বহুমাত্রিক এস ডি রুবেল

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
বাংলা মেলোডি গানের শ্রোতাপ্রিয় শিল্পী এস ডি রুবেল। একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক, চলচ্চিত্র ও টিভি অনুষ্ঠান পরিচালক, অভিনেতা ও প্রযোজক। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। করেছেন শতাধিক চলচ্চিত্রের জন্য পেস্ন-ব্যাক। দেশের অন্যতম সুরেলা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রয়াত সুবীর নন্দীর পর অন্য কারো নাম এলে সেখানে অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারেন এস ডি রুবেল। 'অনেক বেদনা ভরা আমার এ জীবন', 'লাল বেনারসি জড়িয়ে তুমি যে', 'তোমার নীল নীল নীল চোখে', 'মন যেন মায়াবী পাখি', 'আজকের দিনটার কোনো নাম নেই'- গানের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। তবে অনেক দিন ধরে গান এখন তার কণ্ঠে আগের মতো প্রতিধ্বনিত হয় না। নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে যা কিছু গান প্রকাশ করেন সবই প্রায় নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলেই। একপর্যায়ে পেস্ন-ব্যাক করতে গিয়ে সিনেমার নায়কও বনে যান। পাশাপাশি আগে থেকেই টিভি নাটকেও অভিনয় করে আসছিলেন। মনতাজুর রহমান আকবরের নির্দেশনায় তৈরি 'এভাবেই ভালোবাসা হয়' নামের চলচ্চিত্র দিয়ে তার নায়ক হিসেবে অভিষেক হয়। ছবিটিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন শাবনূর। এরপর তিনি প্রথমবারের মতো সরকারি অনুদানের ওপর পরিচালনা করেন 'বৃদ্ধাশ্রম' সিনেমা। প্রথমে স্বপন চৌধুরী ছবিটির পরিচালনায় থাকলেও পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় ছবিটি পরিচালনার দায়িত্ব বর্তায় রুবেলের ওপর। ছবিটি বারবার মুক্তির কথা জানালেও শেষ পর্যন্ত ছবিটি মুক্তি দেওয়া সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, হল বুকিং নিয়ে সমস্যা হওয়া, পর্যাপ্ত প্রেক্ষাগৃহ না পাওয়ায় সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারছেন না। ছবিটিতে প্রবীর মিত্র তার সর্বশেষ সিনেমা হিসেবে অভিনয় করেছেন। ইয়ামিন হক ববি রুবেলের বিপরীতে নায়িকা হিসেবে আছেন। তবে এই সিনেমাটি এখনো পর্যন্ত মুক্তি দিতে না পারলেও প্রথমবারের মতো ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকারি অনুদান হিসেবে ৬০ লাখ টাকা পাচ্ছেন এস ডি রুবেল। এবারে তার সিনেমার নাম হতে যাচ্ছে 'নীল আকাশে পাখি উড়ে'। এস ডি রুবেল বাংলাদেশের প্রথম গায়ক যিনি গায়ক থেকে নায়ক হয়েছেন। এরপর হয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক। শুধু তাই নয়, তিনি নাটক, মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, ডকু ড্রামা পরিচালনা করেছেন এবং করেছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রযোজনা। নিজে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেরও কর্ণধার। অন্যদিকে, এস ডি রুবেল সরকারি দলের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটির সহসম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান রুবেল। ছাত্র জীবনে রুবেল চাঁদপুর সরকারি কলেজে অধ্যয়নকালে কলেজ ছাত্রলীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন। সর্বশেষ মুরাদ নূরের সুরে 'তোরে লইয়া যামু ঢাকা' নামের একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রুবেল। কামরুল নান্নুর কথায়, মুশফিক লিটুর সঙ্গীতায়োজনে গানটিতে ঢাকার শহরের ঐতিহ্যবাহী, দর্শনীয় স্থানগুলোর কথা উঠে এসেছে। এই মিউজিক ভিডিওটি এবারের ঈদুল আজহায় এস ডি রুবেল ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ পায়। রোমান্টিক গান হলেও কথ্য ভাষায় গাওয়া এই গান সম্পর্কে বলতে গিয়ে এস ডি রুবেল বলেন, 'আসলে প্রযুক্তির কারণে গানের পরিবেশটাই বদলে গেছে। এক সময়ের গান যেভাবে মানুষের হৃদয়ের ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করত সেই যুগ এখন আর নেই। মানুষ মিউজিক ভিডিওতেই মশগুল হয়ে আছে। আগে যেমন পরিকল্পনা করে গান করা হতো এখন সেরকম হয় না। তারপরও আমি বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই গান করি। যেমন 'তোরে লইয়া যামু ঢাকা' গানটিতে ঢাকা শহরের ঐতিহ্যবাহী জীবনেরই কথা বলা আছে।' তারপরেও কি বাংলা গান চিরচেনা পরিবেশের গন্ডি পেরোতে পেরেছে? এমন প্রশ্নে এস ডি রুবেল বলেন, 'সব গানই প্রথমত একটা গন্ডিতেই থাকে। এর মধ্যে থেকেই বৈচিত্র্য আসে। সেদিক থেকে বাংলা গানে কোনো ভেরিয়েশন আসেনি। শুধু ছাদছন্দ বা তালতরঙ্গে একটু পরিবর্তন আসতে পারে। এর ওপরই একেক সময় একেক ঝোঁক আসে। এর সঙ্গেই তাল মিলিয়ে গানের ছন্দগত অদল-বদল আনা হয়। তবে আমাদের গানে যে রকম মেলোডি থাকে এখনকার গানে সেটা আসে না। এ জন্য ভালো গীতিকারও হচ্ছে না। ভালো সংগীত পরিচালকও কম। তখন শিল্পীরা কী আর করবে। তবে আমার চেষ্টা আছে, ভালো কথা ও ভালো সুরে গান করার।' দেশের গানে একদিকে যেমন ভালো কথার সংকট চলছে- অন্যদিকে যারা সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আছেন তাদের বেশির ভাগেরই নিজস্বতা তৈরি হয়নি। যেজন্য এখান থেকে কাউকেই আর একজন আলতাফ মাহমুদ, আলাউদ্দিন আলী. আনোয়ার পারভেজ, আপেল মাহমুদ, ফজলে খুদা, সত্য সাহা, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, শেখ সাদী খান প্রমুখদের মতো সুরকার দেখাও যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় কি একজন কণ্ঠশিল্পী একক দায়িত্বে শ্রোতাকে কিছু দিতে পারেন? এমন কথায় এস ডি রুবেল তাই নিজেও বাস্তবতাটি স্বীকার করে বলেন, 'আসলে গীতিকার, সুরকাররাও এখন গানের ভেতরে খুব একটা প্রবেশ করতে পারেন না। ফলে প্রায় সব গানেই সুরের গভীরতা থাকে না। শ্রোতা কিন্তু সেই গানই বারবার শোনেন, যে গানে গভীরতা বেশি। এ কারণে প্রায় সব শিল্পীই এখনো পুরনো দিনের গান গায়। বেশির ভাগ মানুষ ইউটিউবে সেই গানগুলোই শোনে- যেগুলোতে সুরের গভীরতা বেশি। টিভি চ্যানেলগুলোও তাই পুরনো দিনের গানই প্রচার করে বেশি। নতুনদের খুব একটা নয়। তবে এখনকার গানের প্রকাশকরা মনে করেন মানুষ এলেবেলে গানই শুনতে চান। প্রকৃতপক্ষে তা নয়। তারা এসব এলেবেলে গান ছাড়ছেন বলেই শ্রোতারা বাধ্য হয়ে সময় কাটানোর জন্য শুনছেন। শুনছেন না তা কিন্তু নয়, বরং তারা এসব গান শুনতে গিয়ে স্কিপিং করে যাচ্ছেন। কোনো গানই অখন্ডভাবে মন দিয়ে শুনছেন না।'