যেতে হবে বহুদূর...

একজন পরিপূর্ণ নায়িকা হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই রয়েছে পরীমনির মধ্যে। কিন্তু অভিনয়ের প্রশংসা পেলেও কোনো এক অজানা কারণে এখন পর্যন্ত তার কোনো ছবিই আহামরি ব্যবসা করতে পারেনি। এ কারণেই হয়তো পরী এখনো তার স্বপ্নের জায়গায় যেতে পারেননি। তবে 'বিশ্ব সুন্দরী' সেই অতৃপ্ততাকে তৃপ্ত করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
পরীমনি
দুই বছর পর সিনেমার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন ঢাকাই সিনেমার এই সময়ের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তার নতুন ছবি 'বিশ্ব সুন্দরীর' কাজ। চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত এ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন পরী। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন আরেক তরুণ নায়ক সিয়াম। পরীমনি অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'বাহাদুরী'। শফিক হাসান পরিচালিত এ ছবিটির কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে মাঝামাঝিতে। এ ছবির পর মাঝখানে আর কোনো নতুন ছবিতে শুটিং করেননি পরী। চলচ্চিত্রে কাজ না করলেও এই তিন বছরে নানা কারণে মাঝেই মাঝেই খবরের শিরোনামে এসেছেন তিনি। কখনো নতুন বিজ্ঞাপন, কখনো ওয়েব সিরিজ, কখনো শর্টফিল্ম, কখনো আবার ব্যক্তিগত নানান কর্মকান্ডেও আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে সবচেয়ে বেশি হইচই ফেলে দেন তার বিয়ে নিয়ে। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রম্নয়ারি ভালোবাসা দিবসে দীর্ঘদিনের প্রেমিক বিনোদন সাংবাদিক তামিম হাসানের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন হয় তার। দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে অনেকটা আনন্দঘন পরিবেশেই আংটিবদল করেন তারা। বাগদানের পর পরীমনি বলেছিলেন, কোনো এক ভালোবাসা দিবসেই তারা ধুমধাম করে বিয়ে করবেন। কিন্তু কোনো এক ভালোবাসা দিবস তো দূরের কথা, বাগদানের চার মাস পার হওয়ার আগেই ভেঙে যায় পরী-তামিমের সম্পর্ক। জানা গেছে, পরীর সিনেমায় অভিনয় নিয়ে তামিমের পরিবার আপত্তি তোলায় সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে তাদের। বিয়ের আগেই বিচ্ছেদের খবরে আবারও মিডিয়ায় হইচই পড়ে যায় পরীকে নিয়ে। যদিও এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ক্যারিয়ারের দিকেই আপাতত মনোযোগী পরী। ভালো ভালো সিনেমা এবং চরিত্রের মাধ্যমে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধ পরিকর এই নায়িকা। তার বিয়ে-শাদী আর বাগদান নিয়ে পরীমনি এখন পর্যন্ত গণমাধ্যমে পুরোপুরি মুখ খোলেননি পরী। তারার মেলার সঙ্গে কথা বলার সময়েও বিনয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে প্রশ্ন না করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি। পরীমনি বলেন, 'আসলে এই মুহূর্তে বিয়ে কিংবা বাগদান নিয়ে কিছুই বলতে চাই না। মানুষের কিছু ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে। আমি আসলে শুধু আমার কাজ করে যেতে চাই। বললে তাহলে দুজনকেই বলতে হবে। একতরফা বলা ঠিক হবে না। তবে যেটুকু না বললেই নয়, সেটা হলো আমার কাজকে কেউ যদি অসম্মান করে, সেখানে আমি কখনো একচুলও আপস করব না। কারণ এখানে সম্মানের জায়গা ছিল। একইভাবে আমার কাজও সম্মানের জায়গা। আমার কিছু স্বপ্ন আছে। কাজের মাধ্যমে আমি আমার স্বপ্নের জায়গায় পৌঁছাতে চাই। বহুদূর যেতে হবে আমাকে। এখনও পথের অনেক বাকি রয়েছে।' একজন পরিপূর্ণ নায়িকা হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সবকিছুই রয়েছে পরীমনির মধ্যে। কিন্তু অভিনয়ের প্রশংসা পেলেও কোনো এক অজানা কারণে এখন পর্যন্ত তার কোনো ছবিই আহামরি ব্যবসা করতে পারেনি। এ কারণেই হয়তো পরী এখনও তার স্বপ্নের জায়গায় যেতে পারেননি। তবে 'বিশ্ব সুন্দরী' সেই অতৃপ্ততাকে তৃপ্ত করবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। 'বিশ্ব সুন্দরী' ছবিতে অন্য এক পরীকে দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। পোশাক-আশাক, মেকাপ-গেটাপেও থাকবে ব্যাপক পরিবর্তন। পরীমনি বলেন, সবকিছু ভুলে এখন 'আমি বিশ্ব সন্দরী'র মধ্যে ডুবে থাকতে চাই। কিভাবে গল্প ও চরিত্রের মধ্যে গভীরভাবে মিশে যাওয়া যায়- এটা নিয়েই আমার এখনকার চিন্তা ধারা ও ধ্যান-জ্ঞান। ছবিটি প্রেমের হলেও মানবতা ও জীবনের জয়গানেরও চিত্র ফুটে উঠবে এখানে। পাশপাশি সৌন্দর্য যে শুধু বাহ্যিক নয়, সৌন্দর্য হতে পারে মন ও মননের- এটাও উঠে আসবে এই সিনেমার মাধ্যমে। ছবিটি আমার স্বপ্নের একটি ছবি। 'স্বপ্নজাল'-এর পর আমি আর কোনো ছবিতে সাইন করিনি। কেননা, মানসম্মত কোনো গল্পই পাইনি। অবশেষে 'বিশ্ব সুন্দরী'র গল্প শুনে মুগ্ধ হয়েছি। আশা করছি, 'বিশ্ব সুন্দরী' ছবিটিও বাংলা চলচ্চিত্রে দাগ ফেলবে। দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে। এ ছাড়া আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল সুবর্ণা মুস্তাফা ম্যামের সঙ্গে কাজ করার। সেই ইচ্ছেও পূরণ হচ্ছে এই ছবির মাধ্যমে। সবমিলিয়ে 'বিশ্ব সুন্দরী' আমার অনেক ড্রিম প্রজেক্ট। পরীমনির আরেকটি স্বপ্নের প্রকল্প ছিল গিয়াস উদ্দিন সেলিমের স্বপ্নজাল ছবিটি। এ ছবিটি শুভ্রা চরিত্রে অভিনয় করে সুধী মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। মূলত এ ছবির পর থেকেই স্বপ্নজালের মতো ভিন্ন ঘরানার ছবি ও চরিত্রের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তিনি। এ ছাড়া জাজের 'রক্ত' ছবির 'ডানাকাটা পরী' গানটি দিয়েও দর্শকমাত করেন এই নায়িকা। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশে তার ফেসবুক পেজে লাইক কমেন্ট নিয়ে তিনি বেশ এগিয়ে। পরীর প্রিয় কোনো খাবারের হদিস না পাওয়া গেলেও তার দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া আর প্রিয় রং হিসেবে সে সাদাকেই প্রধান্য দেন। পরী বলেন, 'আমার প্রিয় রং সাদাই শুধু নয়, এই ড্রেস পরলে তো সত্যি আমাকে পরির মতো লাগে। দেশের বাইরে ঘুরতে ভালোলাগা আপাতত বলতে পারব না। তবে আবার পুরো দুনিয়া ঘুরে দেখতে হবে। তারপর বলতে পারব কোন দেশে আমার ঘুরতে ভালো লাগবে।' বর্তমানে এই চিত্রনায়িকার পরিবারে একমাত্র খালা আর নানুভাই ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই। সেই ছোট্ট বয়সে তার মাকে হারান। পরে হারান তার বাবাকে। তার প্রিয় কোনো মানুষের নাম জানতে চাইলে এই নায়িকা বলেন, 'আমার কোনো প্রিয় মানুষ নেই। যে আমার প্রিয় সেই আবার অপ্রিয়। তবে জগতে আমার নানুকে ভীষণ ভালোবাসি। আমি আমার নানুর ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা নিয়েই আগামীর পথ চলতে চাই।'