সংগীত নিয়ে শিল্পীদের অভিমত

আগামীকাল ২১ জুন 'ফেট ডে লা মিউজিক' বা বিশ্ব সংগীত দিবস। প্রতি বছর ২১ জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ দিবসটি উৎসবমুখর পরিবেশে উৎযাপিত হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ এ দিবস নিয়ে চোখে পড়ার মতো কোনো আয়োজন নেই আমাদের দেশে। এমনকি অনেক জনপ্রিয় তারকারাও জানেন না কবে সংগীত দিবস এবং সংগীত নিয়ে কোনো দিবস পালন করা হয় কি না আদৌ। সংগীত দিবস উপলক্ষে কয়েকজন সংগীত শিল্পী বাংলা গানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন তারার মেলার সঙ্গে।

প্রকাশ | ২০ জুন ২০১৯, ০০:০০

রায়হান রহমান
কুমার বিশ্বজিৎ
সংগীত হচ্ছে সম্মিলিত চর্চার বিষয় : কুমার বিশ্বজিৎ শুরু করা যাক প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎকে দিয়েই। তার ভাষ্য মতে, 'বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে নেই তেমন কোনো আয়োজন। থাকলেও খুব একটা চোখে পড়ে না। এসব গুরুত্বপূর্ণ দিবস আটকে থাকে শিল্পকলার গন্ডির মধ্যেই।' চলমান সময়ে গানের অবস্থান ও দর্শকপ্রিয়তা নিয়েও কথা বলেন 'তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে, হৃদয়ের কুঠুরে রাখবো' খ্যাত এ গায়ক। তিনি বলেন, 'এখনকার সময়ে গানের মূল আবহটাই পাল্টে গেছে। একটা সময় আমরা ভালোবেসে, মমতা দিয়ে গান গাইতাম। শ্রোতারা শুনতো হৃদয় দিয়ে। তারা গানকে অনুভব করত। চোখ বন্ধ করে গানের সুর ও ভাষা গ্রহণ করত। এখন সবাই গান শোনার চেয়ে দেখে বেশি। বর্তমান সময়ের বড় সমস্যা হচ্ছে গানে ভাষা। ভাষাগত দুর্বলতা গানের আবেদন নষ্ট করে দিচ্ছে। তবে একেবারেই যে ভালো গান তৈরি হচ্ছে না, তেমনটি বলা যাবে না। বাংলা গানে যা সৃষ্টি হওয়ার তা আগেই হয়ে গেছে। আমরা এখন পুরনো বাংলা গানকে আশ্রয় করে টিকে আছি। বিভিন্ন কারণেই গানে নতুনত্ব নিয়ে হাজির হতে পারছি না।' কিসের অভাব রয়েছে আমাদের সংগীতাঙ্গনে, যার কারণে নতুনত্ব নেই? এমন প্রশ্নের জুৎসই উত্তর মিলল এ তারকা শিল্পীর কাছে। অনেকটা আক্ষেপ নিয়ে বললেন, 'এখনকার ছেলেমেয়েরা গানের অতীত ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করে না। রয়েছে ভাষা জ্ঞানের অভাব, গীতিকবিদের অভাব, সিনিয়র শিল্পীদের সঙ্গে নতুন শিল্পীদের যোগাযোগ রক্ষা না করাসহ অনেক কারণ। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, একজন শিল্পী নিজেই গান লিখছে, নিজেই সুর দিচ্ছে। আবার সেই গান নিজেই পরিবেশন করছেন। এভাবে সৃজনশীলতা আসে না। সংগীত হচ্ছে সম্মিলিতভাবে চর্চার বিষয়। গান নিয়ে সাধনা করতে হয়। গানের কথায় মমতা থাকতে হয়, বার্তা থাকতে হয়। তবেই না বাংলা গানের রসবোধ শ্রোতারা আহরণ করতে পারবে। সত্যি বলতে, এসব নিয়ে অনেক কথাই বলেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ভবিষ্যতে কতটুকু হবে সেটাও জানি না। সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে : আগুন একজন সুপরিচিত সংগীতশিল্পী আসিফুর রহমান আগুন। 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' চলচ্চিত্রে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেয়া এ শিল্পী সংগীতাঙ্গন নিয়ে বলেন, আমরা তো অনেক দিন ধরে গান করছি। সামনে থেকে অনেক কিছু দেখেছি। সব ধরনের অভিজ্ঞতাই আছে। সব মিলিয়ে মনে হয় বর্তমান অডিও মার্কেট একদম তৈরি। এখানে ভালো কনটেন্ট দিতে পারলে দর্শকরা সেটা গ্রহণ করবে। তাই রাত দিন কাজ করছি ভালো কিছু উপহার দেয়ার জন্য। ভালো এবং মন্দ সব জায়গায় থাকবে। আমাদের সংগীত অঙ্গনেও তাই। আমি সব কিছু ইতিবাচক ভাবেই দেখতে পছন্দ করি। অন্যের সমালোচনা না করে নিজের কাজটি ঠিক ঠাকভাবে করতে চাই। ঢালাওভাবে বলতে গেলে আমাদের সংগীত সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে। ভালো ও মন্দ সবসময়ই ছিল : মেহরীন এবার আসা যাক জনপ্রিয় কণ্ঠ শিল্পী মেহরীন মাহমুদের প্রসঙ্গে। দুই দশক ধরে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রয়েছেন গানের জগতে। তার মতে, 'গান চলছে গানের ব্যাকরণ মেনে। তবে মাঝে মধ্যে এর ব্যতয়ও ঘটছে। এ নিয়ে কাউকে দোষ দিতে চাই না। সবাই কিন্তু যার যার গান যত্ন নিয়ে তৈরি করার চেষ্টা করে। যার মেধা যত বেশি সে তত সৃজনশীলভাবে গান উপস্থাপন করতে পারবে। ভালো গান ও মন্দ গান সবসময়ই ছিল। এখনো এ বিষয়গুলো বিদ্যমান। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করার কিছু নেই। মূল বিষয়টি হচ্ছে শ্রোতাদের যেসব গান ভালো লাগবে তারা সেটা গ্রহণ করবে। যে গানগুলো ভালো লাগবে না সেগুলো গ্রহণ করবে না। ভালো মন্দের বিচার তাদের হাতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় বর্তমান গানের অবস্থা মোটেই খারাপ নয়।' সংগীতাঙ্গন ভালোর দিকে যাচ্ছে : কনা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ততম সংগীত শিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। তিনি বলেন, 'বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে শিল্পকলায় রয়েছে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছে এর প্রস্তুতি। এতে আমিসহ আরো কয়েজন শিল্পী গান করব। আর বর্তমান সময়ের গানের অবস্থা নিয়ে স্বল্প কথায় বলতে চাই, সংগীতাঙ্গন ভালোর দিকে যাচ্ছে। দর্শকের রুচি ও পছন্দসই গান এখনো তৈরি হচ্ছে এবং বেশিরভাগ গানই মানুষ পছন্দ করছে। হয়তো কিছু গান এদিক সেদিক হচ্ছে। এটা সবসময়ই হয়ে থাকে। তবে শ্রোতাদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। তারা ভালো আর মন্দের পার্থক্য করতে জানে। ভালো গান থেকে যাবে। এটাও প্রমাণিত। এর বেশি আপতত বলতে চাচ্ছি না।