি করে সুঅভিনয় দিয়ে ছোট পদার্য় হাতেগোনা কয়েকজন পৌঁছে গেছেন অন্যরকম উচ্চতায়। বিজরী বরকতুল্লাহ তাদেরই একজন। ঠিক ৩০ বছর আগে ‘সুখের ছাড়পত্র’ দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয় ক্যারিয়ার। ‘দেখতে দেখতে ৩০টি বছর কেটে গেছে। মনে হয়, এই তো সেদিন শুরু করলাম। মাঝে এতগুলো বছর গেল, টেরই পাইনি! ক্যারিয়ারে দশর্কদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের ভালোবাসার ডানায় ভর করেই এতটা সুখের পথ পাড়ি দিতে পেরেছি।’ এভাবেই বললেন বিজরী বরকতুল্লাহ। সংস্কৃতিমনা পরিবারে বিজরীর জন্ম। বাবা মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ নাট্য ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। মা জিনাত বরকতুল্লাহ দেশের নামি নৃত্যশিল্পী। ছোটবেলায় মায়ের কাছে তার নাচের হাতেখড়ি। আড়াই বছর বয়সে বিটিভিতে নাশিদ কামালের উপস্থাপনায় ‘মাকে নিয়ে’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুশিল্পী বিজরীর অভিষেক। নৃত্য চচার্র প্রতি বিজরী সব সময় গুরুত্ব দিলেও বাবার অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে আসেন। ১৯৮৮ সালে বিটিভির ‘সুখের ছাড়পত্র’ নাটকে বাবার প্রযোজনায় অভিনয় করেন। এক সময় অভিনয়ই হয়ে ওঠে তার নেশা ও পেশা। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ছিল বিজরীর ক্যারিয়ারের টানির্ং পয়েন্ট। নাটকের ‘ইরা’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই চরিত্রটি তাকে এনে দেয় বেশ পরিচিতি। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। একক, ধারাবাহিক, খÐ নাটকে অভিনয় করে তিনি দশর্কনন্দিত হয়েছেন। সাহিত্যনিভর্র কাজে তিনি দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানার পরিচয়। কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাসের উপন্যাসের নাটক ‘এখন তুমি কেমন আছো’, রবীন্দ্রগল্পের ‘শেষ পুরস্কার’সহ অনেক নাটক দিয়েই দশর্কদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। সম্প্রতি দুরন্ত টিভিতে বিজরী অভিনীত ধারাবাহিক নাটক ‘বাবা থাকে বাসায়’ ভালোই জনপ্রিয় হচ্ছে। এ নাটক নিয়ে বিজরী বলেন, ‘শিশুতোষ গল্প অবলম্বনে নাটকের কাহিনী সাজানো হয়েছে। গল্পের দুই চরিত্র ভাষা ও উদয়। প্রতিদিনই নিত্যনতুন সমস্যার মুখোমুখি হয় তারা। কারণ তাদের মা সারাদিন থাকেন অফিসে, আর বাবা বাসায়। নানা কারণে বাবা বাসার সব কাজ সামলে উঠতে হিমশিম খান। এরই মধ্যে বাচ্চাদের নানা ঝামেলা নিয়ে গল্পটি এগিয়ে যায়। পরিচালক গোলাম মুক্তাদির বেশ যতœ নিয়ে কাজটি করেছেন।’ ধারাবাহিক নাটকে তেমন একটা দেখা যায় না এ অভিনেত্রীকে। পারিবারিক ব্যস্ততা, ধারাবাহিক নাটকে কাজ করার লম্বা একটা সময় বাধ্যবাধকতার সামাল দিতে না পারার কারণে ধারাবাহিকে নিয়মিত হচ্ছেন না। বতর্মান নাটকের মান নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি। বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কি এখন নাটকের মান খুব একটা ভালো হচ্ছে না। কিন্তু নিমার্তাদের কিছুই করার নেই এখানে। মান ভালো করতে টিভি চ্যানেল কতৃর্পক্ষকে সচেতন হতে হবে। আমি মনে করি, এর মূল কারণ বাজেটের দৈন্যদশা। এই যে নাটকের প্রতি দশর্ক বিমুখতার দায়টা আসলে আমাদেরই। অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও টিভি চ্যানেল হতার্কতাের্দর। কারণ হলো, নাটক প্রচার ও নিমাের্ণ কোনো সুষ্ঠু নীতিমালা নেই। টিভি চ্যানেলের সংখ্যা বাড়লেও নাটকের মান কিন্তু কমছে। বিজ্ঞাপন আর নিম্নমানের নাটক দেখতে দশর্ক নিশ্চয় বাধ্য নয়। তবে সব নাটকই যে খারাপ হচ্ছে তা কিন্তু নয়। হাজারও নাটকের ভিড়ে অনেক ভালো নাটকও হচ্ছে। কিন্তু টিভিতে মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বিরতির কারণে দশর্করা টিভিতে দেখছেন না। আর আধুনিক দশর্করা এখন নাটক ও চলচ্চিত্র অনলাইনে দেখছেন।’ নাটকের পাশাপাশি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনেরও মডেল হয়েছেন। অমিতাভ রেজার ‘আয়নাবাজি’ ছবিতে তাকে দুটি দৃশ্যে দেখা গেছে। দুই বছর আগে ছবিটি অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিল। যদিও ক্যারিয়ারের শুরুতে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন বড় ক্যানভাসে কাজ করার ইচ্ছা না থাকায় সেভাবে অভিনয় করা হয়নি। চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে বিজরী বলেন, ‘অমিতাভ রেজা আমাদের পারিবারিক বন্ধু। তার পরিচালনায় আগেও কাজ করেছি। আয়নাবাজির গল্প আগে থেকেই জানতাম। পরিচালকের অনুরোধেই একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।’ অতিথি চরিত্রে বড় পদার্য় উপস্থিত হলেও চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বিজরী বলেন, ‘আমি অনেক চলচ্চিত্রে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু অভিনয় করিনি। আমার মনে হয়, আমাকে সবকিছু করতে হবে, এমন নয়। আবার আরেকটি বিষয়, চলচ্চিত্রটির গল্প, চরিত্র শুধুই বাংলাদেশের এবং কাজ করার পরিবেশটি আমার পরিচিত, আস্থারÑ এমন হলে সেখানেই কাজ করার আগ্রহ আছে। আমি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই, যার সবকিছুই এ দেশের।’ অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে ওঠার কারণে বতর্মানে নাচ থেকে খানিকটা দূরে রয়েছেন বিজরী। তিনি বলেন, ‘শিল্প চচার্র বিভিন্ন শাখার মধ্যে নৃত্যেই নিয়মিত চচার্ প্রয়োজন। কিন্তু অভিনয়ে ব্যস্ততার কারণে নাচে সময় দিতে পারছি না। তবুও পারফমির্ং আটের্ সব শাখা-প্রশাখার মধ্যে নৃত্যই আমার প্রিয়।’ বতর্মানে অভিনয় ও সংসার নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে বিজরীর। নিজেকে একজন সুখী ও পরিপূণর্ মানুষ ভাবেন তিনি। অভিনয়ের বিজরী অভিনয় নিয়েই থাকতে চান সবসময়।