নানান রঙের তিশা

মিডিয়াতে এখন অনেক তিশা। তবে এত তিশার ভিড়েও তিশা বললে নুসরাত ইমরোজ তিশার মুখটিই ভেসে ওঠে সবার আগে। ভার্সেটাইল অভিনেত্রী হিসেবে তার জনপ্রিয়তাও অনেকটা আকাশ ছোঁয়া। টিভি নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- তার উপস্থিতি মানেই ভিন্ন কিছু। চোখেমুখে যার সবসময় অভিনয়টাই খেলা করে। ছোট পর্দায় অভিনয়ের ক্ষেত্রে বারবার নিজেকে ভেঙেছেন। আবিষ্কার করেছেন নতুন নতুন চরিত্রে। কখনো প্রতিবাদী নারী, কখনো বোবা মেয়ে আবার কখনোবা রোমান্টিকতায় ভরপুর একজন নারী হয়ে যান তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী ভারতের ছবিতেও অভিনয় করেছেন। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত 'হলুদ বনি' নামের একটি ছবির শুটিং ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। সম্প্রতি তিনি 'বোবা রহস্য' শিরোনামের থ্রিলার, সাসপেন্স, প্রেম ও গোয়েন্দাধর্মী গল্পের একটি ছবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই ছবিটি পরিচালনা করবেন অভিষেক বাগচি। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তার 'ফাগুন হাওয়ায়' সিনেমাটি। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার 'শনিবার বিকেল' সিনেমাটি। সম্প্রতি আরও একটি নতুন সংযোজন ঘটল তিশার ক্যারিয়ারে। লিখেছেন জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নুসরাত ইমরোজ তিশা
আগামী ২২ এপ্রিল পর্দা উঠবে অনূর্ধ্ব-১৯ বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের। স্বাগতিক বাংলাদেশসহ এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে আরব আমিরাত, মঙ্গোলিয়া, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও লাওস। আন্তর্জাতিক এই টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় নারী ফুটবল দল। এই টুর্নামেন্ট উপলক্ষে সাতজন নারী নির্মাতা নির্মাণ করেছেন 'এগিয়ে যাওয়ার নেই মানা' শিরোনামে সাতটি নাটক। নারীদের প্রেরণার গল্প নিয়ে বানানো এই নাটকগুলো প্রচারিত হবে ৭ এপ্রিল থেকে। এরই মধ্যে এর প্রোমে তৈরি করা হয়েছে। আর এখানেই দুর্দান্ত ফুটবলার চরিত্রে আবির্ভাব হয়েছে দেশের অন্যতম সেরা এ অভিনেত্রীর। ফুটবলার হতে হলে সামাজিক কত বাধা ডিঙাতে হয়, তিশার চরিত্রে সে অদম্য গল্পটাই ফুটে উঠেছে। ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের এই প্রোমোতে দেখা যাচ্ছে, পেনাল্টি শট নেয়ার জন্য প্রস্তুত কুসুম। শট নেয়ার আগে এই নারী ফুটবলারের কণ্ঠে শোনা যায়, 'আমি মহিনুপুরের কুসুম। আমার জন্ম ও আমার বেড়ে ওঠা সবই এই গ্রামে। ভাগ্যের ফেরে আজ আমি এই মাঠে। কিন্তু আজকেই আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটা ঘটবে। হয় আমার বিয়ে হবে, নয়তো আমি বাংলাদেশের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ এ খেলব। জানি না আমার কপালে কী আছে।' এরপর দেখা যায় স্কুল ড্রেস পরিহিত কুসুমকে। যেখানে বাবার সামনে কানে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কুসুম। আর বলছেন, 'কানে ধরলাম, আমি জীবনেও আর রাস্তাঘাটে খেলব না।' এখানেই শেষ নয়। এরপর ভিডিওতে কুসুমকে ছোট ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায়। এমনকি বিয়ের শাড়িতেও দেখা যায় কুসুমকে। শেষের দিকে কুসুমের বাবাকে বলতে শোনা যায়, 'ও আর ফুটবল খেলবে না।' কুসুম নামের এই খেলোয়াড়টির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিশা। শ্রাবনী ফেরদৌসের পরিচালনায় 'কুসুমের গল্প' নাটকটি দেখা যাবে আগামী ১৫ এপ্রিল রাত ৮টায় আরটিভিতে। প্রমো প্রচারের পর থেকেই নতুন করে আলোচনায় আসেন তিশা। আর এ ধরনের কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে তিশা নিজেও বেশ উচ্ছ্বসিত। বলেন, 'শুরুতে বিশ্বাসই হয়নি, আমাকে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। প্রস্তাব পেয়ে আমি হাসব না কাঁদব- বুঝতে পারছিলাম না। কারণ ফুটবল নিয়ে এর আগেও নাটক করেছি, কিন্তু সেখানে ফুটবল খেলতে হয়নি। তা ছাড়া আমি নিজে কখনও ফুটবল খেলিনি। পরে গল্পটি পড়ে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। জীবনে আমি সব সময়ই গল্পের চরিত্রকে গুরুত্ব দেই। কখনও নায়িকা হতে চাইনি। একজন শিল্পী হতে চেয়েছি, একজন ভালো অভিনেত্রী হতে চেয়েছি। ছবির গল্পই আমার কাছে মূল্যবান মনে হয়। ক্যারয়িারের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমি যে ধরনের কাজ করেছি এবং যা করছি তা আমার কাছে বেশ তৃপ্তিদায়ক। ক্যারিয়ারে নিজের ভালোর কথা চিন্তা করে যখন যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভালো হয়েছে বৈকি খারাপ হয়নি। এই দিক থেকে বলতে গেলে আমি ভাগ্যবতী। আমার বিশ্বাস কুসুমের গল্প নাটকটিও আমার ক্যারিয়ারে অন্যরকম এক প্রাপ্তি এনে দেবে।' কুসুমের গল্পের কুসুম কিংবা বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের আগে নিজের প্রস্তুতি কেমন থাকে? জবাবে তিশা জানান, আমি সবকিছুর আগে স্ক্রিপ্টটাকে প্রাধান্য দেই। কোনো গল্প বা স্ক্রিপ্ট যখন আমার কাছে আসে তখন প্রথমে ভাবি চরিত্রটা আমার সঙ্গে যায় কিনা। অভিনয়ের অফার পেলেই যে আমি সেটা করে ফেলি বিষয়টা কিন্তু তা নয়। অবশ্যই ভেবে সিদ্ধান্ত নেই। সবকিছু যখন মিলে এবং আমি কাজটা করব বলে সিদ্ধান্ত নেই তখনই প্রিপারেশনের ব্যাপারটা গুরুত্ব পায়। ড্রেসআপ থেকে শুরু করে কথাবার্তা বলার ধরন- সব রপ্ত করি। সবকিছুর পর যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই তখন ওই চরিত্রটাকে ভেবেই দাঁড়াই। আমি জানি না, কতটুকু সফল হই, তবে আমার চেষ্টাটা থাকে। যে কোনো চরিত্রে একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে দাঁড়ানোর আগে তার একটা প্রস্তুতি অবশ্যই দরকার। আমি শতভাগ সেই প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করি।' ইদানীং তিশাকে বিশেষ দিনের বিশেষ নাটক ছাড়া টিভি নাটকে দেখা যায় না। এর কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে তিশা বলেন, ছোট পর্দায় কাজ একটু কম করছি। বেছে বেছে কাজ করছি। স্বাভাবিক দিনের কাজ করি না। বিশেষ দিবসে ভালো গল্প পেলে কাজ করি। এ জন্য আমাকে টিভি নাটকে কম দেখা যায়। আমি আসলে দর্শকদের কাছে একটু ভিন্নভাবে উপস্থিত হতে চাই। বর্তমানে নাটকের বাজেট অনেক কমে গেছে। সে জন্য সারাবছর নিয়মিত কাজ করলে অ্যাভারেজ কাজ করা হয় বেশি। আমি গত তিন-চার বছর ধরেই বিশেষ দিবস ছাড়া টিভি নাটকে কাজ করছি না। অনেক নির্মাতাই চাইলে ভালো গল্পের কাজ বাজেটের জন্য সারাবছর করতে পারেন না। ঈদ বা বিভিন্ন বিশেষ দিবসে নাটকের বাজেটটা একটু বেশি থাকে। তাই ওই কাজগুলো করে তৃপ্তি পাই।' আপনাকে তো ওয়েব সিরিজেও কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই তো এটাকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন। আপনার কাছে কি মনে হয়? তিশা বললেন, 'এটা একটা সময়ের চাহিদা বলতে পারেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু নতুন কাজের মাধ্যম। যদিও আমি আসলে কাজটা কোন মাধ্যমের সেটা নিয়ে কম চিন্তা করি। আমি আসলে দেখি যে কাজটা কতটা ভালো। আমার চরিত্রটা কত ভালো। আমি সেখানে কতটা পারফেক্ট। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে আমি আসলে সেটাই চিন্তা করি। ভালো কাজ হলে দর্শকরা সেটা দেখবেই তা যে মাধ্যমেই হোক না কেন। আমি ওয়েব সিরিজ করলাম 'ইন্দুবালা'। বিগ বাজেটে নির্মাণ হয়েছে এই ওয়েবসিরিজটি। এটি নির্মাণ করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুন। আমাকে এখানে বস্নগারের চরিত্রে দেখা যাবে। ১০ পর্বে নির্মিত হয়েছে ওয়েব সিরিজ ইন্দুবালা।' এবার আসা যাক, চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে। সম্প্রতি তিশা কোলকাতার 'বোবা রহস্য' নামের একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। যৌথ প্রযোজনার 'হলুদ বনি' ছবিতেও কাজ করলেন। আবার অচিরেই মুক্তি পাচ্ছে তার 'শনিবার বিকেল' চলচ্চিত্রটি। এসব চলচ্চিত্রের বিষয়ে তিশা বলেন, 'শনিবার বিকেল দিয়েই শুরু করি। একটা শ্বাসরুদ্ধকর সিনেমা এটি। দর্শকরা দেখলেই বুঝতে পারবেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অন্যরকম একটি গল্পের ছবি এটি। এর চেয়ে বেশিকিছু ছবিটি নিয়ে বলতে চাই না। আর বোবা রহস্য ছবিটি থ্রিলার ঘরানার। ভালো একটা গল্পের ছবি হবে এটি। আশা করছি, সব কিছু মিলিয়ে একটা ভালো কাজ হবে এবং সবাই কাজটি পছন্দ করবেন। এ ছাড়া হলুদ বনি ছবিটি একটি সাহিত্যনির্ভর ছবি। এটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের নির্মাতা তাহের শিপন ও কলকাতার মুকুল রায় চৌধুরী। এটি ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবি। ছবিতে আমাকে অন্যরকম একটি চরিত্রে দেখা যাবে। ছবিটির শুটিং শেষ। ভিন্ন ধারার গল্পের এই ছবিটি দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আশা করছি।' সবশেষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কিন্তু প্রসঙ্গটা তুলতেই আগ বাড়িয়ে বলতে শুরু করলেন তিনি। বললেন, আমি কখনও পরিকল্পনা করে কাজ করি না। তাই নতুন বছরে নির্দিষ্ট কোনো ভাবনার কথা বলা যাবে না। আমার কাছে যখন যে কাজের প্রস্তাব আসে, সেটা আমার জন্য কতটুকু প্রযোজ্য এবং সেই টিমটা কেমন সেটা নিয়ে আগে চিন্তা করি। এরপর গল্পসহ নিজের চরিত্র নিয়েও ভেবে থাকি। তারপরই আসলে আমি সিডিউল দেই। একজন অভিনয় শিল্পীর চরিত্রের ক্ষুধা মিটবে এমন সব কাজই আমি করতে চাই। সেটা যে কোনো সময়েই হতে পারে। ভবিষ্যতে কি হবে সেটা বলতে পারি না।'