বাবাই আমার ছায়া-সঙ্গী

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
ঐন্দ্রিলা আহমেদ
সমস্ত চেতনাজুড়েই তার অস্তিত্ব... 'বাবাকে আমার সবসময় মনে পড়ে। আমার এখনও মনে হয়, বাবা আমার সঙ্গে ছায়া-সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন। তিনি যে নেই, এখনও তা বিশ্বাস করতে পারি না। আমার সমস্ত চেতনাজুড়েই তার অস্তিত্ব। বাবাকে নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে কিছু কিছু স্মৃতি বিশেষ হয়ে থাকে জীবনে। ছেলেবেলায় আমি যখন বাবার অফিসে যেতাম, বাবা তার চেয়ারটা ছেড়ে দিয়ে আমাকে সেখানে বসিয়ে দিতেন। আমি সেখানে বসে টেবিলের নিচের কলিংবেল বারবার টিপতাম। অফিস সহকারী এলে তাকে বলতাম চকোলেট, কোক নিয়ে আসুন। অফিসের প্যাডে লিখতাম, ফোন এলেও আমি ধরে কথা বলতাম। বাবা সবসময় আমাকে 'আম্মি' বলে ডাকতেন। অফিসে গেলেই আম্মি কী খাবে, কী লাগবে জিজ্ঞেস করতেন। সেখানে মিটিং চলতো আমি তার মধ্যেই আমার মতো ঘুরে বেড়াতাম। বাবা কিছুই বলতেন না। বাবার সঙ্গে কাটানো এমন অনেক মুহূর্ত আমার জীবনে বিশেষ স্মৃতি হয়ে আছে...।' একটানা কথাগুলো বলছিলেন মডেল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা আহমেদ। আসছে বাবা দিবস উপলক্ষে বাবা বুলবুল আহমেদকে নিয়ে বলতে গিয়ে অনেকটাই আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন তিনি। কথা বলতে আবারও যেন স্মৃতির রাজ্যে হারিয়ে যান তিনি। বলেন, 'বাবার জন্যই আমি আজ অভিনয়ে বলতে পারেন। বাবাকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে খুব গভীরভাবে তিনি আমাকে স্পর্শ করেছেন। তাকে নিয়ে কাজগুলোই খেয়াল করেন- দেখেন তিনি কীভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন। তার ব্যক্তিত্ব আমাকে আকৃষ্ট করে। আমার বাবা বেঁচে থাকার সময় বিভিন্নভাবে বলেছিলেন- আমি মরে গেলে আমার মেয়ে আমাকে ধরে রাখবে। সে চেষ্টা এখনও অব্যাহত। বুলবুল আহমেদের মেয়ে হিসেবে আমি গর্বিত।' বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই... কেবল নিজের মনের মধ্যেই নয়, বুলবুল আহমেদকে সারাদেশের মানুষের মনেই গেঁথে রাখতে চান ঐন্দ্রিলা। বাবাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান যুগের পর যুগ। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন ঐন্দ্রিলা। তিনি জানান, বাবাকে নিয়ে বেশকিছু কাজ করেছি, করছি। এর আগে তাকে নিয়ে বই লিখেছি, বইটির নাম 'একজন মহানায়কের কথা'। ২০১৫ সালে বস্নু-বেরি হোটেলে 'মহানায়কের দিনগুলি' নামে একটি গানের অনুষ্ঠান করেছি। এটা আমার জন্য বড়প্রাপ্তি। মনে হয়েছে যে, আমি বাবার জন্য কিছু করতে পেরেছি।' মহানায়ক কালে কালে জন্মায় না... নিজের নামের আগে বা পরে যখন বাবার পরিচয়টি যুক্ত হয়, নিজেকে তখন আরও বেশি গর্বিত, আনন্দিত মনে হয় উলেস্নখ করে ঐন্দ্রিলা বলেন, 'মহানায়ক বুলবুল আহমেদের মেয়ে হতে পারাটা অন্য যে কোনো পরিচয়ের চেয়ে বেশি তৃপ্তির ও গর্বের। তবে বাবাকে নিয়ে অনেক ক্ষোভও আছে আমার। বাবা ছিলেন ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি। 'মহানায়ক' হিসেবেও পরিচিত তিনি। অথচ বাবার জন্ম ও মৃতু্যবার্ষিকী কেটে যায় অনেকটা নীরবেই। কিছু গণমাধ্যম ছাড়া আর কোথাও তাকে নিয়ে কোনো আয়োজন চোখে পড়েনি। যেন বুলবুল আহমেদ বলে কেউ ছিলেনই না এ দেশের অভিনয়ের আঙ্গিনায়। যদিও এসব নিয়ে বলার ইচ্ছে করে না। চারদিকে গুণীর কদর কমছে। তবে গুণীদের প্রতি এমন নীরবতা হতাশার। আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষের উপস্থাপনা করছি না। তারা অনুপ্রেরণার জন্য আদর্শ মানুষ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। একজন মহানায়ক কালে কালে জন্মায় না। এর মূল্যায়ন করা উচিত।'