নাচের নাদিয়া...

ন-তে নাচ, ন-তে নাটক। আবার 'ন' দিয়ে হয় নাদিয়া। হঁ্যা, টিভি অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী- নাদিয়া যেন সবকিছুর সংমিশ্রণ। নাদিয়ার প্রথম পরিচয় তিনি একজন নৃত্যশিল্পী। তবে বর্তমান সময়ে সেই পরিচয়কে ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর অভিনয়শিল্পী। নাটক, নাচ, বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, কোরিওগ্রাফি, স্টেজ পারফর্ম্যান্স- কোথায় নেই নাদিয়া! মিডিয়ার সব শাখাতেই তার অবাধ বিচরণ। আগামী ২৯ এপ্রিল বিশ্ব নৃত্য দিবস উপলক্ষে নাদিয়ার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন সাজিয়েছেন

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
নাদিয়া আহমেদ
নাচতে নাচতেই... নৃত্য দিয়েই মিডিয়ায় পথ চলা শুরু হয়েছিল তার। এখন সারা বছর নাটকের কাজে ব্যস্ত থাকলেও নিয়মিত নাচ করেন এ শিল্পী। সমানতালে সময় দেন নাটক ও নাচে। তবে নাচই তার প্রশান্তির জায়গা বলে মনে করেন তিনি। তাই উৎসব এবং উৎসব ছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে নাচের অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হন নাদিয়া। একজন শিল্পী হিসেবে নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকেই নাদিয়া নাচের প্রতি মন থেকে টান অনুভব করেন। নাদিয়া অনুভব করেন চর্চার বিকল্প নেই। আর তাই নাচের চর্চা তিনি নিয়মিতই করেন। তিনি বলেন, 'নাটকের শুটিং থাকলেও আমি নাচের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। কয়েকদিন আগেও এমন হয়েছে। 'আম্মানি' নামে একটি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শেষ করে সন্ধ্যায় গেন্ডারিয়ার পুলিশ লাইনে পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে নাচে পারফর্ম করেছিলাম।' যেভাবে শুরু... নাদিয়া ছোটবেলা থেকেই নাচ করেন। প্রথমে শিশু একাডেমি তারপর বাফাতে নৃত্যের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বাফা থেকে নাদিয়া সাত বছরের ডিপেস্নামা কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৮৬ সালে বিটিভির শিশুমেলা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টিভি পর্দায় আগমন ঘটে নাদিয়ার। এরপর বিটিভির শিশুতোষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাদিয়া হয়ে ওঠেন নিয়মিত এবং "লিটল স্টার" হিসেবে সম্মাননা অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে নতুন কুঁড়ির অভিনয় শাখায় অংশগ্রহণের সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসার জন্ম। আর এই ভালোবাসা থেকেই টিভি নাটকে অভিনয়। ১৯৯২ সালে বিটিভির সে সময়ের তুমুল জনপ্রিয় 'বার রকমের মানুষ' ধারাবাহিকের 'বৈচি' চরিত্রের মাধ্যমে অভিনেত্রী নাদিয়া পরিচিতি পান। শিশুশিল্পী থেকে পরিণত শিল্পীতে রূপান্তরিত হন। সেই থেকে নাচের পাশাপাশি টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয়। বিভিন্ন চ্যানেলে নাদিয়ার বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। প্রচার চলতি ধারাবাহিক ছাড়াও সম্প্রতি নতুন ছয়টি ধারাবাহিক নাটকের শুটিং শেষ করেছেন। এ ছাড়াও আসন্ন ঈদের নাটকে কাজ করছেন। প্রতিটি নাটকে নাদিয়া অভিনয় করছেন গুরুত্বপণর্ চরিত্রে। তবে এখনকার ধারাবাহিক নাটক নিয়ে তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট নন। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য- 'প্রতিদিন প্রতিটি চ্যানেলে একাধিক ধারাবাহিক নাটক প্রচার হয়। ফলে ধারাবাহিক নাটক নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ নাটকে দর্শকের মনে দাগ কাটার মতো গল্প থাকে না। তা ছাড়া এত স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভিড়ে দর্শক আমাদের নাটক কতটুকু দেখে তা আমি জানি না।' নাচ এখনও অবহেলিত... টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নাটক প্রচারে আগ্রহ প্রকাশ করলেও নাচের অনুষ্ঠান প্রচারে আগ্রহ দেখান না। এ নিয়ে নাদিয়া বলেন, 'নাচের অনুষ্ঠানের প্রতি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের কিছুটা অবহেলা আছে। তবে এখন ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। এখন টিভি চ্যানেল নাচের অনুষ্ঠান প্রচার করছে।' নাচ শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, 'পৃথিবীর আদিকাল থেকেই নাচের সঙ্গে সবাই পরিচিত। গানের মতো নাচও মানুষকে বিনোদিত করে আসছে। মঞ্চে যেমন নাচের গুরুত্ব তেমনই পর্দাতেও নাচের গুরুত্ব। বাণিজ্যিক ধারার কোনো চলচ্চিত্রই নাচ ছাড়া তৈরি হয় না। বিশ্বের অন্যান্য দেশে নাচকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়।' নাটকে নাদিয়ার অভিনয়ে দর্শক যেমন মুগ্ধ হন, তেমনই নাচেও মুগ্ধতা ছড়ান। নাদিয়ার নাচের প্রশংসা করেছেন বলিউড অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর। একটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৭ সালে ঢাকায় এসেছিলেন শর্মিলা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার গানে পারফর্ম করেন নাদিয়া। নাদিয়ার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন শর্মিলা। নাদিয়া বলেন, 'এটা আমার সৌভাগ্য শর্মিলা ঠাকুর আমার নাচের প্রশংসা করেছিলেন। তার মুখে যখন প্রশংসা শুনলাম, তখন আমি উড়ছিলাম। শুধু তা-ই নয়, এত বড়মাপের একজন অভিনয়শিল্পীর সামনে পারফর্ম করার পর প্রশংসা পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। এটা আমার জীবনের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এটা আমি কোনো দিন ভুলতে পারব না। ওই অনুষ্ঠানে আমরা যেসব নাচ করেছিলাম, তার মাধ্যমে ওই সময়ে চলচ্চিত্রে শর্মিলা ঠাকুরের স্টাইল তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম।' প্রসঙ্গ 'নৃত্যকথা'... আসছে বিশ্ব নৃত্যদিবস উপলক্ষে নাদিয়ার বেশ কিছু অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পেয়েছেন। ঈদে নেচে মঞ্চ মাতাবেন বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানেও। আর বেশি অনুষ্ঠানেই নাদিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে পারফর্ম করেন লিখন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা জুটি বেঁধে পারফর্ম করে আসছেন। এর আগে অনেকে নাচের জুটি ভেঙে গেলেও এই জুটির কখনো ভাঙন ধরবে না বলেও জোর গলায় দাবি করলেন নাদিয়া। নাদিয়া ও লিখন ব্যক্তিগত জীবনে একে অপরের বেশ ভালো বন্ধু। দুজন মিলে 'নৃত্যকথা' নামে একটি নাচের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। একেবারে কম বয়সী শিশুদের নাচের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তারা। সারা জীবন নাদিয়া-লিখন জুটি নৃত্যের তালে তালে মঞ্চ মাতিয়ে যেতে চান। তাদের এই জুটি বিচ্ছিন্ন হবে না বলেও আশাব্যক্ত করেন নাদিয়া। নাচ আমার প্রাণের খোরাক... নাদিয়া শুধু নাচ- নাটকেই নয়, বিজ্ঞাপন চিত্রেও অভিনয় করে সুনাম ধরে রেখেছেন। নাদিয়া যখন ক্লাস সিক্সে পড়েন তখন এলিগেন্টস্‌ সোয়েটারের বিজ্ঞাপনে মডেলিং করেন। এটিই তার প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্রে অভিনয়। পরবর্তী সময়ে পন্ডস এবং ওয়ালটনের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে এ অঙ্গনে তার অবস্থান তুলে ধরেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে নাদিয়া বলেন, 'অভিনয় নিয়েই আমার সব ব্যস্ততা। এর মধ্যে নৃত্যও আছে। এই দুয়ের মধ্যে আমি সারাজীবন বেঁচে থাকতে চাই। তবে যদি বলা হয়, কোনটা রেখে কোনটা ধরবেন- তাহলে একবাক্যে বলব, অভিনয় ছেড়ে নাচ ধরব। কারণ নাচ ছাড়া নাদিয়ার বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। নাচ আমার প্রাণের খোরাক।'