সৌখিন অভিনেত্রী জ্যাকুলিন

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা ডেস্ক
জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ
জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ। ছিলেন লঙ্কান সুন্দরী। হয়ে গেলেন বলিউড অভিনেত্রী। রূপ ও সৌন্দর্যে অনেক খ্যাতিমান তারকাকেও পেছনে ফেলেছেন এই লাস্যময়ী। অভিনয় দিয়ে হিন্দি সিনেমায় শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন তিনি। অপরদিকে ব্যক্তি জীবনে জ্যাকুলিন বেশ সৌখিন মানুষ। এর প্রমাণ মিলছে তার মুম্বাই অ্যাপার্টমেন্টে। এ যেন ছোট্ট এক প্যারিস। সাজানো-গোছানো আর ফ্যাশনেবল এক বসতঘর তার। একাকী সময় উপভোগের জন্য এর চেয়ে ভালো বাসস্থান আর হয় না। খোলামেলা স্থান আর সাগর ভালোবাসেন তিনি। তার মুম্বাইয়ের অ্যাপার্টমেন্টটা সাগরের দিকে মুখ করা। ফুল, সঙ্গীত, বই, সূর্যালোক এসবই তার নারীসুলভ রুচির পরিচায়ক। বোঝাই যায়, তিনি মূলের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করেন। \হহোয়াইট, প্যাস্টেল বস্নু এবং পিঙ্কের ছটায় রঙিন হয়েছে তার অন্দরমহল। সুপরিসর মেঝে আর ছাদের মাঝের জানালা থেকে সাগর দেখা যায়। ভিন্টেজ সাজে ছোট ছোট গাছ রয়েছে এখানে সেখানে। যা ঘরে অন্য এক সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে। চারদিকে যেন প্রাণশক্তির ছড়াছড়ি। অনেকটা জ্যাকুলিনের মতোই। অপরদিকে ফিটনেস ধরে রাখতে জ্যাকুলিন যে অনেক বেশি সচেতন তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে সে সঙ্গীতপ্রেমীও। বাড়িতে ব্যক্তিগত পোল-ড্যান্স স্টুডিও রয়েছে। লিভিং রুমে আছে পিয়ানো। বছরের পর বছর ধরে সংগৃহীত বইয়ের সংগ্রহের দেখাও মিলবে সেখানে। মিস শ্রীলঙ্কা ইউনিভার্স শিরোপা জয়ী সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ বলিউডে পদচারণা করেছেন খুব বেশিদিন আগে নয়। গত কয়েক বছরে একজন সুন্দরী, গস্নামারাস এবং আকর্ষণীয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজের আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলতে পেরেছেন। অভিনীত ছবিগুলোতে দর্শক তাকে বরাবরই গস্নামারাস ইমেজে দেখে আসছেন। নির্মাতারাও জ্যাকুলিনকে বিচিত্র রোলে একজন সাহসী নায়িকা হিসেবে পর্দায় তুলে ধরতে সচেষ্ট রয়েছেন। হিন্দি সিনেমার জগতে এখন তার মতো সাহসী স্মার্ট সুন্দরী নায়িকাদের বেশ কদর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা জাকুলিন গস্নামারাস রোলের পাশাপাশি অ্যাকশন গার্ল হিসেবেও কম যান না। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে 'রেস-২'সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে। \হরেস-২'র সফলতার পর গত বছর মুক্তি পায় তার 'রেস-থ্রি' ছবিটি। ছবিটিও আশানুরূপ ব্যবসা করে। গত বছর একটি ছবি মুক্তি পেলেও নতুন বছরে বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে দর্শকের সামনে আসছেন জ্যাকুলিন। এর মধ্যে আগামী ৬ এপ্রিল মুক্তি পাচ্ছে তার 'মিরা' ছবিটি। এ ছবির মাধ্যমেই প্রথমবার নাম ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে তাকে। অতীতের ছবিগুলোর মতো এ ছবিতেও গস্নামারগার্ল হিসেবেই উপস্থিত হচ্ছেন তিনি। 'মিরা' ছবিটি ক্যারিয়ারে নতুন পালক যোগ করবে মন্তব্য করে জ্যাকুলিন বলেন, 'এ ছবিটি আমার স্বপ্নের একটি ছবি। এ ধরনের ছবি এবং চরিত্রের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি এমরকম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাব, এটা কখনও ভাবিনি। এ ছবির গল্প, লোকেশন, গান- সবকিছুতেই ভালো লাগার আবেশ রয়েছে। আশা করি, সব ধরনের দর্শকেরই ভাল লাগবে ছবিটি। আর আমি নিজেও মুখিয়ে আছি ছবিটি দেখার জন্য।' এ ছাড়া এ বছর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে জ্যাকুলিনের 'আঁখি-ট'ু, 'ডেফিনেশন অব ফেয়ার', 'গো ড্যাডি' এবং 'ড্রাইভ' ছবিগুলো। সবমিলিয়ে চলতি বছর জুড়েই দেখা মিলবে জ্যাকুলিনের ঝলক। জ্যাকুলিনের ক্যারিয়ারের উত্থান শুরু হয় 'মার্ডার-২' ছবির মাধ্যমে। এতে বেশ সাহসী ইমেজে পর্দায় উপস্থিত হতে দেখা গেছে। নির্মাতারা এরপর থেকে তাকে নিয়ে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। 'কৃষ' ছবির সিকু্যয়েল এবং 'রাজ থ্রিডি'তে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলেও জ্যাকুলিন ইচ্ছে করে প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। বারবার একই ধরনের সাহসী আবেদনময়ী নারীর রোলে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের কাছে একঘেয়ে হতে চাইনি বলে অফারগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। অনেকেই বলছেন, বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ার পেছনে বলিউডি সিনেমার গস্নামারের পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে একজন বলিউড তারকা হিসেবে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ বলেন, 'আমরা কোন পোশাকে পর্দায় আসব, কিভাবে অভিনয় করব সেটা বলে দেয়া হোক। বলিউডের নায়িকাদের মিছেমিছি দায়ী করা হচ্ছে। দিলিস্নর ধর্ষণের ঘটনাটি ভীষণ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে ইদানীং। এ ধরনের পাশবিক ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। এ সম্পর্কিত আইন-কানুনও কঠিন করা প্রয়োজন। বলিউডের সিনেমার গানের কথায় যাতে অশ্লীলতা প্রকাশ না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অহেতুক বলিউডের মেয়েদের দায়ী করাটা ঠিক নয়।' এক সময় পরিচালক সাজিদ খানের সঙ্গে জ্যাকুলিনের গভীর সম্পর্কের রটনা শোনা গেছে। এসব নিয়ে তার তেমন মাথাব্যথা নেই। এ প্রসঙ্গে অনেকটা ডেমকেয়ার ভাব নিয়ে জ্যাকুলিন বলেন, 'আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে এ ধরনের রটনা খুবই মামুলি ব্যাপার। এসব নিয়ে মাথা ঘামালে কাজ করা যাবে না। সবকিছু মোকাবেলা করেই এখানে চলতে হয়। সিনেমার নায়ক-নায়িকা এবং অন্য লোকজনদের আলাদা একটি ইমেজ রক্ষা করে সবার চোখে ভালো মানুষ সেজে থাকতে হয়। ব্যক্তি জীবনে সৎ ও সুন্দরভাবে সুখী জীবনযাপনটাই হলো বড় কথা। কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে রটনা হতে পারে শোবিজে। আমি ব্যাপারটিকে তেমন পাত্তা দেই না।' বিউটি কুইন থেকে বলিউডের তারকা বনে যাওয়া অনেক সুন্দরীদের মধ্যে একজন জ্যাকুলিন একজন অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে ক্রমইে আরও বিকশিত করে তুলছেন। 'আমি একজন অভিনেত্রী হিসেবে চরিত্রটি রূপায়ণের সময় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই। অভিনীত চরিত্রটি যদি দর্শকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হয়ে ওঠে তাহলে সব পরিশ্রমই বৃথা বলে মনে করি। আমি আমার প্রতিটি ছবিতে অভিনয়ের সময় বৈচিত্র্যের প্রকাশ ঘটাতে চাইছি সাজ-পোশাক, মেকআপ, লুক ইত্যাদিতে নানা পরিবর্তন আনছি সচেতনভাবে। আমি মনে করি এর মাধ্যমেও অনেকটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছি। দর্শক আমার অভিনয়, সাজ- পোশাক, লুক ইত্যাদিতে আলোড়িত হচ্ছেন। আমি আগামীতেও এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাব।' বলেন জ্যাকুলিন। সিনেমায় নিজেকে সাহসী ভঙ্গিতে উপস্থাপন প্রসঙ্গে কোনো ঘোরপঁ্যাচ না করে সহজভাবে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে কি আমি ব্যাপারটিকে আমার অভিনীত চরিত্রের দাবি মেটাতে গিয়ে সাধ্যমতো নিজেকে উপস্থাপন করব তবে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব ঠিক ততক্ষণ নিজেকে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরব। আগামীতে আর কতদিন অভিনয় করতে চান জ্যাকুলিন, জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। এ প্রশ্নের জবাবে জ্যাকুলিন বলেন, 'যতদিন পর্যন্ত অভিনয় করে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে না পারি ততদিন পর্যন্ত অভিনয় করতে চাই। আমি এ জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে দ্বিধা করব না। যেদিন আমার এ অধ্যায় শেষ হয়ে যাবে তখন চমৎকার স্ত্রী হতে চাই সংসার জীবনে।'