মুখ থুবড়ে পড়ছে যৌথ প্রযোজনার ছবি

সেই সাদা কালোর যুগেও দাপট ছিল দু'বাংলায় যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের। ওই সময় ছবিগুলো ভালো ব্যবসা করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ কমে যেতে থাকে যৌথ মিশনে ছবি নির্মাণের সংখ্যা। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের বেশি সময়। হুট করেই ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া দু'বাংলার শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে শুরু করে যৌথ প্রযোজনার ছবি। এতেই আমুল পরিবর্তন আসে নুয়ে পড়া বাংলা সিনেমায়। একের পর এক হিট ও ব্যবসায় সফল সিনেমা আসে এই যৌথ প্রযোজনার হাত ধরেই। গতানুগতিক গল্পকে বাদ দিয়ে মৌলিক গল্প, উন্নত মানের টেকনলোজি আর সুন্দর সুন্দর লোকেশনে শুটিং করে অস্তিত্ব সংকটে পড়া দেশীয় সিনেমার মান রক্ষা হয়েছিল। এক হয়ে গিয়েছিল দুই বাংলার রুপালি পর্দার মুখগুলো। কাজের কাজটা হয়েছে এ বাংলার চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষদেরই। তারা গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে স্বাদ পেয়ে ভিন্ন কিছুর...

প্রকাশ | ১৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
সেই সাদা কালোর যুগেও দাপট ছিল দু'বাংলায় যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণের। ওই সময় ছবিগুলো ভালো ব্যবসা করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ কমে যেতে থাকে যৌথ মিশনে ছবি নির্মাণের সংখ্যা। এভাবে কেটে গেছে দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের বেশি সময়। হুট করেই ২০১২ সালে বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া দু'বাংলার শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিয়ে শুরু করে যৌথ প্রযোজনার ছবি। এতেই আমুল পরিবর্তন আসে নুয়ে পড়া বাংলা সিনেমায়। একের পর এক হিট ও ব্যবসায় সফল সিনেমা আসে এই যৌথ প্রযোজনার হাত ধরেই। গতানুগতিক গল্পকে বাদ দিয়ে মৌলিক গল্প, উন্নত মানের টেকনলোজি আর সুন্দর সুন্দর লোকেশনে শুটিং করে অস্তিত্ব সংকটে পড়া দেশীয় সিনেমার মান রক্ষা হয়েছিল। এক হয়ে গিয়েছিল দুই বাংলার রূপালী পর্দার মুখগুলো। কাজের কাজটা হয়েছে এ বাংলার চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষদেরই। তারা গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে স্বাদ পেয়ে ভিন্ন কিছুর। এখন আবার ফের মন্দা দেখা দিয়েছে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে। কয়েক বছরের দাপুটে ভাব এখন অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ার মতো। সর্বশেষ কোনো যৌথ প্রযোজনার ছবিই দেখেনি লাভের মুখ। গত সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছিল যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'প্রেম আমার টু'। এতে অভিনয় করেছিলেন বাংলাদেশের পূজা চেরী ও ভারতের অদ্রিত। উদিয়মান এই দু'শিল্পী দর্শকদের প্রত্যাশা মেটাতে না পারায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল বক্স অফিসে। এক কথায় ব্যবসায়িকভাবে ব্যর্থ। এমন দৃশ্য দেখে যৌথ প্রযোজনার ছবির ব্যর্থতা ষোলকলাপূর্ণ হলো বলে মন্তব্য করেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। গত বছর যৌথ প্রযোজনায় যে ছবিগুলো নির্মিত হয়েছিল তারও একই অবস্থা। অভিমনু্য মুখার্জি পরিচালিত 'নূর জাহান', গিয়াসউদ্দিন সেলিম পরিচালিত 'স্বপ্নজাল', জয়দীপ মুখার্জি পরিচালিত 'তুই শুধু আমার' এই তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছিল যৌথ প্রযোজনার মোড়কে। ছবিগুলোর একটিও দর্শকদের সিনেমা হলে টেনে আনতে পারেনি। যৌথ প্রযোজনায় শুরু হয়েও আমদানি ছবি হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর ফলাফলও অলাভজনক। ২০১৭ সালে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা সংশোধিত হওয়ার পর প্রযোজকরা যৌথ ছবিকে আমদানি ছবি হিসেবে চালিয়ে দেন। জিৎ অভিনীত 'সুলতান : দ্য সেভিয়ার', শাকিব খান অভিনীত 'চালবাজ' যৌথ ছবি হিসেবে শুরু হলেও আমদানি ছবি হিসেবে মুক্তি পায়। ছবিগুলোকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যাশার কতটুকুই বা পূরণ হয়েছে? অপরদিকে, বাংলাদেশের আরিফিন শুভ ও তিশা এবং কলকাতার বেশকিছু নামি-দামি শিল্পীকে নিয়ে তৈরি হওয়ার কথা ছিল 'বালিঘর'। কিন্তু নতুন নীতিমালা হওয়ার পর এ ছবিটিসহ আরো কিছু প্রজেক্ট পিছিয়ে গেছে। নীতিমালায় যৌথ প্রযোজনার ছবিতে দুদেশের শিল্পী, লোকেশন ইত্যাদি সমানুপাতিক হারে রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই নীতিমালা মেনে ছবি বানানো 'কঠিন' বলে প্রযোজকরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। তার বদলে উৎসাহিত হয়েছেন ভারতীয় বাংলা ছবি আমদানিতে। গত বছর শাকিব খান অভিনীত 'নাকাব', 'ভাইজান' ছবিগুলো আমদানি করে বড় সাফল্যের আশা করেছিলেন আমদানিকারকরা। তাদেরও হতাশ হতে হয়েছে। বড় বাজেটের ছবি হওয়ায় ছবি দুটির ব্যবসায় খুশি হতে পারেননি পরিবেশকরা। আমদানি ছবির ব্যবসায় কখনোই সন্তোষজনক ছিল না। যৌথ প্রযোজনার অতীত চিত্র আশাব্যঞ্জক হলেও সাম্প্রতিক চিত্র চরম হতাশাজনক। একদিকে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চাপে প্রযোজকরা মুষড়ে পড়েছেন। আরেক দিকে যৌথ প্রযোজনার ছবির ব্যবসা ক্রমশ নিম্নগামী। অথচ বছর দুয়েক আগেও যৌথ প্রযোজনায় বেশকিছু হিট-সুপারহিট ছবি এসেছে। শাকিব খান অভিনীত 'শিকারী', জিৎ অভিনীত 'বাদশা : দ্য ডন', মাহি অভিনীত 'রোমিও জুলিয়েট' ব্যবাসায় সফল ছবিগুলো প্রযোজকদের আগ্রহ বাড়িয়েছিল। একের পর এক যৌথ প্রযোজনায় ছবি নির্মাণের হিড়িক পড়েছিল। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্ক না করায় প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো। ২০১৭ সালে যৌথ প্রযোজনায় নিয়মভঙ্গের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিল চলচ্চিত্র পরিবার। সেই আন্দোলনের ফলে সংশোধন করা হয় যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা। তবে নতুন নীতিমালায় যৌথ ছবির প্রযোজকরা পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়েছেন। তারপরও যে দু'য়েকটি ছবি নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলোও দর্শকরা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ব্যবসায়িক মন্দা আর নিয়মনীতির যাঁতাকলে পড়ে যৌথ প্রযোজনার নাভিশ্বাস উঠে গেছে বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে যৌথ প্রযোজনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে করছেন তারা। যৌথ প্রযোজনার চিত্রনাট্য যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন বলেন, 'আমরা সবশেষ যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণের জন্য বালিঘর ছবির চিত্রনাট্য অনুমোদন দিয়েছি। এরপর গত চার মাসে নতুন কোনো চিত্রনাট্য জমা পড়েনি। যৌথ প্রযোজনায় সচরাচর যে প্রযোজক ও নির্মাতারা সিনেমা বানান তারা বলছেন, ২০১২ সালের নীতিমালা সংশোধন করে নতুন যে নীতিমালা করা হয়েছে তা মেনে যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা তৈরি করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তা আছেই। সব মিলে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রযোজকরা। তাদের কথা, সংশোধিত নীতিমালায় যে শর্ত দেয়া আছে, সেগুলো সিনেমা নির্মাণে তৈরি করেছে প্রতিবন্ধকতা। তা ছাড়া চিত্রনাট্য জমা দেয়ার পর মাসের পর মাস তা বিভিন্ন ধাপে আটকে থাকার কারণেও নিরুৎসাহিত হচ্ছেন প্রযোজকেরা। জাজ মাল্টিমিডিয়া ভারতের এসকে মুভিজ ও জিত্‌'স ফিল্ম ওয়ার্কসের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনায় শিকারি, নবাব, বাদশা, বস ২-এর মতো বেশ কিছু আলোচিত ছবি নির্মাণ করেছে। বর্তমান যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আর তাঁরাও যৌথ প্রযোজনায় কোনো ছবি নির্মাণ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু বেড়েছে একক প্রযোজনার ছবিতে লাভের অংশ। দুই বাংলার অভিনেত্রা অভিনেত্রীরাও একক প্রযোজনার অধীনেই কাজ করছে। ওপারের পরমব্রত আর শ্রাবন্তি বাংলাদেশর একক প্রযোজনার ছবিতে অভিনয়ে রীতি মত পর্দা কাঁপাচ্ছে। অন্যদিকে ওপার বাংলায় এ দেশের মিম, সোহানা সাবা, জয়া আহসান সঙ্গে সুপার স্টার শাকিব খান তো রেয়েছেই।