নিজস্ব ছন্দে মম

২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজে আগমন ঘটে জাকিয়া বারী মম'র। ভিন্নধর্মী কাজ দিয়ে অল্প দিনেই দর্শকনন্দিত হয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই তারকা।

প্রকাশ | ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

রায়হান রহমান
জাকিয়া বারী মম
শুরু থেকেই নিজের অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়ে আসছেন মম। ২০০৭ সালে তৌকির আহমেদের পরিচালনায় দারুচিনি দ্বীপ চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখে মুগ্ধ হোননি এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। সে থেকেই শুরু। ক্লান্তিহীনভাবে ছুটে চলছেন এক চরিত্র থেকে অন্য চরিত্রে। কিছুতেই মিটছে না তার অভিনয়ের ক্ষুধা। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এত যে ছুটে চলছেন ক্লান্তি লাগে না? একগাল মিস্টি হেসে উত্তর দিলেন, 'আমিও ক্লান্ত হই। মজার বিষয় হচ্ছে ক্লান্তিটা প্রতিদিনই নতুন করে আসে আবার দিন শেষে কেটে যায়। নতুন দিন শুরু করি নতুন চরিত্র দিয়ে। নিজেকে আবিষ্কার করি অন্য রূপে। ফলে পুরনো দিনের ক্লান্তির ছাপ নতুন দিনে থাকে না। হারিয়ে যায়। বিষয়টা উপভোগ করি। আমার কাছে এটি একটি চ্যালেঞ্জ। প্রতিদিনই আমরা যে খাটুনি দিচ্ছি একটি চরিত্রের মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য এটা অনেকেই জানে না। নিজের সঙ্গে নিজেকে লড়তে হচ্ছে। তারপরেও শুনতে হয় আমাদের নাটক নাকি দর্শক দেখে না। এসব শুনলেই আমি ক্লান্ত হয়ে পড়ি। অভিনয় করতে করতে ক্লান্তিবোধ ছুঁতে পারে না।' মম'র কথাতেই বোঝা যায় তার শরীরের রন্ধে রন্ধে রয়েছে অভিনয়শৈলী। সবসময় অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। চরিত্রের সঙ্গে যার এত খেলা, নিশ্চয়ই নিজের অভিনীত চরিত্র নিজের ওপর ভর করে। জানতে চাওয়া হয়েছিল, কখনো কি নিজের অভিনীত চরিত্রটিকে নিজের চাইতেও শক্তিশালী মনে হয়েছে? এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন তিনি। উত্তরমালার পসরা নিয়ে সামনে বসলেন। বললেন, 'এটা আমার ক্ষেত্রে প্রায়শই হয়। চরিত্রের যুক্তি, চরিত্রের উদ্দেশ্য এমনকি চরিত্রের চারপাশে ঘটে যাওয়া বিষয়বস্তু যদি আমাকে আশ্বস্ত না করে তাহলে আমিও সে চরিত্রটিকে ঠিকঠাক ধারণ করতে পারি না। আমাকে দিয়ে সে চরিত্রটা পোর্টেট হয় না। দেখা যায় একটি চরিত্রের জন্য চিত্রনাট্যে দশ লাইন লিখা আছে। কিন্তু এর বাইরে আরো বিশ লাইন আমাকে খুঁজে বের করতে হবে। যেটাকে আমরা সাবটেক্স বলি। প্রতিটি চরিত্রের জন্যই এই সাবটেক্স অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটিই খুঁজি। আমি নাট্য ও নাট্যতত্ব বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। ফলে আমার মাথার ভেতরে এই বিষয়টি বারবার ঘুরতে থাকে। যতক্ষণ একটি চরিত্রের মধ্যে থাকি, ততক্ষণ সেই চরিত্রটি আমার ওপর ভর করে। কখনো কখনো মনে হয় এই চরিত্রটি আমার থেকেও শক্তিশালী।' আপাদমস্তক এই অভিনেত্রী সুযোগ পেলেই নাটক দেখেন। তালিকায় সবার ওপরে থাকে নিজের অভিনীত নাটকগুলোই। অকপটে বলেন, নিজের নাটক যদি নিজেই না দেখি তাহলে তো নিজের ভুল খুঁজে বের করতে পারব না। আমার প্রত্যেকটি কাজ দেখার সময়ই ভুল পাই। মনে হয় এই ক্লোজটার সময় চোখের চাহনিটা ঠিক হয়নি। হাঁটাটা ঠিক হয়নি- এসব। প্রায়শই দেখি একটি শট দিলাম, পরিচালক বললেন ওকে। কাজের মান কিন্ুত্ম এভাবেই খারাপ হয়। একজন শিল্পীর যেমন অভিনয় ক্ষুধার থাকে, তেমন একজন পরিচালকেরও একজন শিল্পীর কাজ থেকে সেরাটা বের করে নেয়ার ক্ষুধা থাকতে হবে। এত কিছুর পরেও একজন তারকার, একজন অভিনেত্রীর নিজস্ব একটা জগৎ থাকে। মম তার ব্যতিক্রম নয়। তারো একটি নিজস্ব জগৎ আছে। সেখানে শুধুই মম। অন্য কারো সে জগতে প্রবেশের অধিকার নেই। সে জগৎটা একটা ঘোরের জগৎ। কল্পনার জগৎ। বাস্তবতার পাশাপাশি একটা ঘোর লাগা জগৎ আছে আমার। সেটা কাউকে বলে বুঝাতে পারব না, বললেন মম। একটু থেমে শুরু করলেন কথামালা। 'বৃষ্টি আমাকে খুব টানে। প্রকৃতির প্রেমে সবসময় হাবুডুবু খাই। আকাশের বিশালতা, পাহাড়ের উচ্চতা কিংবা সমুদ্রের গভীরতায় বারবার হারাতে চাই। সুযোগ পেলেই এসবের কাছে ছুটে যাই। আমার এই নিজস্ব জগতের মধ্যে অভিনয়টাও আছে। অভিনয়ের মধ্যে আমি আমার অস্তিত্বকে অনুভব করি। ক্যামেরার রোলিংয়ের সঙ্গে আমার যে সখ্য তা অন্য কিছুর সঙ্গে নেই।' মম'র সঙ্গে ক্যামেরার রোলিংয়ের সখ্য টিকে থাকুক অনেক দিন। নিজের সবটা জুড়ে যে মানুষটার অভিনয়, সে মানুষটা নিত্যনতুন চরিত্র নিয়ে হাজির হোক দর্শকদের মাঝে। বরাবরের মতো পৌঁছে যাক দর্শক হৃদয়ের পর্দা ভেদ করে অনেক উঁচুতে। অভিনেত্রী নিজেই বলেন, 'এই ঘোর লাগা দুনিয়াটাকেই আমি বেশি পছন্দ করি।'