ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে শখ

মডেল-অভিনেত্রী আনিকা কবির শখ। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি দক্ষ অভিনয়শৈলীর মাধ্যমে দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। নাটক, বিজ্ঞাপন এবং চলচ্চিত্র- যেখানেই পা রেখেছেন, সেখান থেকেই সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত নানা ঝক্কি-ঝামেলায় হঠাৎ করেই এলোমেলো হয়ে যায় সব। ম্স্নান হয়ে যায় ঝলমলে ক্যারিয়ার। হারানো সেই ক্যারিয়ার ফিরে পেতে অতীত ভুলে আবারও শোবিজে ফিরে এসেছেন এই তারকা। মিষ্টভাষী-হাস্যময়ী এ অভিনেত্রী আগামীতেও তার সফলতার ধারা অব্যাহত রাখতে চান। লিখেছেন- আকাশ নিবির

প্রকাশ | ১১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মিডিয়াটা এমনই। এখানে পান থেকে চুন খসলেই হৈচৈ পড়ে যায়। তার সঙ্গে তৈরি হয় নানান ধূম্রজাল। এই তো কদিন আগেই খবর রটেছে কোথাও নেই শখ, অভিনয়কে বিদায়- গুডবাই জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ খবরের কদিন পরেই সন্ধান মেলে শখের। জানালেন, কোথাও হারিয়ে যাননি তিনি। মূলত অসুস্থ মায়ের দেখভাল করতেই কদিন মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। নতুন খবর হলো, সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে সম্প্রতি আবারও কাজে ফিরেছেন তিনি। প্রায় দেড় বছরের আড়াল ভেঙে প্রকাশ্যে এলেন এই মডেল অভিনেত্রী। বর্তমানে তিনি ব্যস্ত ঈদের বেশ কয়েকটি নাটক নিয়ে। গত সপ্তাহে শেখ সেলিম পরিচালিত 'সামচু ভাই সংসারী হতে চায়' নাটকের মাধ্যমে দীর্ঘ দেড় বছর পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান শখ। এ নাটকে জাহিদ হাসানের বিপরীতে অভিনয় করছেন তিনি। শখ বলেন, নাটকটির গল্প অনেক মজার। আমার মনের মতো একটি গল্পের নাটক এটি। জাহিদ হাসান ভাইও অনেক আন্তরিকতার সহিত সহযোগিতা করেছেন আমাকে। অতীতের ভুলভ্রান্তি ভুলে নিজেকে শুধরানোর চেষ্টা করছি। আবার নতুন করে মিডিয়ায় ব্যস্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। আমার বিশ্বাস, সবার সহযোগিতায় আমি আবার হারানো ক্যারিয়ার ফিরে পাব। শখের এই প্রত্যাবর্তনে তার সহকর্মীরাও অভিনন্দন জানিয়েছেন তাকে। মূলত প্রেম. ভালোবাসা, বিয়ে এবং বিচ্ছেদের কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণেই আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারে নেমে আসে অশনিসংকেত। হতাশ হয়ে ক্রমেই নাটক, মডেলিং এবং চলচ্চিত্র থেকে ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। সর্বশেষ দেড় বছর আগে 'ডি-২০' নামের একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। এরপর মায়ের অসুস্থতায় অভিনয় থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেন নিজেকে। ইচ্ছে থাকার পরেও কাজ করা হয়নি তার। দীর্ঘদিন পর আবার নিজের বর্তমান ব্যস্ততা ও কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সবার কিছু না কিছু পারিবারিক নানা সমস্যা থাকে। সেই রকম কিছু বিষয়ে একটু নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলাম। অনেকটা দোটানায় ছিলাম। আসলে কাজে ফিরব কি না- এ নিয়েও সংশয়ে ছিলাম। তবে প্রত্যাবর্তন করলেও এখনই পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে উঠতে পারছি না। এই ঈদেও খুব বেশি কাজ করছি না। যা করছি, তা নিয়ম মাফিক শেষ করব। ইদানীং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নাটক তৈরি হচ্ছে। পুরনোদের দলে আবার নতুন নতুন শিল্পীরাও যোগ হচ্ছে। তবে এখানে খুব বিশ্বস্ত লোকের খুব অভাব। তবে ভালো কাজ করার মধ্য দিয়েই টিকে থাকতে হবে এখানে। সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি। আমি একজন আদর্শ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আবারও আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই। স্বপ্নের জগতে হাঁটতে চাই।' শখ জানান, স্বপ্ন দেখতে খুব পছন্দ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই তার সংস্কৃতির ওপর আলাদা দুর্বলতা রয়েছে। তখন থেকেই তিনি ভাবতেন, একদিন নামকরা অভিনেত্রী হবেন। তার স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ করতে পেরেছেন। মডেলিং, অভিনয়, নৃত্য- এ তিন ক্ষেত্রেই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে তিনি সফল শিল্পীর পরিচয় দিয়েছেন। মাত্র চার-পাঁচ বছর বয়সে একা একাই নৃত্যচর্চা করতেন তিনি। নৃত্যের প্রতি মেয়ের প্রবল আগ্রহ দেখে বাবা তাকে বাড়ির পাশের একটি নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। খুব দ্রম্নত নাচের মুদ্রা আয়ত্ব করার কারণে অল্পদিনেই তিনি নৃত্যশিক্ষকদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেন। শখ বলেন, 'শৈশবে দক্ষ নৃত্যশিল্পী হওয়ার কথা ভাবতাম। এরপর জনপ্রিয় মডেল হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। এ দুই মাধ্যমেই আমি নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছি। অভিনয় অঙ্গনে এসেও দর্শকদের ভালোবাসা অর্জন করেছি। এক জীবনে এর চেয়ে বেশি কিছু আর আমার চাওয়ার নেই।' শখের মিডিয়া যাত্রা শুরু হয় শিশুশিল্পী হিসেবে। 'স্বাক্ষর' শিরোনামের একটি নাটকের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের খাতায় নাম লেখান তিনি। তারপর লম্বা বিরতির পর ২০০২ সালে 'অদ্ভুতুরে' নামক একটি ধারাবাহিকের মাধ্যমে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। তবে শখ রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন মূলত বাংলালিংক দেশ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। এক বিজ্ঞাপনের মাধ্যেমেই তারকা বনে যান শখ। এরপরের গল্পটা আরও সুন্দর। বিজ্ঞাপনে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর শখের 'এফএনএফ' একটি নাটকে পরিচালক রেদওয়ান রনি তাকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। অভিনয়ে রাজি হয়ে যান তিনি। এরপর 'ফিফটি ফিফটি', 'দিবা রাত্রি খোলা থেকো', 'রং', এবং 'কলেজ' নামে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা নেন। তিনি বাংলালিংকের বিজ্ঞাপন ছাড়াও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন সিটিসেল, বিডি গুঁড়া মসলা, ইউরো লেমন, তোশিন ফ্যান থেকে শুরু করে একাধিক বিজ্ঞাপনে। শখ বলেন, 'অভিনয়ের প্রতি দুর্বলতা ছিল। তাই কাজটি হাতছাড়া করতে চাইনি। তা ছাড়া নিজের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস ছিল আমি পারব। সেই থেকে শুরু।' 'আপাতত আমার সব ধ্যানজ্ঞান অভিনয়কে ঘিরেই।' বলছিলেন আনিকা কবির শখ। ছোটপর্দার এই অভিনেত্রী আরও বলেন, 'আসলে মিডিয়ায় ক্যারিয়ারটা শুরুটাই হয়েছিল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। তবে মনে প্রাণে অভিনয়টাই হৃদয়ে ধারণ করে চলার চেষ্টা করি। শুরু থেকে অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। সবার সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই অঙ্গন থেকে একবার সরে যেতে চাইলেও তা পারা যায় না। কেননা, এখানে সবার সঙ্গে তো অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমি সবার কাছে একজন ভালো মানুষ হয়ে থাকতে চাই।' \হছোটপর্দার পাশাপাশি শখ এ পর্যন্ত দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। সর্বপ্রথম তিনি এম বি মানিকের নির্দেশনায় 'বলো না তুমি আমার' ছবিতে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন শাকিব খান। এরপর তিনি সানিয়াৎ হোসেনের 'অল্প অল্প প্রেমের গল্প' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তার বিপরীতে ছিলেন মডেল-অভিনেতা নিলয়। ছবিটি বছর তিনেক আগে মুক্তি পায়। এ প্রসঙ্গে শখ বলেন, 'চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়েই মিড়িয়ায় এসেছিলাম। দুটি ছবিতে অভিনয় করেই দর্শকমহল থেকে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। গত এক বছরে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু চিত্রনাট্য ভালো না লাগায় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। তবে মানসম্পন্ন ছবি হলে অভিনয়ের বিষয়টি ভেবে দেখব।'