ছোট পর্দার নতুন তারা তটিনী
টিভি পর্দার এই সময়ের সম্ভাবনাময় এক অভিনেত্রী তানজিম সাইয়ারা তটিনী। অনেকটা জমকালো আয়োজনেই অভিনয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই উজ্জ্বল মুখের। খুব সহজেই ভাগ্যলক্ষ্ণী ধরা দেয় তাকে। কম সময়ে অল্প কাজ দিয়ে পরিচিতি হয়ে ওঠা তটিনী অভিনয়ের নানা কৌশল আর রূপের ঝলকানিতে মুগ্ধ করেছেন দর্শকের মন। সময়ের আলোচিত নতুন এই অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন মাসুদুর রহমান
প্রকাশ | ২৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
নতুনরা সাধারণত প্রস্তাব পেলেও দাঁড়িয়ে যান ক্যামেরার সামনে। ভালো-মন্দের বাচ-বিচার না করেই অভিনয় করতে থাকেন একের পর এক নাটকে। তবে ব্যতিক্রম তটিনী। সময়ের সঙ্গে পালস্না দিয়ে চললেও কাজ করছেন বুঝেশুনে। এই ধীরস্থির সিদ্ধান্তের কারণেই তার অভিনীত নাটকগুলো সাড়া ফেলছে দর্শক মহলে। সম্প্রতি তার বেশ কিছু নাটক প্রশংসিত হয়েছে। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা যারা অভিনয় করি দিন শেষে আমরা এটাই চাই যে মানুষ আমাদের কাজগুলো পছন্দ করুক। আমি তো নাটকে একদম নতুন। অনেক অফার পেলেও আমি আসলে ভালো কাজ করতে চেয়েছি। অল্প সময়ে কম কাজে মানুষের ভালোবাসায় সত্যিই আমি খুব আনন্দিত।' বছরের অন্যান্য সময়ে এক-আধটু কাজ করলেও যে কোনো উৎসব-আয়োজনে টিভি পর্দায় সরব উপস্থিতি মেলে তটিনীর। তারই ধারাবাহিকতায় গেল কোরবানির ঈদে তার অভিনীত নাটকগুলো দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। রাগিব রাইহান পিয়ালের 'শেষ ঘুম', রুবেল হাসানের 'বহিরাগত', রুবেল আনুশের 'হঠাৎ বৃষ্টি' নাটকটি ছিল আলোচনায়। পথিক সাধনের 'প্রণয়', চাটগাইয়া ভাষায় নির্মিত 'হেডম' নাটকে একেবারে ভিন্নরূপে দেখা গেছে তাকে। এই নাটকগুলো করতে গিয়ে তাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। তটিনী বলেন, 'গত বছরের ঈদে ভিকি জাহেদ 'ভাইয়ার বাঁচিবার হলো তার সাধ' ও মিজানুর রহমান আরিয়ান ভাইয়ার 'সুহাসিনী' করার পর ব্রেক নিয়েছিলাম। এরপর প্রেশার কম নিয়েছি। কিন্তু যখন দেখলাম মানুষ আসলে চায় আমি আরও বেশি কাজ করি তখন এবারের কোরবানির ঈদে বেশকিছু কাজ করেছি। একটু কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি দর্শক যেন আমার থেকে ভালো কিছু নাটক পান। আমি চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব।' সময়ের আলোচিত নায়কদের নায়িকা হয়ে নিজেকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তটিনী। অপূর্ব, আফরান নিশো, নাঈম, জোভান, তৌসিফ মাহবুবসহ অনেকের বিপরীতে দেখা গেছে তটিনীকে। কার সঙ্গে অভিনয় করতে ভালো লাগে তা জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, 'সবার সঙ্গেই কাজ করতে আমার ভালো লাগে। আসলে নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রী তো ঠিক করে থাকেন পরিচালক। পরিচালকের নির্দেশনায় শিল্পীদের কাজ করতে হয়। আমার সৌভাগ্য যে টিভি নাটকের সময়ে আলোচিত প্রায় নায়কদের নায়িকা হয়ে অভিনয় করা হয়েছে।' পেশা তো দূরের কথা অভিনয়ে আসার কোনো স্বপ্নই ছিল না তটিনীর। হুট করেই অভিনয় ভুবনে তার আগমন। আর এসেই মাত করেছেন দর্শক, পরিচালক, প্রযোজক সবাইকে। তবে ক্যামেরার সামনে প্রথম আসেন বিজ্ঞাপন দিয়ে। বিজ্ঞাপনে কাজ করতে গিয়েই প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা হয় তটিনীর। একেবারে কমার্শিয়াল কাজের জন্য সেবারই প্রথম দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে। তা বছর চার আগের ঘটনা। বিজ্ঞাপনের মডেল হওয়ার পরপরই ডাক আসে নাটকের। নাটকে তার প্রথম অভিনয় মাহমুদুর রহমান হিমির ধারাবাহিক নাটক 'হাউজ নং ৬৯' দিয়ে। অভিনয়ের অনেক কিছুই মাহমুদুর রহমান হিমির কাছ থেকে শিখেছেন বলে তার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন। এর স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তটিনী। তিনি বলেন, 'হঠাৎ করেই আসলে শুরু। আমি ৩ বছর বিজ্ঞাপন কন্টিনিউ করেছি। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা কাজ করেছি। আমাদের ভার্সিটির একজন সিনিয়র আপু তখন আমাকে বলেছিলেন, একটি বিজ্ঞাপনে স্ক্রিনটেস্ট দেওয়ার জন্য। আমি আসলে কৌতূহল থেকে গিয়েছিলাম, যে প্রক্রিয়াটা কী। সাবরিনা আইরিন আপু ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির একটা বিজ্ঞাপন বানাচ্ছিলেন। ওটা দিতে গিয়ে আইরিন আপুর আমাকে খুব ভালো লাগে। পরে আপু আমাকে প্যারাসুটের জন্য স্ক্রিনটেস্ট দিতে বলেন। সৌভাগ্যবশত, প্রথমবারই আমার হয়ে যায়।' হুট করে অভিনয়ে এলেও নাটকে তার চাহিদা তৈরি হয়েছে। দর্শকদের সাড়া পাচ্ছেন। পরিচালকদের কাছে বেড়েছে তার গ্রহণযোগ্যতা। নতুন কাজের বেলায় নির্মাতারা এখন তটিনীকে নিয়ে ভাবেন। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে তিনিও হাজির হন লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে। উপভোগ করেন অভিনয়। এ নিয়ে তটিনী বলেন, 'কখনো ভাবিনি অভিনয় আমার ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে। এখন অভিনয় করছি। ভালোই লাগছে। আমি খুবই উপভোগ করছি। কাজ ছাড়া ভালো লাগে না। আমার কাছে মনে হয় কাজের মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভালো সময় যায়।' অভিনয় এখন নেশা ও পেশা হয়ে গেলেও তটিনীর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। সে রকম ইচ্ছার বীজ বুনেই জন্মস্থান বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। বরিশালেই শেষ করেছেন স্কুল ও কলেজের পড়াশোনা। মেডিকেলে চান্স পেলেও পড়া হয়নি। শেষমেশ ভর্তি হন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সময়ের আলোচিত এই অভিনেত্রী বলেন, 'আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সবই বরিশালে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি বরিশালে ছিলাম। এরপর ঢাকায় আসা মূলত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য। আমি নীলফামারী মেডিকেলে চান্সও পাই। ওই বছর ওটা নতুন মেডিকেল ছিল। অনেক কিছু চিন্তা করে আমি সেখানে যাইনি। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটিতে প্রথমে ফার্মেসি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছিলাম। পরে ডিপার্টমেন্ট শিফট করে বিবিএতে চলে আসি। অভিনয় ও পড়াশোনা দুটো একসঙ্গে চালানো অনেকটা কঠিন হলেও ততটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি তটিনীকে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক ও সহপাঠী-বন্ধুদের যথেষ্ট সহযোগিতা কাজে লাগিয়েছেন। তবে অভিনয়ে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পান পরিবারের কাছ থেকে। তিনি বলেন, 'বাবা-মা তো আছেই, বড় ভাইও খুব হেল্প করেন অভিনয় আর পড়াশোনা একসঙ্গে সামাল দিতে। বড় ভাইয়া খুব হেল্পফুল। আমাকে সবরকমের পরামর্শ আর সহযোগিতার জন্য ও আছে।' অভিনয়ে অনুপ্রেরণা নিয়ে তটিনী বলেন, আমার ভীষণ ভালোলাগে শ্রদ্ধেয় সুবর্ণা মোস্তফা ম্যাম, শমী কায়সার আপু ও নূসরাত ইমরোজ তিশা আপুর অভিনয়। তবে এটা ভীষণ সত্যি যে আমার মতো যারা নতুন তাদের কাছে ভীষণ অনুপ্রেরণার হলেন মেহজাবীন আপু। একই জনপ্রিয়তা নিয়ে দীর্ঘ একটা সময় ধরে একই অবস্থানে টিকে থাকা এবং তার ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে, অনুপ্রাণিত করে। নতুন হিসেবে আমি সবার ভালোবাসায় মুগ্ধ সত্যি, তবে আমি একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চাই। প্রত্যেক অভিনয়শিল্পীরই স্বপ্ন থাকে সিনেমায় কাজ করার। অনেকে অভিনয়ে পা রাখতে না রাখতেই রুপালি পর্দা নিয়ে ভাবেন। এ নিয়ে তটিনী বলেন, 'সত্যি বলতে, এখনই এত কিছু ভাবছি না। আসলে আমি তো এখনো নতুন। অভিনয়ের জায়গায় পরিপক্ব হতে চাই। কাজের সঙ্গে অনেস্ট থাকতে চাই।'