অভিনয়ের বরপুত্র আফরান নিশো

চলিস্নশ পেরিয়েই পা রাখেন চলচ্চিত্রে। সেও আবার মুখ্য চরিত্রে নায়ক হিসেবে। আবার এই বয়সেও একটি চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে যা দেখালেন তাতেই বাজিমাত। এটা হলিউড-বলিউডেই সম্ভব কিন্তু ঢাকাই চলচ্চিত্রে এমন নজির তার আগে আর কেউই দেখাতে পারেননি। চলিস্নশের পর তো নায়ক আরও অনেকেই হয়েছেন। নায়করাজ রাজ্জাক, ওয়াসিম, আলমগীর থেকে শুরু করে বর্তমান শাকিব খান পর্যন্ত কে না চলিস্নশের পরও নায়ক হয়ে কাজ না করেছেন বা করছেন। কিন্তু তাদের এমন কেউ আছেন যারা চলিস্নশের পর চলচ্চিত্রে পা রেখে 'নায়ক' হয়ে কাজ করেছেন?

প্রকাশ | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
চলিস্নশ পেরিয়েই পা রাখেন চলচ্চিত্রে। সেও আবার মুখ্য চরিত্রে নায়ক হিসেবে। আবার এই বয়সেও একটি চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করে যা দেখালেন তাতেই বাজিমাত। এটা হলিউড-বলিউডেই সম্ভব কিন্তু ঢাকাই চলচ্চিত্রে এমন নজির তার আগে আর কেউই দেখাতে পারেননি। চলিস্নশের পর তো নায়ক আরও অনেকেই হয়েছেন। নায়করাজ রাজ্জাক, ওয়াসিম, আলমগীর থেকে শুরু করে বর্তমান শাকিব খান পর্যন্ত কে না চলিস্নশের পরও নায়ক হয়ে কাজ না করেছেন বা করছেন। কিন্তু তাদের এমন কেউ আছেন যারা চলিস্নশের পর চলচ্চিত্রে পা রেখে 'নায়ক' হয়ে কাজ করেছেন? সেটা আফরান নিশোই প্রথম দেখালেন। তার আগে ওটিটিতে নিজেকে ঝালিয়ে নিলেন বড়পর্দায় কাজ করার প্রস্তুতি হিসেবে। মূলত ওটিটিতে তার অভাবনীয় সাফল্যই পৌঁছে দিয়েছে চলচ্চিত্রের মতো বড় ক্যানভাসের পর্দায় উত্তীর্ণ হতে। তার আগে ছোটপর্দার অভিজ্ঞতা তো আছেই। যেখানে তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে ছোটপর্দার আরেক অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্বর সঙ্গে। যিনি দীর্ঘদিন ধরে ছোটপর্দাকে নিজের একচেটিয়া রাজত্ব বানিয়ে ফেলেছিলেন। রাজীব-প্রভা অনেকেই যার সেই আধিপত্যে ফাটল ধরাতে পারেনি। ফাটল ধরাবেই বা কী করে। বরং তিনি ছোটপর্দার জগতে নিজের ইমেজ ধরে রাখতে এবং সমাজের ওপর শ্রদ্ধা রেখেই সেই দুষ্কর্মকে প্রশ্রয় দেওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন তাৎক্ষণিকভাবেই। তার এই বুদ্ধিমত্তাই তাকে তার রাজত্বে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছিল। কিন্তু কী এক জাদুবলে যেন এরপর আফরান নিশো প্রথমে তার সেই রাজত্বে ভাগ বসালেন। এরপর কিছুদিন যেতে না যেতেই চলে এলেন একেবারেই সম্মুখভাগে। নামলেন অপূর্বর সঙ্গে চারশ মিটার হার্ডলসের দৌড়ে। তাতে অপূর্বই ছিলেন এগিয়ে। তবে একটা সময়ে অদম্য আফরান নিশোর সঙ্গে যেন আর পেরে উঠছিলেন না। দ্রম্নততম সময়ের মধ্যেই ধরে ফেললেন অপূর্বকে নিশো। তারপরেই আরেক হার্ডলস এবং অপূর্বকে আলতো একটা ধাক্কা। অপূর্ব পড়ে গিয়েই আবার উঠে দৌড়। কিন্তু ততক্ষণেই অনেক পিছিয়ে গেলেন অপূর্ব। সেই থেকে আফরান নিশো কেবল দৌড়াচ্ছেনই। কাছাকাছি অপূর্ব তো নেইই নিশোর আশপাশেও কয়েক মিটার পেছনেও আর কেউ নেই। ছোটপর্দায় একক আধিপত্য এভাবেই শুরু আফরান নিশোর। তাকে ভালোবেসে সম্বোধন করে 'বস' বলে। ছোটপর্দার বস। এলেন ওটিটি পস্ন্যাটফর্মে। এখানে অবশ্য তাকে আর কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হয়নি। শুরু থেকেই নিজের একক প্রাধান্য ধরে রেখেন। ধারাবাহিকভাবে করলেন বেশ কিছু আলোচিত ওয়েব সিরিজ এবং ওয়েব ফিল্ম। ছোটপর্দার এমন যুবরাজকে দেখে কি রুপালি পর্দার নির্মাতারা বসে থাকতে পারেন? নড়েচড়ে বসলেন তারাও। ভক্তরাও চাইছিলেন নিশো টিভি, ওটিটি'র পর বড় পর্দায়ও দেখা দিক। ছিনিয়ে নিক শাকিব খানের আধিপত্য। যেমন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি ছোটপর্দার অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা অপূর্বর আধিপত্য। আসলে ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তার জের ধরে হাল সময়ের চলচ্চিত্রে সুদিনের আভাস শুধু চলচ্চিত্র তারকাদের নয়, ছোটপর্দার তারকাদের ভেতরেও নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। যাদের অনেককেই এখন টিভি নাটকের চেয়ে ওয়েব সিরিজ এবং সিনেমার দিকে চোখ রাখতে দেখা যাচ্ছে। ছোটপর্দার দর্শকরাও চান তারা শুধু ওয়েব সিরিজেই নয়, বড়পর্দায়ও দেখা দিক। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। শেষ হলো ভক্তদের অপেক্ষার পালা। নাম লেখালেন নিশো বড়পর্দায়ও। সেটা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ। সিনেমার নাম 'সুড়ঙ্গ'। যৌথভাবে প্রযোজনা করে আলফা আই ও চরকি। বানিয়েছেন 'পরাণ' খ্যাত নির্মাতা রায়হান রাফি। 'পরাণ' তো এ দেশের ব্যবসা সফল ছবির মধ্যে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত তালিকায় ঢুকে পরা একটি সিনেমা। রাফি যেখানেই যা ফলান সেখানেই সোনা ফলে। একজন ক্যারিশম্যাটিক নির্মাতা। আফরান নিশোর নজরেও নিশ্চয় রায়হান রাফির এই ক্যারিশম্যাটিক ব্যাপারটি এড়িয়ে যায়নি। তাই যে-ই না তার প্রস্তাব পেলেন সেটা নিয়ে আর দ্বিতীয়বার ভাবনার সময় নিলেন না। রাজি হয়ে গেলেন। এরপর তো সবারই জানা, কেমন লড়াই চালিয়েছিল সেই আফরান নিশোর 'সুড়ঙ্গ'। কেমন জমেছিল ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে একচেটিয়া করে ফেলা শাকিব খানের সঙ্গে নিশোর লড়াই। রাফি যেমন ক্যারিশম্যাটিক নির্মাতা নিশোও তেমনই ক্যারিশম্যাটিক অভিনেতা। দুজনের এই ক্যারিশম্যাটিক গুণের কারণেই প্রায় সমানতালে লড়তে পেরেছিল 'প্রিয়তমা'র সঙ্গে 'সুড়ঙ্গ' সিনেমা। অন্যদিকে, ওই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগেই আবার নতুন একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন আফরান নিশো। সঞ্জয় সমদ্দারের 'কালপুরুষ'। ছবিটির প্রযোজক টপি খান। এই সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর নিশো বলেন, 'এখন আমি নাটকের চেয়ে সিনেমাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। সেজন্য প্রস্তুতও করছি নিজেকে।' সিনেমাটির শুটিং এখনো শুরু হয়নি। পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার তার অন্য সিনেমা নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আছেন। আবার এ দিকে আফরান নিশোও বলছেন, তিনি সিনেমা নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চান না। বলেন, 'একটা স্থিরতা দরকার। সিনেমা নিয়ে তাড়াহুড়া করতে চাই না। প্রথম তিনটি সিনেমায় তাড়াহুড়া করব না। তিনটা সিনেমা ধীরেস্থিরে করব। অনেক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেব। নাটক, ওটিটিতে আমি নতুন না। কিন্তু সিনেমায় ম্যাচিউরিটি আসতে সময় লাগবে।' 'সুড়ঙ্গ' সিনেমায় সাফল্য পাওয়ার পর থেকে নিশ্চয় একের পর এক নতুন সিনেমায় কাজের অফার আসছে। এমন কথায় আফরান নিশো বলেন, 'এখন একের পর এক অনেক সিনেমার অফার পাচ্ছি। স্ক্রিপ্ট আসছে অনেক। সেসব পড়ছি, দেখছি। ওপার বাংলা থেকেও সিনেমার প্রস্তাব পাচ্ছি। তবে আমি প্রথমে নিজ দেশের সিনেমাকে অগ্রাধিকার দেব, তারপরে বাইরের সিনেমা নিয়ে ভাববো।' কেমন সিনেমা সবচেয়ে বেশি টানে আপনাকে- এমন প্রশ্নে নিশো বলেন, এক প্রশ্নের জবাবে এই অভিনেতা বলেন, 'আমি গল্পের পাগল। গল্পই আমাকে টানে। সুন্দর কাজ আমাকে টানে। সুন্দর কাজ এলে করব। সেজন্য যদি অপেক্ষা করতে হয় করব- তারপরেও আমি কোনো তাড়াহুড়োর মধ্যে যেতে চাই না।' আফরান নিশো এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আরও বলেন, একটা সময় নাটকপাড়ায় তাকে প্রচুর চাপ নিতে হয়েছে। একের পর এক নাটকে কাজ করে গেছেন। কিন্তু সিনেমা তো আর নাটকের মতো শর্ট ভার্সনের কাজ নয়। এটা অনেক বড় ক্যানভাসের কাজ। সেখানে এত চাপ সহনীয় হবে না। এজন্য সেখানে ধীরেসুস্থেই কাজ করতে চান। তিনি বলেন, 'আমি জানি যে, আমার ওয়েল ওয়িশার আছে। তারা আমাকে সিনেমায় নানা চরিত্রে দেখতে চায়। কেউ রোমান্টিক সিনেমায় দেখতে চায়, কেউ বা সিরিয়াস সিনেমায় দেখতে চায়, কেউ থ্রিলার-অ্যাকশন সিনেমায় দেখতে চায়। কিন্তু এসব সিনেমায় আমি যে চরিত্রেই অভিনয় করি না কেন, আমি একাই তো একটি সিনেমাকে তুলতে পারব না। এ জন্য সবার আগে টোটাল টিমটাও ভালো হতে হবে।' সে কারণেই সব দেখেশুনে ভালো ভালো কাজগুলোই করতে চান নিশো। সিনেমা করার জন্য আগে একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে চান। সেজন্য তিনি ভালো করেই বোঝেন, সবকিছুর মূলে তার জন্য সে রকম একটা ফাউন্ডেশনও দরকার। একটি বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন যত মজবুত হবে সেই বিল্ডিংটিও ততো টিকসই হবে। শিল্পের পথও এই একই রকম। এমটিই মনে করেন ছোটপর্দার 'বস' আফরান নিশো।