মনের টানেই মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে কাজ করি

প্রকাশ | ২১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বন্যা মির্জা
তারার মেলা রিপোর্ট বাবা মির্জা ফারুক একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাবার কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনেই বড় হয়েছেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। অভিনয়ে এসেও তাই মুক্তিযুদ্ধের নাটক-চলচ্চিত্রকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এ ধরনের কাজে নৈপুণ্যতার পরিচয়ও দিয়েছেন এ অভিনেত্রী। হয়তো এ জন্যই নির্মাতারা তাকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নাটক-চলচ্চিত্রে একটু বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন। বন্যা মির্জা ছোট পর্দায় এখন আগের মতো নিয়মিত নেই। খুব বেশি কাজ করেন না। বিভিন্ন উৎসবকেন্দ্রিক নাটক-টেলিছবিতে অভিনয় করছেন। এ ছাড়া একান্ত ভালো লাগার মতো কোনো গল্প বা চরিত্র পেলে সেটিতে অভিনয় করছেন তিনি। বন্যা বলেন, 'উৎসবকেন্দ্রিক নাটক টেলিছবিতে অভিনয় করতে ভালো লাগে।' অভিনয় অনেকেই করেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের নাটক-চলচ্চিত্রে কাজ করার সৌভাগ্য কজনার বেলায় হয়? এদিক থেকে নিজেকে ভাগ্যবতীই বলে মনে করেন বন্যা মির্জা। বন্যাকে মুক্তিযুদ্ধের গল্পে বেশি মানায় এ ধারণাটা বেশি জন্মেছে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর। এ পর্যন্ত যেকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন প্রায় সব কটিই মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নির্মিত। কোনো অভিনয়শিল্পীর জন্য এটা বিরল। তিনি বলেন, 'আমি এ পর্যন্ত সাত-আটটি ছবিতে কাজ করেছি কিন্তু সবকটি আলোচনায় আসেনি। এ অভিনেত্রীর উলেস্নখযোগ্য সে ছবিগুলো হলো- মোরশেদুল ইসলামের 'শরৎ ৭১', তানভীর মোকাম্মেলের 'রাবেয়া', বদরুল আনাম সৌদের 'খন্ডচিত্র ৭১' ও মাসুদ আখন্দের 'পিতা'। 'রাবেয়া' চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধার বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বন্যা। এ চরিত্রই তার বেশি পছন্দের। তিনি বলেন, " 'রাবেয়া'র পর আরও একাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছে কিন্তু এ ছবিটি আমার ভালো লাগার একটি ছবি।" মুক্তিযুদ্ধের নাটক-টেলিফিল্মে কাজ নিয়ে বন্যা বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির গর্ব ও অহঙ্কার। যুদ্ধের কাহিনীচিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া যে কোনো বাঙালি অভিনেত্রীর জন্যই গর্বের।' \হমজার বিষয় হলো এ অভিনেত্রীর এবারের চলচ্চিত্রটিও মুক্তিযুদ্ধের। চলচ্চিত্রের নাম 'ঘর গেরস্থি'। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত দেশের গুণী কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের 'ঘর গেরস্থি' গল্প অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে এই চলচ্চিত্র। ইতোমধ্যে ছবিটির প্রথম লটের শুটিং শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত এ ছবিটি পরিচালনা করছেন মাসুদুর রহমান রামিন। চিত্রনাট্য লিখেছেন আরেক নির্মাতা আকরাম খান। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 'ঘর গেরস্থি' চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের গল্প তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানালেন বন্যা মির্জা। তিনি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঘটনা নিয়ে হাসান আজিজুল হকের লেখা অসাধারণ একটি গল্পগ্রন্থ ঘর গেরস্থি। মলাটবন্দি ঘর গেরস্থি এবার সেলুলয়েডে বন্দি হচ্ছে। তার মতো এত বড় মাপের একজন সাহিত্যিকের লেখা গল্প থেকে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া অনেক বড় প্রাপ্তি আমার জন্য। আশা করছি, দর্শক ভালো মানের একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র দেখতে পাবে। \হপ্রশ্ন করা হলো- মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রেই কেন দেখা যায় আপনাকে? তবে প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব দিতে পারেননি এ অভিনেত্রী। বললেন, 'আমি তো পরিচালকের নির্দেশনায় কাজ করি। তারাই ভালো বলতে পারবেন কেন আমাকে বেছে নেন। আমার যেটা মনে হয়, এ সব চরিত্রে একটু বুঝে-শুনে অভিনয় করতে হয় বলেই আমার ডাক পড়ে। তা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমার নিজেরও অনেক শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। বলতে পারেন, মনের টানেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে কাজ করি আমি। এ কারণে এ ধরনের চলচ্চিত্রে পেলে খুব সহজেই লুফে নিই।' শুধু চলচ্চিত্রেই নয়, অনেক যুদ্ধের নাটকে দেখা গেছে বন্যা মির্জাকে। সর্বশেষ গত বছর বিজয় দিবস উপলক্ষে অভিনয় করেছেন 'ফসিলের কান্না' নাটকে। মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের নাটকের গল্পে বন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক ছাত্রী। একই বিভাগে তার সহপাঠী অভিনেতা ওমর আয়াজ অনি। ভাস্কর্য তৈরির কাজে একদিন তারা একটি গাছের গুঁড়ি কিনে আনেন। কিন্তু এই গুঁড়ির জন্য এক বৃদ্ধ হাজির হন। তিনি এ গুঁড়িকে 'শ্যাফালি' নামে ডাকতে থাকেন। বন্যা বলেন, 'নাটকের প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ। তবে গল্পে নতুনত্ব আছে। তখনকার আর এখনকার ভাবনার একটা সংমিশ্রণ হয়েছে নাটকে। গল্পের গাঁথুনিও চমৎকার। অভিনয় করে আমি তৃপ্ত।' বন্যার দেখা অন্যতম প্রিয় মুক্তিযুদ্ধের নাটক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের 'পাপ-পুণ্য'। গত বছর সরকারি অনুদানের 'ওমর ফারুকের মা' শিরোনামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী বন্যা মির্জা। এটি নির্মাণ করেন এম এম জাহিদুর রহমান বিপস্নব। সেটিও ছিল মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নির্মিত। বন্যা শুধু পর্দাতেই নয়, অভিনয়ে প্রশংসা পেয়েছেন মঞ্চেও। দেশ নাটকের আলোচিত প্রযোজনা 'নিত্যপুরাণ' নাটকে তিনি নিয়মিত অভিনয় করছেন। গত মঙ্গলবারও এর প্রদর্শনী হয়ে গেল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। দলটির ১৫তম এ প্রযোজনা রচনা করেছেন মাসুম রেজা। এর আগে নাটকটিতে 'দ্রৌপদী' চরিত্রে একাধিকজন অভিনয় করেছেন। তবে সর্বশেষ এ চরিত্রে অভিনয় করেন বন্যা মির্জা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'নাটকটির প্রদর্শনী স্থগিত হওয়ার আগের দুই বছর আমি 'দ্রৌপদী' চরিত্রটি রূপায়ন করেছি। দীর্ঘ ১৪ বছর পর আবারো এই চরিত্রটি নিয়ে মঞ্চে উঠি এবং এখনো নিয়মিত করে যাচ্ছি।' এবারো 'দ্রৌপদী' চরিত্রে অভিনয় করছেন বন্যা মির্জা।