নাটকে বাজেট বিতর্ক যুক্তি-পাল্টা যুক্তি

প্রকাশ | ১৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
অসংখ্য টিভি চ্যানেল, অসংখ্য টিভি নাটক। হিসাবে বসলে দেখা যায়, একঘণ্টা ও ধারাবাহিক মিলিয়ে প্রায় ৩০ টিরও বেশি নাটক প্রচার হচ্ছে। সেসব নাটক জুড়ে থাকে তারকাদের উপস্থিতিও। কিন্তু কতজন দর্শককে ধরে রাখতে পারছে এসব নাটক- এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না নাটকের কলাকুশলীরা। নাটকের গল্প চিত্রনাট্য আর অভিনয়ের ধরন দেখে মনে হয়, কেবল নাটক বানানোর জন্যই বানানো হচ্ছে, দর্শকের কথা চিন্তা করে বানানো হচ্ছে না। দর্শকের কথা না হয় বাদই দেয়া যাক, এসব নাটকের নানান সংকটের কথা অকপটে তুলে ধরছেন নাটকের পাত্র-পাত্রীরাই। গল্প নেই, চিত্রনাট্য নেই, লোকশনের ভিন্নতা নেই- এরকম বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। পাশাপাশি বাজেট নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা। স্বল্প বাজেটে এবং পারিশ্রমিকের দোহাই দিয়ে অনেক গস্নামারসর্বস্ব উঠতি তারকারা নাটক ছেড়ে বিকল্প পথ খুঁজছেন। আর কেউ কেউ বিরক্তি চেপে রেখে নাম মাত্র অভিনয় করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাজেট নিয়ে অভিনয়শিল্পীরা একরকম অভিযোগ করছেন আর উল্টো কথা বলছেন নাট্যনির্মাতা কিংবা লগ্নিকারকরা। তাদের ব্যাখ্যাও যুক্তিসসঙ্গত। তাদের বক্তব্য, যত গুড় তত যদি মিঠা হতো, তাহলে গুড় বেশি দিতে আপত্তি নেই। নাটক প্রচারের যে পরিবেশ, তাতে অল্প বাজেটের টাকাই তো তুলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেট বাড়ানোর হিসাব করা তো অনেক পরের বিষয়। তা ছাড়া চিত্রনাট্য অনুযায়ীই তো বাজেট নির্ধারণ হবে। অনেক নির্মাতাই আক্ষেপ করে বলেন, একটা সময় ভালো মানের নাটক নির্মাণে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পাওয়া যেত, কিন্তু এখন দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বেশি হয় না। অথচ নির্মাণ ব্যয় আগের থেকে বেড়েছে। সঙ্গে দুই গুণ হয়েছে শিল্পীর সম্মানির পরিমাণ। বর্তমানে একটি নাটকের বাজেটে সিংহভাগই চলে যায় প্রধান দুই চরিত্রের কাছে। আমাদের দেশে শিল্পীর সম্মানীর কোনো নির্ধারিত তালিকা নেই। ফলে যে যার মতো করে আদায় করে নিচ্ছে। পুরো একটি নাটকের বাজটের অংক ভাগ হয় বিভিন্নভাবে। পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয় গল্পকারকে। একজন ক্যামেরাম্যানকে দেয়া হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। আর সহকারী পরিচালকে দেয়া হয় হাজারখানেক। ক্যামেরা ভাড়া তিন থেকে হাজার দশেক টাকা। ফলে একটি নাটক নির্মাণে বাজেটের পরিমাণ আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন নির্মাতারা। এর সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন বর্তমান সময়ের ব্যস্ত অভিনেতা অভিনেত্রীরা। ছোট পর্দার প্রিয় মুখ মেহজাবিন চৌধুরী যায়যায়দিনকে নাটকের বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, এক পর্বের একটি নাটক দর্শকরা হয়তো দেখে চলিস্নশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট। তবে এর পেছনে কম করে হলেও তিনদিন সময় দেয়া লাগে। প্রতিটা সেক্টরে আলাদাভাবে খরচ করতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু নাটকের বাজেটের কোনো পরিবর্তন নেই। ভালো কিছু পেতে হলো তো খরচটাও করতে হবে। এ বিষয় সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত। বাজেট স্বল্পতার অভিযোগ ভিত্তিহীন নয় বলে জানালেন ছোট পর্দার আরেক পরিচিত মুখ সাবিলা নুর। তিনি বলেন, নাটকের সেটে সবার মুখে মুখে থাকে এটার জন্য বাজেট নেই ওটার জন্য বাজেট নেই। সত্যিই তাই। এক পর্বের নাটকের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বাজেট থাকে না। ফলে পরিচালক চান দ্রম্নত কাজটি নামিয়ে আনতে। এতে কাজের মান সংকটে পড়ে। আমার কাছে মনে হয়, নাটকের বাজেটের পরিমাণ বাড়লে নাটক তৈরিতে সবাই যত্নশীল হবে। দর্শকরাও নাটক দেখে আরাম পাবেন। পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, এখনকার নাটকগুলোর গল্পে কোনো ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে না। সেই পাঁচ ছয় বছর আগে যেমন গল্প নিয়ে কাজ হয়েছে, এখনও সেই গল্পগুলোই ঘুরে ফিরে বারবার আসছে। যাদের হাত ধরে নাটকের গল্পে পরিবর্তন হয়েছিল, তারা এখন মিডিয়ার অস্থিরতার কারণে নাটক বানানো থেকে দূরে চলে গেছেন। ফলে নতুন পরিচালকরাও কিছু শিখতে পারছেন না। নির্মাতা সাইফুল আলম শামীম বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য নির্মাতারাও দায়ী। আমরা কম বাজেটে নাটক নির্মাণ করে দিচ্ছি বলেই টিভি চ্যানেলগুলো সেই সুযোগটা নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তরুণ কয়েকজন নির্মতা জানান, নাটকে বাজেট নেই, ঢালাওভাবে এ অভিযোগ করা উচিত নয়। এক পর্বের একটি নাটকের জন্য যে বাজেট থাকে তার অর্ধেকের বেশিই নিয়ে যায় প্রধান দুই চরিত্র। বাকি অর্ধেকেরও কম টাকা দিয়ে অন্যান্য কাজ সাড়তে হয়। প্রধান শিল্পীর সম্মানির বিষয়টি নির্ধারণ করা উচিত। বেশির ভাগ অভিনয় শিল্পীরা আবার এ অভিযোগ মানতে নারাজ। তাদের দাবি একজন শিল্পীর সম্মানি কত হওয়া উচিত তা অন্যরা কেন ঠিক করে দেবে। এটা শিল্পীর ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। সব দেশেই এমন হয়। শিল্পীর সম্মানি নির্ধরাণ করার উপায় নেই। এদিকে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বলেন, টিভি নাটকে বাজেটের পরিমাণ সত্যিই কম। তার থেকে ওয়েব সিরিজের বাজেট থাকে ভালো। ফলে যত্ন নিয়ে তৈরি করা হয় সেসব ওয়েব সিরিজ। আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। উল্টো পথে রয়েছেন অনেকেই। বলছেন, বর্তমান নাটকের অবস্থা ভালোই মনে হচ্ছে। তার মধ্যে মুমতাহিনা টয়া, তৌসিফ মাহবুব, সাফা কবির, নিলয় আলমগীর, শবনম ফারিয়া। তারা বলেন, বাজেট নিয়ে একটা ঝামেলা আছে। এটা মানছি। তবে নাটকের মান নিয়ে আপস করতে নারাজ। এত টানাপড়েনের মধ্যেও আমাদের নাটক দর্শকরা দেখছে। একটি নাটক যখন ইউটিউবে আপলোড করা হয় তখন লাখ লাখ ভিউ হয়। নাটকের মান খারাপ হলে মানুষ দেখতো না। বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বলে নাটকে মান খারাব হবে বলে বিশ্বাস করি না।