ঈদ আড্ডায় ওমরসানী-মৌসুমী

ঈদ। দুই অক্ষরের এই শব্দটির ব্যাপকতা কিংবা পরিধি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি- মুখে এমনটি বললেও এই আনন্দ বা খুশির কোনো সঠিক সংজ্ঞা দেয়া মুশকিল। যার যার অভিজ্ঞতা আর অনুভূতিই তার কাছে এই আনন্দের সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়ায়। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের কাছেই ঈদের উদযাপন ফিকে মনে হয়। তারা বলেন, ঈদ এখন বড়দের নয়, ছোটদের বিষয়। যদিও এই কথাটি মানতে নারাজ তারকা দম্পতি ওমরসানী-মৌসুমী। ঈদ এলে এখনও আগের মতোই মনে এক ধরনের প্রফুলস্ন হাওয়া বইতে থাকে। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই নানান পরিকল্পনা করেন তারা। তবে ব্যক্তিগতভাবে নয়, সবকিছুই হয় পারিবারিকভাবে। লিখেছেন জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ৩০ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ওমরসানী ও মৌসুমী
ভালোবাসা বেঁচে থাকে বিশ্বাসে- এই কথা দু'জনই খুব মেনে চলেন। তাই বিয়ের আগে থেকে ওমরসানীর প্রতি মৌসুমীর যেমন বিশ্বাস ছিল বিয়ের পর যেন সেই বিশ্বাস দু'জনের প্রতি দু'জনের আরো বেড়েছে। দিন যত যাচ্ছে একজন অন্যজনের ওপর যেন আরো বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। সাধারণ কোনো অনুষ্ঠানে একজনকে ছাড়া অন্যজনের দেখা মেলে না। তাদের সুখের সংসার প্রতিমুহূর্তে আলোকিত করছে তাদের দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজা। ফারদিন পড়াশুনার পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ব্যবসায় ব্যস্ত আর ফাইজা পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত। এই দুই সন্তানের মাঝেই ওমরসানী মৌসুমীর আগামীর ভাবনা। সুখে দুঃখে একসঙ্গে থেকে বাকিটা জীবন সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে পার করে দিতে চান তারা দু'জন। এবারের ঈদ নিয়ে লম্বা এক আড্ডা হয় ওমরসানী-মৌসুমীর সঙ্গে। আড্ডার শুরুতেই প্রশ্ন ছোড়া হয় এবারের ঈদে তাদের পরিকল্পনা কিংবা প্রস্তুতি কেমন? উত্তর আসে ওমরসানীর কাছ থেকে। জানালেন, 'একেকটা ঈদ একেক রকম আবহ নিয়ে আসে। বিয়ের পর এখন পর্যন্ত প্রতিটি ঈদই আমাদের কাছে নতুন মনে হয়েছে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। তবে যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়, সেভাবে হয় না। প্রতিবারই ঈদ আসে তার নিজের মতো করে। অনেক সময় পরিকল্পনা কিংবা প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্নভাবে হাজির হয় ঈদ। এবারের ঈদেও বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছি। তবে ঈদে স্ত্রী ও সন্তানদের ঘিরেই আমাদের আয়োজন থাকে। তবে এবার একটু অন্যরকমভাবে কাটবে।' অন্যরকম বলতে? প্রশ্ন করার আগেই বলতে শুরু করলেন মৌসুমী। বললেন, ঠিক আহামরি কিছু না, তবে অন্যরকমই বলা যায়। টিভি চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এবারই প্রথম আমাদের দুজন বাংলাদেশ বেতারে ভিন্ন ধারার দুটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছি। অনুষ্ঠান দুটির নাম 'সিনে রং' ও 'উত্তরণ'। নন্দিত উপস্থাপক মাজহারুল ইসলামের আমন্ত্রণে তারা দু'জন এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। এ নিয়ে আমরা দুজনই বেশ উচ্ছ্বসিত। মাজহার ভাই আমাদের সবার শ্রদ্ধার একজন মানুষ। বাংলাদেশের সিনেমা বিকাশের ক্ষেত্রে তারও অবদান রয়েছে। সিনেমার জন্যই নিবেদিত হয়ে কাজ করেছেন তিনি। দুটো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে বুঝতে পেরেছি সিনেমা সম্পর্কে তিনি কতটা গভীরভাবে জানেন। আমার অনেক কিছু অজানা ছিল, তা জানতে পেরেছি এবং সত্যিই অনেকদিন পর এমন দুটো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে পুরনো অনেক স্মৃতিই মনেপড়ে গেল। আশা করছি শ্রোতাদের দুটি অনুষ্ঠানই ভালোলাগবে।' ওমরসানী বলেন, 'বাংলাদেশ বেতারে কখোনই যাওয়া হয়নি। এত বছর পর মৌসুমী এবং আমি বাংলাদেশ বেতারে গেলাম। আমাদের দু'জনেরই এত ভালো লেগেছে- যা বলার মতো না। অবশ্য গিয়েছি মাজহার ভাইয়ের জন্য। তিনি অনেক বার অনুরোধ করেছেন যাওয়ার জন্য। তার আন্তরিকতার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমরা দু'জন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। ধন্যবাদ মাজহার ভাই ও বুশরাকে।' তবে ঈদের রেডিও টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও কোনো নাটকে দেখা মিলবে না মৌসুমীর। যদিও কয়েকবছর আগেই ঈদ যেন ছিল তার অন্যরকম এক মৌসুম। নাটক ও সিনেমা- দু'মাধ্যমেই সরব উপস্থিতি তার। গত ঈদেও একটি নাটক প্রচারিত হয়েছিল তার। তবে এবার ঈদে নাটকে দেখা না গেলেও সিনেমায় দেখা মিলবে তার। এই ঈদে মুক্তি পাচ্ছে মৌসুমী অভিনীত 'নোলক' সিনেমাটি। সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মৌসুমী। সিনেমাটি নিয়ে বেশ আশাবাদীও তিনি। ঈদ নিয়ে কথা বলতে বলতে হঠাৎ যেন উদাস হয়ে যান মৌসুমী। অনেকটা অতীতে ফিরে যান তিনি। একটু পর আবার বলতে শুরু করেন তিনি। 'তবে যাই বলি, বড়বেলায় যতই আনন্দ-উলস্নাস করি, ছোটবেলার ঈদে মজাটা পুরোটাই আলাদা। ছোটবেলার ঈদগুলোতে অনেক আনন্দ করতাম। আর ঈদ আনন্দ ঈদের ক'দিন আগে থেকেই শুরু হতো। এখন অবশ্য সে রকম হয় না। ছোটবেলার ঈদগুলো খুব মিস করি। আমি তখন খুলনায় থাকতাম। ঈদের আগের দিন রাতে ভাইবোন ও বন্ধুরা মিলে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় উঠোনে বসে থাকতাম- কখন চাঁদ উঠবে আর কখন আমরা বাজি ফোটানো শুরু করব। উপস্থিত সবার হাতেই একটি করে বাজি-পটকা থাকত। যেই চাঁদের দেখা মিলত, তখনই পটকা ফোটানো শুরু করতাম। তখনই শুরু হতো আমাদের সবার হৈ-হুলেস্নাড়, পুরো বাড়ি মাতিয়ে রাখতাম। একটু রাত হলে ঘরে ফিরে নতুন জামা-কাপড় দেখার পর্ব শুরু করতাম। আমি ক্ষণে ক্ষণে এসে নিজের ড্রেসগুলো দেখতাম।' বললেন মৌসুমী। 'নিজেদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে মৌসুমী-ওমরসানী বলেন, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা একই ছাদের নিচে বাস করছি। মিডিয়ার মানুষ হিসেবে এটা আমাদের জন্য বিশাল একটা সাফল্য। আমরা বাকি জীবন এভাবেই হাসি-খুশিভাবে একসঙ্গে কাটাতে চাই। কোনো অশুভ শক্তির কবলে ভেঙে পড়তে চাই না। জীবন ও সময়কে এভাবেই ধরে রাখতে চাই। সবাইকে ঈদ মোবারক।'