আলোচনা সমালোচনায় কঙ্গনা

প্রকাশ | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
কঙ্গনা রানাউত
অনেকেই তাকে বলেন জেদি মেয়ে। কেউ কেউ আবার বলেন ঠোঁটকাটা, স্পষ্টভাষী। স্পষ্ট ও খোলামেলা কথার জন্য মাঝে মাঝেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। সম্প্রতি শাবানা আজমী ও জাভেদ আক্তারকে 'দেশদ্রোহী' অ্যাখ্যা দিয়ে নতুন করে সমালোচিত হন তিনি। এ নিয়ে শাবানাও পাল্টা ব্যাখ্যা দিয়েছেন ঠান্ডা মাথায়। স্পষ্ট কথা বলার জন্য সম্প্রতি আলিয়া ভাটের সঙ্গে তীব্র তর্কে জড়িয়ে যান এই অভিনেত্রী। যুক্তি, পাল্টা যুক্তির পর শেষমেশ কঙ্গনার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন আলিয়া ভাট। তারপরেও দমে নেই কঙ্গনা। একদিকে বেফাঁস মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দেন, অন্যদিকে অসাধারণ অভিনয় দিয়ে আলোচনা ও প্রশংসা কুড়ান বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। বলা যায়, হাত বাড়ালেই যেন সাফল্য ধরা দেয় তার ক্যারিয়ারে। কঙ্গনার প্রতিটি ছবিতেই আলাদা আলাদা গেটাপে দেখা যায় তাকে। অনেকটা গতানুগতিক ধারার বাইরের ছবি ও চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এই যেমন তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির কথাই ধরা যাক। গত ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে তার অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত 'মণিকর্নিকা : দ্য কুইন অব ঝাঁসি' ছবিটি। মুক্তির আগে কত জলঘোলাই না হয়েছে ছবিটি নিয়ে। থাক ওসব কথা। সব ঝক্কি-ঝামেলা পর ছবিটি মুক্তির পাওয়ার পর থেকেই তুমুল হইচই পড়ে যায় ছবিটি নিয়ে। মুক্তির প্রায় চার সপ্তাহ পার করল বলিউডে আর এরই ভেতর ছবিটি ১০০ কোটি রুপির রেকর্ড গড়ল। ছবিতে কঙ্গনার সাবলীল অভিনয়ে মুগ্ধ হননি এমন দর্শক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবেই পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও সততার গুণে বলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন গ্যাংস্টারখ্যাত এ অভিনেত্রী। হিমাচল প্রদেশের বিত্তশালী পরিবারের এ মেয়ে জেদের বশে খালি হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। অতপর বন্ধুদের সহযোগিতায় মডেলিং ও চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি আজ সফল অভিনেত্রী হিসেবে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। \হছোটবেলা থেকেই কঙ্গনার আত্মসম্মানবোধ একটু বেশি। তার শৈশব কেটেছে হিমাচল প্রদেশের সুরাজপুর গ্রামে। কঙ্গনার প্রপিতামহ সারজু সিং রানৌত ১৫ বছর মন্ত্রিত্ব করেছেন। তিনি ছোটবেলা থেকে প্রপিতামহের মতোই বহির্মুখী ছিলেন। নিজেকে বাইরের জগতে প্রকাশ করতে চাইতেন। তিনি বলেন, 'আমি অনেক প্রভাবশালী পরিবার থেকে এসেছি। আমার বাবা অমরদ্বিপ রানৌত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। তিনি চাইতেন আমি যেন বড় হয়ে ব্যবসার কাজে মনোযোগ দেই। কিন্তু অর্থ-সম্পত্তি, বিত্ত-বৈভবে আমার কখনো মন টানেনি। শৈশব থেকেই শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি আমার গভীর টান রয়েছে।' তিনি আরো বলেন, 'মাত্র ১৫ বছর বয়সে দিলিস্নতে গিয়ে পড়ার জেদ ধরি। কিন্তু দিলির কথা শুনে বাবা আমাকে মেরে শাসন করেন। তখন আমি বাবাকে বলেছিলাম, চড় মেরে কারো ইচ্ছে দমন করা যায় না। এ কথার পর বাবা আমাকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গেই আমি খালি হাতে ঘর ছেড়ে দিলিস্ন চলে আসি। প্রথম দিকে দিলিস্নতে কঙ্গনার জীবন খুবই কষ্টের মধ্যে কাটে। সেখানে তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু জাসপ্রিতের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারপর শুরু হয় থিয়েটার জীবন। আসমিতা থিয়েটারে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মডেলিং কাজ করার সুযোগ পান। এ ঘটনার কয়েক মাস পর তার বাবা ৫০ হাজার রুপি নিয়ে মেয়ের অভিমান ভাঙতে আসেন। কিন্তু কঙ্গনা তা নেননি। মডেলিংয়ে জনপ্রিয়তার সুবাদে তিনি ২০০৫ সালে 'গ্যাংস্টার' ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রথম ছবিতেই তিনি বাজিমাত করে দেন। ছবিতে সিমরান চরিত্রে অনাবদ্য অভিনয়ের সুবাদে তিনি ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারও জিতে নেন। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। এ প্রসঙ্গে কঙ্গনার বক্তব্য, বলিউডে নিজের জায়গা কওে নেয়াটা খুব সহজ নয়। এর জন্য তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক অপমানেরও মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। কিন্তু তাতে তিনি ভীত হননি। আবেদনময়ী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানৌত বিয়েতে বিশ্বাসী নন। তিনি মনে করেন, বিয়ের পর নারীরা শশুড় বাড়িতে অনেকটাই গৃহবন্দির মতো থাকেন। তা ছাড়া বিয়ে করলে নারী-পুরুষ উভয়েরই ব্যক্তি স্বাধীনতায় ব্যাঘাত ঘটে। সে কারণেই তিনি চিরকুমারী থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরো বলেন, 'আমি কখনো বিয়ে করব না। একজন বয়ফ্রেন্ডকে পুরোপুরিভাবে মানিয়ে চলা সম্ভব নয়। প্রতিদিনই নিজের জন্য অনেক কাজ থাকে। সে কারণে আমি ওই মানুষটির নির্দেশ মতো হুবহু চলতে পারব না। বিবাহিতরা নিজেদের দায়বদ্ধতায় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি সে ফাঁদে পা দিতে চাই না।'