টিভি খুললেই খবর বিরক্ত দর্শক

প্রকাশ | ২৮ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

রায়হান রহমান
এক. আরিফুজ্জামান চৌধুরী। পেশায় একজন ব্যাংকার। মধ্যবয়সী এই ভদ্রলোক থাকেন রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায়। অফিসের কর্মব্যস্ততা শেষে রাতে বাসায় ফিরেই টিভির পর্দায় চোখ রাখতেন এক সময়। কিন্তু এখন রুটিন পাল্টেয়েছেন তিনি। বিনোদনের খোঁজে ক্লান্ত এই দর্শক বাংলা চ্যানেল প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। খবর যে তার পছন্দ না, তা কিন্তু নয়। খবর প্রচার করাটাও জরুরি। তবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সব চ্যানেলের লম্বা লম্বা খবরে বিরক্ত তিনি। তার মতে, একই খবর এক-দুয়েকবার দেখালেই তো হলো। তারপর টিভি স্ক্রিনের নিচে স্ক্রলে দুলাইনে খবরের শিরোনাম তো দেখানো হচ্ছেই। তাহলে দিনভর খবর প্রচারের এতটা প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না তিনি। দুই. তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাকিল রহমান। অনেকটা আক্ষেপের সুরেই তিনি বলেন, 'হাতে গোনা কয়েকটা চ্যানেল ছাড়া বাকি সব চ্যানেলের অনুষ্ঠানই পানশে। ফলে হারাচ্ছে দর্শকপ্রিয়তাও। এমন কি টিভিতে অনুষ্ঠান দেখতে বসলেও রেহাই নেই সংবাদের যন্ত্রণা থেকে। টিভি স্ক্রিনের এক তৃতীয়াংশ জুড়েই থাকে সারা দেশের সংবাদের স্ক্রল ও ব্রেকিং নিউজের স্ক্রল। ফলে আপনি চাইলেও সংবাদকে এড়িয়ে শান্তিমত কিছু দেখতে পারবেন না। এটা খুবই বিরক্তিকর।' তিন. টিভি চ্যানেলগুলোতে সংবাদ যন্ত্রণায় বিরক্ত কামরুল হাসান নামের আরেক দর্শক। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এ দেশে পূর্ণাঙ্গ বিনোদনের চ্যানেল বলতে কি কিছু আছে? সংবাদনির্ভর চ্যানেল আছে কিন্তু বিনোদননির্ভর কোনো চ্যানে নেই। আবার যেসব চ্যানেলে বিনোদন ও সংবাদ উভয়ই প্রচার করে, সেখানেও বিনোদন খুঁজে বের করা যুদ্ধের মতো। ফলে দর্শকদের টিভি সেটের সামনে বসিয়ে রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে...।' এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানসূচির দিকে তাকালেই। এক কথায় বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি চ্যানেলের অনুষ্ঠান সূচিতেই থাকে প্রতি ঘণ্টার বুলেটিন, বিস্তারিত সংবাদ, সারাদিনের সংবাদ নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান, সমসাময়িক বিষয় ও রাজনীতি নিয়ে টক শো। সেখানে আবার মানহীন উপস্থাপনা, হট্টগোল এমনকি টকশোতে এসে মারামারির ঘটনাও নেহাত কম নয়। একারণেই দর্শকরা এসবে আগ্রহ দেখায় না। চ্যানেলের পর চ্যানেল পরিবর্তন করে কোনো বিনোদনের অনুষ্ঠান, নাটক বা টেলিফিল্ম দেখার আশায়। কোথাও বিনোদনের খোরাক হিসেবে নাটক চলতে থাকলেও বাগড়া দেয় বিজ্ঞাপন বিরতি নামক জুট ঝামেলা। চ্যানেলের সংখ্যা যতই হোক, অনুষ্ঠান সূচিতে আসেনি বৈচিত্র্য বা সৃজনশীলতা। গুটি কয়েক চ্যানেলে সৃজনশীলতার চেষ্টা করলেও মান হারিয়ে সেগুলো হয়েছে ট্রলের শিকার। অনেকেই আবার সংবাদযন্ত্রণার শিকার হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে টেলিভিশনের পর্দা থেকে। তাদের কাছে আস্থার জায়গা কেবল ইউটিউব।