রুপালি পদার্য় মুখোমুখি দুই বাংলার তারারা

ভারতের প্রেক্ষাগৃহে ১৫ জুন প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন শাকিব খান ও জিৎ। মুক্তি পায় ‘ভাইজান এলো রে’ ও ‘সুলতান দ্য সেভিয়র’। দুই দেশের জনপ্রিয় তারকার ওই দুটি সিনেমা একই দিন মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে শাকিবের দ্বিগুণ প্রেক্ষাগৃহ পেয়েও সামান্য এগিয়েছিলেন জিৎ। দেখার পালা, বাংলাদেশে সেই হিসাব বদলে যায় কিনা!

প্রকাশ | ১৯ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

স্যাম অরন্যা
শাকিব খান
এবারের ঈদে কলকাতায় ‘ভাইজান এলো রে’ ও ‘সুলতান: দ্য সেভিয়র’ ছবি দুটি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশে তা প্রদশর্ন করা সম্ভব হয়নি। আইনের মারপ্যঁাচে আটকে যায় ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের ছবি ‘ভাইজান এলো রে’ ও টালিউড সুপারস্টার ‘সুলতান : দ্য সেভিয়র’ ছবিটি। সব বাধা পেরিয়ে আসছে দুই দেশের সুপারস্টারের অভিনীত জনপ্রিয় ছবি দুটি সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে প্রদশের্নর জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে প্রদির্শত হতে যাচ্ছে। ভারতের প্রেক্ষাগৃহে ১৫ জুন প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হন শাকিব খান ও জিৎ। মুক্তি পায় ‘ভাইজান এলো রে’ ও ‘সুলতান দ্য সেভিয়র’। দুই দেশের জনপ্রিয় তারকার ওই দুটি সিনেমা একই দিন মুক্তি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গে শাকিবের দ্বিগুণ প্রেক্ষাগৃহ পেয়েও সামান্য এগিয়েছিলেন জিৎ। দেখার পালা, বাংলাদেশে সেই হিসাব বদলে যায় কিনা! জানা গেছে, ভারতীয় লগ্নির ‘ভাইজান এলো রে’ ও ‘সুলতান দ্য সেভিয়র’ সাফটা বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে ২০ জুলাই বাংলাদেশে মুক্তি দেওয়া হবে। ‘ভাইজান এলো রে’ আমদানি করছে এন ইউ আহমেদ ট্রেডাসর্ ও ‘সুলতান’ আনছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। দুটি সিনেমা দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে বলে জানা গেছে। জয়দীপ মুখাজির্ পরিচালিত ‘ভাইজান এলো রে’ ছবিতে শাকিব খান ছাড়াও অভিনয় করেছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, শান্তিলাল, রজতাভ দত্ত, দীপা খন্দকার, মনিরা মিঠু ও শাহেদ আলী। অন্যদিকে রাজা চন্দ পরিচালিত ‘সুলতান’-এ আরও অভিনয় করেছেন বিদ্যা সিনহা মিম, আমান রেজা, প্রিয়াংকা সরকার ও তাসকিন রহমান। ভারতীয় ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, ‘আমি একজন অভিনয়শিল্পী। পরিবার-পরিজন সবার কাছ থেকে দূরে থেকে দেড় যুগ ধরে এই অভিনয়টাই করে যাওয়ার চেষ্টা করছি। আমি খালি হাতে ফিরিনি। দেশের মানুষ আমাকে মন খুলে ভালোবাসা দিয়েছে।’ দুই বছর ধরে দেশের বাইরেও কাজ করছেন শাকিব খান। প্রথম ছবি ‘শিকারি’ দিয়ে বাংলাদেশ আর ভারতের কলকাতায় বাজিমাত করেন। এরপর মুক্তি পেয়েছে ‘নবাব’ ও ‘চালবাজ’ ছবি দুটি। এ প্রসঙ্গে শাকিব বলেন, ‘দেশের মানুষের ভালোবাসা আর দোয়ায় এখন আমি দেশের বাইরে এসেও কাজ করছি। চেষ্টা করছি, দেশের সম্মান যাতে বাড়ে, তেমন কাজ করার। এখানকার অনেকেই আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে অনেক গবর্ করে। শুরুর দিকে আমি একা কাজ শুরু করলেও এখন আমারই অনেক ছবিতে আমাদের দেশের আরও অনেক গুণী অভিনয়শিল্পীরাও কাজ করছেন। একজন চলচ্চিত্রকমীর্ হিসেবে এটাই আমার প্রাপ্তি। সব সময় চেষ্টা করব, আমার দেশ যেন আমার কাজের মধ্য দিয়ে আরও মাথা উঁচু করে দঁাড়ায়।’ ঈদ উপলক্ষে ভারতের কলকাতার ৮০ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ভাইজান এলো রে’। ছবিটি মুক্তির আগে শাকিবের পোস্টারে ছেয়ে যায় পুরো কলকাতা ও এর আশপাশ। এবারের ঈদে শাকিব খানকে পাল্লা দিতে হয় বলিউডের সামলান খানের ‘রেস ৩’ আর টলিগঞ্জের জিতের ‘সুলতান-দ্য স্যাভিয়ার’ ছবির সঙ্গে। ব্যবসায়িকভাবে সালমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও জিতের সঙ্গে শাকিবের লড়াইটা যে বেশ জমে ওঠেছিল বলে জানায় কলকাতার চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট অনেকেই। এদিকে, সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে ‘সুলতান: দ্য সেভিয়র’ ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন জিৎ। ছবিতে সুলতান ভাই হিসেবে দেখা যাবে জিৎকে। ভাইগিরি করেই সুলতানের দিন চলে। কিন্তু তার ভিতরের মানুষটা সহজ-সরল। রিয়াকে (প্রিয়াংকা সরকার) সে নিজের বোনের মতো ভালবাসে। নারীপাচার চক্রের কবলে পড়ে রিয়া। যার নাম পান্ডা সরকার (মুকুল দেব)। এই সরকার গ্যাংয়ের কবল থেকেই রিয়াকে উদ্ধার করে আনে সুলতান। ছবিতে জিতের বিপরীতে রয়েছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা সাহা মিম। শেষবার বিদ্যাকে দেখা গিয়েছিল সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘ইয়েতি অভিযান’-এ। এবার আইনজীবী হিসেবে ‘সুলতান দ্য সেভিয়র’-এ রয়েছেন তিনি। তামিল ছবি ‘ভেদলম’-এর রিমেক হিসেবে এ ছবি তৈরি করেছেন পরিচালক রাজা চন্দ। সেখানে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দক্ষিণী সুপারস্টার অজিৎ। তাঁর বিপরীতে ছিলেন শ্রুতি হাসান। আর অজিতের বোনের চরিত্রে দেখা গিয়েছিল লক্ষ্মী মেননকে। দাক্ষিণাত্যে সাড়া ফেলেছিল ছবিটি। হয়েছিল বøকবাস্টার। এবার ‘সুলতান দ্য সেভিয়র’-এর পালা। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ছবির গান। স্যাভির সুর বেশ পছন্দ হয়েছে দশর্কদের। সম্প্রতি কলকাতার আনন্দবাজার দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘সুলতান: দ্য সেভিয়র’-এ দ্বৈত চরিত্রের বিষয়ে জিৎ বলেন, চরিত্রটায় অনেক স্তর আছে। একটা জিৎ ভালো। রাজা দত্ত নাম তার। ট্যাক্সি ড্রাইভার। আর একটা জিৎ পুরোদস্তুর মাতাল। টাকা ছাড়া সে কিছু বোঝে না। এই দুটো চরিত্রের মধ্যে একটা যোগসূত্র আছে। সেটাই তো ছবির গল্পের রহস্য । প্রিয়ংকা ও মিম প্রসঙ্গে জিৎ বলেন, দু’জনেই ভাল অভিনেত্রী। প্রিয়াংকার সঙ্গে এর আগে ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’-এ কাজ করেছি। বেশ শক্তিশালী অভিনেত্রী। ‘সুলতান’-এ ওর চরিত্রটা পড়েই মনে হয়েছিল এটা প্রিয়ংকা পারবে। মিমের সঙ্গে এটা আমার প্রথম ছবি। ও যথেষ্ট ভালো অভিনেত্রী। বাংলাদেশে তো বেশ জনপ্রিয়। মিম এক কথায় মিষ্টি মেয়ে।’ ‘সুলতান: দ্য সেভিয়র’ ছবি সম্পকের্ মিম বলেন, ‘সুলতান: দ্য সেভিয়র’ ছবি দারুন একটা গল্প আছে। এর নিমার্ণশৈলীও চমৎকার। জিতের সঙ্গে করা এই ছবিটিতে দুই বাংলার তারকারাই অভিনয় করেছেন। কলকাতায় ছবিটি প্রশংসিত হয়েছে। দেশের হলে আসলে ছবিটি দশর্ক উপভোগ করবেন বলে মনে হয় আমার। এই ছবির জন্য আমার খুব প্রিয় মানুষ তৌকীর আহমেদ ভাইয়ের ‘ফাগুন হাওয়া’ ছবিটিতে শিডিউল দিতে পারিনি।’ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়ে মিম বলেন, ‘দেখুন এটা হতাশার যে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে করে যৌথ প্রযোজনার ছবির ক্ষেত্রে তারকাদের অনীহা তৈরি হচ্ছে। এদেশের অল্প ক’জন শিল্পীদেরকেই কলকাতা থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু ছবি নিমাের্ণর পর সেগুলো যদি বাংলাদেশে মুক্তি না দেয়া যায় তবে কলকাতার প্রযোজকরা হতাশ হয়ে আর যৌথ প্রযোজনার ছবিতে লগ্নি করবে না। কোটি কোটি টাকা তারা ঢালছেন। হতাশ হলে, ক্ষতিগ্রস্থ হলে তো আগ্রহ দেখাবেন না। এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রিতে ছবি নেই, ব্যবসা নেই। সেক্ষেত্রে যৌথ প্রযোজনার ছবিও এভাবে আটকে থাকলে সমস্যা আরও বাড়বে। বিকল্প এবং সময়োপযোগী কিছু ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।’ বলা হচ্ছে অনিয়মের কারণেই আটকে থাকছে যৌথ প্রযোজনার ছবিগুলো। একই অভিযোগ উঠেছে ‘সুলতান’র বেলাতেও। অনুমতি না পেয়েই ছবিটি নিমার্ণ করা হয়েছে এবং মুক্তির চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে মিম বলেন, ‘নিয়ম ভাঙা সবসময়ই অন্যায়। আমি বা আমরা শিল্পী। কাজ করতে চাই। বিদেশের মাটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাচ্ছি, সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে চাই। শিল্পী হিসেবে নিজের কাজ প্রসঙ্গে যা নিয়ম তা মেনে চলার চেষ্টা করি আমি। আমি শিল্পী হিসেবে প্রত্যাশা করি যৌথ প্রযোজনা হবে সংশ্লিষ্ট সকল দেশের জন্য ইতিবাচক এবং লাভজনক। তাহলেই কোনো ঝামেলা থাকবে না।’ নতুন কী খবর আছে বলুন- এম কথা শুনেই মুচকি হাসলেন মিম। বললেন, ‘ইন্ডাস্ট্রিতেই তো নতুন খবর নেই। ছবি নেই, খবরও নেই। সবাই বিকল্প কিছু ভাবছে মনে হয়। কিন্তু যারা সিনেমাকেই জীবনের ব্রত করে নিয়েছি তারা কী করবো?’ উল্লেখ্য,এর আগে শাকিবের ‘শিকারি’ ও ‘নবাব’ সঙ্গে বাংলাদেশে মুক্তি পায় যথাক্রমে জিতের ‘বাদশা দ্য ডন’ ও ‘বস টু’।