ফারিয়ার নতুন জীবন

টিভি বিজ্ঞাপনচিত্রের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় আগমন। এরপর 'অল টাইম দৌড়ের ওপর' নাটক দিয়ে রীতিমতো আলোড়ন। তারপর? তারপরের গল্পটা আরও জাঁকালো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিভি নাটকে অপরিহার্য এক অভিনেত্রীতে পরিণত হওয়ার পর ডাক পড়ে চলচ্চিত্রে। সম্প্রতি অনম বিশ্বাসের আলোচিত 'দেবী' চলচ্চিত্র দিয়ে আলোকিত করেন নিজের ক্যারিয়ার। এর মধ্যেই দীর্ঘদিনের বন্ধুকে বিয়ে করে স্বপ্নের জগতে বসবাস শুরু করেন। সব মিলিয়ে দারুণ ফুরফুরে মেজাজে আছেন এই মডেল অভিনেত্রী। হঁ্যা, শবনম ফারিয়ার কথাই বলা হচ্ছে। জীবনের নতুন অধ্যায় আর সমসাময়িক ব্যস্ততার গল্প শুনতে তার মুখোমুখি হয়েছিলেন রায়হান রহমান

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
কথা বলারও খুব বেশি সময় নেই তার হাতে। ঘড়ির কাটার সঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তই যেন ব্যস্ততার সঙ্গে কাটাচ্ছেন। কারণ নাটক পাড়ায় এখনই ঈদের মৌসুম। ঈদ নিয়ে অনেকটাই ঘুম হারাম শবনম ফারিয়ার। বলা চলে, দম ফেলার ফুরসরত নেই ছোট পর্দার এই সুন্দরীর। জানালেন, 'দেবীর কারণে আটকা পড়ে ছিল বেশ কিছু নাটকের শুটিং। এরপর আবার বিয়ে। এসব মিলে মাস চারেক নাটকের শুটিং করতে পারিনি। সেসব এখন করতে হচ্ছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদের নাটকও।' 'দেবী' তো সুপার হিট। সে প্রসঙ্গের আগে নতুন জীবনের অভিজ্ঞতা আগে শোনা যাক। প্রতিটি নারীরই স্বপ্নের একটি জগত হলো নিজের আলাদা একটা ঘর-সংসার। বিয়ে নামক এই নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করার পর কেমন লাগছে সবকিছু? প্রশ্ন শেষ না হতেই ম্স্নান হাসলেন ফারিয়া। সাংসারিক জীবন এখনো উপভোগ করতে পারছেন না বলেও আক্ষেপ করেন জনপ্রিয় এই টিভি অভিনেত্রী। বললেন, 'বিয়ের চার দিনের মাথায় শুটিংয়ে যেতে হয়েছিল। ফেলে রাখা কাজগুলোকে শেষ করা আমার দায়িত্ব। তাই দিন রাত এক করে নাটকের শুটিংই করছি। ইচ্ছা ছিল বিয়ের পরে দেশের বাহিরে যাব। এখনো সময় হয়ে উঠেনি। ঈদের কাজ শেষ হলেই দুজন মিলে বেরিয়ে পড়ব কিছুদিনের জন্য।' অপুর সঙ্গে পরিচয় ও বিয়ে নিয়ে ফারিয়া বলেন, শুরুটা ২০১৫ সালের দিকে। অপুর (হারুনুর রশীদ অপু) সঙ্গে পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে। ওই আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। ধীরে ধীরে আমাদের বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের বয়স যখন তিন বছর, তখন বিষয়টি আমাদের পরিবারের মধ্য জানাজানি হয়। তারাও দ্বিমত করেননি। তাই পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়েছে। শবনম ফারিয়া অভিনয় শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিন বছর হয়েছে। এর মাঝেই ব্যস্ততার পালে হাওয়া দিয়ে দিব্যি চষে বেড়াচ্ছেন এ চরিত্র থেকে অন্য চরিত্রে। এতো অল্প সময়েই অভিনয় করছেন একজন পরিণত অভিনয় শিল্পীর মতো। করবেন নাইবা কেন? লেখাপড়াটা যে সাহিত্য নিয়ে। \হশোনালেন সে ফিরিস্তিও। 'যখন হাতে একটি চিত্রনাট্য আসে, প্রথমে গল্পটা বোঝার চেষ্টা করি। এতে আমার চরিত্র কি, চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে কল্পনা করি। নাটকের সেটে চেষ্টা করি চরিত্রের মধ্যেই থাকতে। মাঝে মাঝে আমার কো আর্টিস্টের সঙ্গেও সেভাবে কথা বলি। এতে স্ক্রিনে সাবলিল থাকা যায়। আমার চেষ্টা থাকে পর্দায় সাবলীল থাকা।' কথা শুনে আঁচ করাই যাচ্ছে নিজের চরিত্রের বেলায় কতটা সতর্ক তিনি। গল্পের প্রয়োজনে অভিনয়ে কতটা বৈচিত্র্য আনতে পারেন তা বহুবার দেখিয়েছেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি মোস্তফা কামাল রাজ ও ইমরুল রাফাতের দুটি ধারাবাহিকে যুক্ত হয়েছেন। সেখানেও তার একই অবস্থা। ব্যস্ততার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে চরিত্রের প্রতি যত্ন নেয়াও। ফারিয়ার মতে, আমি নাটকে কাজ করি দর্শকের জন্য। দর্শকের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হলে আমার কাছেও ভালো লাগে। তাই অভিনয়ের প্রতি আগের চেয়ে যত্নশীল হয়েছে। অভিনয়ে আসার প্রসঙ্গ তুলতেই ফারিয়া বলতে শুরু করলেন, 'শুরুটা অল্প কয়েকদিনের। অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেব, কখনো কল্পনাও করিনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই হয়েছে। প্রথম দিকে মানুষ আমার চেহারা চিনতো, বিল বোর্ডের কল্যাণে। কিন্তু নাম জানতো না। টিভি নাটকে অভিনয়ের সুবাদে তারা আমার নাম জানে, আমার প্রতি তাদের একটি প্রত্যাশাও আছে। ফলে যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ নেই। দেখতে দেখতে বহু নাটকে অভিনয় করে ফেলেছি। মাঝে মাঝে নিজের কাছেই মিরাকল মনে হয়।' এবার আসা যাক চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে। প্রথম চলচ্চিত্র 'দেবী' দিয়েই তো ঢালিউডে নিজের একটা পাকাপোক্ত আসন করে নিলেন। অনেকটা উড়ে এসে জুড়ে বসার মতই, কী বলেন! একগাল হাসি দিয়ে ফারিয়া বলেন, 'মাত্র একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। তাতেই মানুষের এত ভালোবাসা পাবো ভাবিনি। আমি সত্যিই ভাগ্যবতী, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের গল্প, ভালো প্রডিউসার আর ভালো একজন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। ইচ্ছা ছিল চলচ্চিত্রে অভিনয়ের। তবে ইচ্ছাটা এভাবে পূরণ হবে জানতাম না। জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী ও ইরেশ জাকের মতো বাঘাবাঘা সব অভিনয় শিল্পীরা ছিল এ চলচ্চিত্রে। তাদের সঙ্গে আসলে অভিনয় করা হয়নি। স্কুলিং হয়েছে আমার। সুতরাং ভালো না হয়ে উপায় আছে? ফারিয়া আরও বলেন, 'সবকিছুকে ছাপিয়ে টিভি দর্শকদের প্রতি আমার ভালোবাসা অন্য রকমের। তাদের কারণেই আমি ফারিয়া হতে পেরেছি। তারা আমাকে পছন্দ না করলে হয়তো এত দূর আসা হতো না। একটু দম নিয়ে ফের বলেন, সরাসরি দর্শকদের প্রতিক্রিয়ায় এত ভালোবাসা থাকে দেবীতে অভিনয় না করলে জানতে পারতাম না। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ভাষা নেই আমার।' এখন থেকে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হচ্ছেন? এবারো সেই চিরচেনা হাসি। বললেন, না। ভালো গল্প না হলে বড় পর্দায় অভিনয় করব না। তাই আপাতত নতুন কোনো চলচ্চিত্রে যুক্ত হইনি। বিয়ের পড়ে অনেক অভিনেত্রীকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফারিয়ার বেলায় তেমনটি হবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন দর্শকদের। বলেন, 'আমি হারিয়ে যেতে চাই না। অনেক চিন্তা করে দেখেছি অভিনয় ছাড়া অন্য কিছু পারি না। আর অপুও আমাকে এ বিষয়ে অনেক সহযোগিতা করে। সবাই দোয়া করবেন, আমরা যেন এভাবেই জীবনভর কাটিয়ে দিতে পারি।'