সিনেমার ভিলেন দীপা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
ছিলেন বিমানবালা, এলেন শোবিজে। এরপর কেবলই সাফল্যের গল্প। 'কাকতাড়ুয়া' শিরোনামের টিভি ধারাবাহিক নাটক দিয়ে যাত্রা করা দীপা খন্দকার ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে কাজ করে আসছেন বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্রসহ শোবিজের সব শাখাতেই। নান্দনিক অভিনয় ও শৈল্পিক গুণের কারণে দর্শকের কাছে আজও সমানভাবে সমাদৃত এ শিল্পী। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে নাটক, বিজ্ঞাপন, টেলিছবিসহ সব অঙ্গনেই নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে হয়েছেন প্রশংসিত। একটা সময় বিটিভির সাপ্তাহিক নাটকের নিয়মিত শিল্পী ছিলেন তিনি। তবে ছোটপর্দার এই মিষ্টিমুখ শোবিজে এখন আর আগের মতো নিরবচ্ছিন্ন নন। কাজ করেন সংসারকে আগলে রেখে ধীরে সুস্থে। আসন্ন ঈদে দীপা খন্দকার অভিনীত 'রিভেঞ্জ' সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রোশান-বুবলী অভিনীত এই ছবিটিতে তিনি একেবারে ভিন্ন লুক এ পর্দায় আসছেন। এ বিষয়ে অভিনেত্রী দীপা খন্দকারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, 'ছবিটিতে তো আমি সেই কবে অভিনয় করেছি। তিন বছর ধরেই শুনে আসছি সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছি। শুনতে পাচ্ছি এবার ঈদে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। কিন্তু আমি এখনো নিশ্চিত নই- সিনেমাটি এবারও আদৌ মুক্তি পাবে কিনা এবং কেন এটা মুক্তি পাচ্ছে না এটাও আমি জানি না। সিনেমাটির নির্মাণের সঙ্গে যারা আছেন তারাই বলতে পারবেন সব।' ছবিটিতে দীপা খন্দকার ভিলেন চরিত্রের মধ্য দিয়ে পর্দায় আসছেন। সব সময় ইতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে আসা এমন একজন অভিনেত্রীর হঠাৎ এই চরিত্রের বাঁকবদলের কারণ কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ দেশের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এমন যে, একজন মেয়ে সমাজে 'ডমিনেট' করবে- এটা তারা পছন্দও করেন না এবং মেনেও নিতে চান না। তখন এ ধরনের চরিত্রে নারীদের চিরাচরিত নেগেটিভ রূপেই উপস্থাপন করা হয়। ফলে এমন অভিনয় রিচও হয় না। দর্শকের কাছেও জনপ্রিয় হয় না। তবে এ ধরনের চরিত্র যদি যথাযথভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে অবশ্যই নারী ভিলেনও জনপ্রিয় হবে।' চলচ্চিত্রে মিশা সওদাগরের সঙ্গে খল চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে 'ভিলেন চরিত্রে নারীর জনপ্রিয়তা' বিষয়ে বলতে গিয়ে আরো যোগ করেন- 'আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিটা এমন টাইপের যে, এই ইন্ডাস্ট্রিই ভিলেন ক্যারেক্টার হিসেবে নারীকে দাঁড়াতে দেয় না। নির্মাতারা তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যাতে চরিত্রটি না দাঁড়ায়। যাতে জনপ্রিয়তা না পায়। স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী চরিত্রটির উপস্থাপন করা হয় না। ভিলেন বলতে যেটা বুঝি, সেটাই দেখানো হয় না। শুধু পারিবারিক চরিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এখানে খল চরিত্রে নারীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটা আমাদের দেশেই দেখা যায়।' কিন্তু তারপরও কেন এই খলচরিত্রে আসলেন এমন প্রশ্নে দীপা বলেন, 'আসলে চরিত্রটি পছন্দ হওয়াতেই তাতে অভিনয় করেছি। বিষয়টা হচ্ছে, এতে আমার অভিনয়ের বড় সুযোগ থাকাতেই কাজটি করেছি। আমি তো এই বয়সে শুধু চেহারা দেখাতেই অভিনয় করব এমন তো নয়। আর আমার সেই সময়ও নেই।' দীপার কর্মজীবন শুরু বিমানবালা দিয়ে। এলেন টিভি নাটকে। এলেন, দেখলেন, জয় করলেন। আজও সমানতালে সব মাধ্যমেই সমান জনপ্রিতার সঙ্গে অভিনয় করে যাচ্ছেন। সংসারও চালিয়ে যাচ্ছেন মমত্বের সঙ্গে। ক্যারিয়ারের বেশ দেরিতেই আসেন চলচ্চিত্রে। ইতোমধ্যে চারটি সিনেমায় অভিনয় করে ফেলেছেন। তাতেই যেন নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এ অভিনেত্রীর। সত্যি কি চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হচ্ছেন? তিনি বলেন, 'যদি ভালো নির্মাতা, ভালো চরিত্র ও গল্প পাই তাহলে চলচ্চিত্রেও নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছে আছে। সেটা দুই বছর গ্যাপ দিয়ে হোক বা পাঁচ বছর গ্যাপ দিয়েই হোক। কারণ, আমার কাছে আমার পরিবারই প্রথম। পরিবারকে সময় দিয়ে যেটুকু সময় পাব সে সময়টিতেই অভিনয়ে থাকতে চাই।' তার মানে ঢাকাই চলচ্চিত্রে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে যে জায়গাটি প্রায় ফাঁকা আছে সে জায়গাটিতে দীপা খন্দকার সামনে একটা বড় সুফল বয়ে আনতে যাচ্ছেন। নিজের অভিনয়ের এই দীর্ঘ ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট- এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন- 'আমি আমার কাজে পুরোপুরি সন্তুষ্ট। চব্বিশ বছর আমার পরিবারকে সঙ্গে রেখেও অভিনয়টা চালিয়ে আসতে পারছি, দর্শক আমাকে ভালোবাসছে- নতুন কাজের প্রস্তাব আসছে- ভালো ক্যারেক্টার হলে পরিচালকরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করেন- সে হিসেবেও আমি আমার কাজে শতভাগ সন্তুষ্ট। কোনো অতৃপ্তি নেই আমার।'