বিশ্ব সংগীতে নতুন ক্রেজ দুয়া লিপা

প্রকাশ | ২৫ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা ডেস্ক
দুয়া লিপা
দুয়া নামেই বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ছড়িয়েছে। পুরো নাম দুয়া লিপা। জন্ম ২২ আগস্ট, ১৯৯৫। লন্ডনে জন্ম নেয়া দুয়া লিপার ক্যারিয়ারের সূচনা মাত্র ১৪ বছর বয়সে। গায়িকা হিসেবে সাতটি একক গান নিয়ে তার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়। এ অ্যালবামের একটি গান 'বি দ্য ওয়ান' যুক্তরাজ্যের সেরা একক দশটি গানের মধ্যে জায়গা করে নেয়। ওই অ্যালবামের 'নিউ রুলস' পায় দেশটির 'নাম্বার ওয়ান সিঙ্গেল'-এর খ্যাতি। লিপার নিজস্ব স্টাইল-ই তরুণ সঙ্গীতপ্রেমীদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। নিজের প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম নিয়ে ইংলিশ গায়িকা দুয়া লিপার 'দুয়া লিপা ওয়ার্ল্ড টু্যর' অ্যালবামের 'নিউ রুলস' গানটি সারা বিশ্বে আলোচিত হয়। দুয়া লিপাই প্রথম নারী যিনি ব্রিট অ্যাওয়ার্ডে পাঁচটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে রেকর্ড গড়েছেন। লন্ডনে জন্ম নিলেও দুয়া লিপা আসলে আলবেনিয়ান। তার বাবা-মা নব্বইয়ের টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থায় কসোভো ছেড়ে চলে আসেন লন্ডনে। সেখানেই আরও দুই ভাই-বোনের সঙ্গে ছেলেবেলা কেটেছে লিপার। ২০০৮ সালে আবার পরিবারের সঙ্গে কসোভো ফেরার আগে কিছু সময় তিনি সিলভিয়া ইয়ং থিয়েটার স্কুলে পড়াশোনা করেন। তবে দুই বছরের মধ্যেই আবার লন্ডনে ফিরে আসেন। বাবা ডুকাজিন লিপাও রক গান করেন। ১৪ বছর বয়সে লিপা ইউটিউবে গান প্রকাশ করেন। গানগুলো অবশ্য তার নিজের ছিল না। লিপার উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। দারুণ মডেলিং করেন। ছোটবেলায় সবচেয়ে বেশি শুনেছেন ক্রিস্টিনা আগুইলেরার গান। চিপস পছন্দ করেন। নিজের স্মার্টফোনের ওয়ালপেপারে আছে সাগরের ঢেউ। লস অ্যাঞ্জেলেসের চেয়ে নিউইয়র্ক বেশি ভালো লাগে তার। কফি নয়, পছন্দ চা। ১৬ বছর বয়সে আবার লন্ডনে ফিরে আসেন। উদ্দেশ্য আর কিছুই না, গান নিয়ে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়া। লন্ডনে এসে নাইট ক্লাবের ওয়েট্রেসিং থেকে মডেলিং- কতকিছুই না করেছেন জীবিকার তাগিদে। গানের চর্চা চালিয়ে যেতে ভর্তি হন সিলভিয়া ইয়ং থিয়েটার স্কুলে। যেখানে পড়াশোনা করেছেন রিটা ওরা আর এমি ওয়াইনহাউসের মতো বিখ্যাত শিল্পীরা। এখানেই তিনি চোখে পড়েন লানা ডেল রয়ের ব্যবস্থাপক বেন মসনের। তিনি লিপাকে সপ্তাহে ৫ দিন একটি স্টুডিওতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। নিজের পরিচয় তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগেনি লিপার। ২০১৫ সালে যখন বয়স সবে বিশ তখনই ওয়ার্নার মিউজিক গ্রম্নপের সঙ্গে চুক্তি সই করেন। ওই বছরই প্রথম অ্যালবামের কাজ শুরু করেন। তার প্রথম গান 'নিউ লাভ'। এই গানটি গাইতে তাকে সহযোগিতা করেন আরেক পপ গায়িকা লানা ডেল রয়। এরপর একে একে 'বি দ্য লাভ', 'লাস্ট ড্যান্স', 'হটার দ্যান হেল'-এর মতো জনপ্রিয় গানগুলো শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। তার 'স্কেয়ারড টু বি লোনলি' গানটি শুধু স্পটিফাইতেই ৩০ কোটি বার শোনা হয়। দ্বিতীয় একক 'বি দ্য ওয়ান'। কাজটি সাড়া ফেলে পুরো ইউরোপে। লিপা নিজের গান গাইতে পছন্দ করেন। তার গানকে তিনি বলেন 'ডার্ক পপ'। এটি মূলত পপ আর হিপ-হপের মিশেল। লিপার প্রযোজক তার সম্পর্কে বলেন, মেয়েটা খুব খাটতে জানে। দারুণ পরিশ্রমী একজন গায়িকা লিপা। নিজের সবটুকু দিয়ে একটা গান ভালো করার চেষ্টা করে। ২০১৬ সালে লিপাকে নিয়ে আমেরিকার সঙ্গীত সাময়িকী 'দ্য ফেডার' একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে। যার নাম 'সি ইন বস্নু'। 'দুয়া লিপা' নামেই শিরোনাম করেছেন নিজের প্রথম অ্যালবাম। বাজারে আসার প্রথম সপ্তাহে এটি যুক্তরাজ্যে বিক্রি হয় সাড়ে ১৬ হাজার কপি। অ্যালবামের 'নিউ রুলস' গানটি এখনও সঙ্গীত ভক্তদের মাতিয়ে রেখেছে। বিখ্যাত গণমাধ্যম গার্ডিয়ান এ বলছে, দুয়া লিপার 'নিউ রুলস' সামার পপের একটি দারুণ সংমিশ্রণ। কী আছে গানটিতে- এমন প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজাসাপটা। গানের কথায় বাজে বয় ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে দূরে থাকার নিয়ম বলেছেন তিনি। গানের কথার প্রসঙ্গ টেনে লিপা বলেন, এসব নিয়ম বাধাধরা কিছু নয়। তবে কঠিন পরিস্থিতিতে এভাবেও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। প্রতিটি সম্পর্ক নিজস্ব কিছু নিয়মে তৈরি হয়। থাকে নিজস্ব বোঝাপড়া। বুনতে হয় নতুন ভাষা। মূলত পপ ঘরানার গান করেন তিনি। প্রথমে পিংক, নেলি ফারটাডো, ক্রিস্টিনা আগুইলেরার গানগুলো নিজের গলায় গেয়ে ইউটিউবে আপ করতেন। গানের নেশা যখন আরও বাড়ল, তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন ফিরবেন লন্ডনে। বাবার কাছ থেকেই গানের উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। যখন বাবা-মাকে ছেড়ে একা লন্ডনে এলেন, তখনও তারা সাহস জুগিয়েছেন। নিজের গান নিজেই লিখেন। তার গানের কথা যেমন সাহসী, নিজেও ঠিক তেমনই আত্মবিশ্বাসী। সঙ্গীত বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, পপ রাজ্য কি তবে দেখা পেল নতুন গানের রানীর। জীবনে বেঁচে থাকতে সবাইকে ছুটতে হয়। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে সাহস, আত্মবিশ্বাস আর স্পষ্টতা ছাড়া নিজের অস্তিত্ব তৈরি হয় না বলে মনে করেন লিপা। পরিশ্রম ছাড়া সাফল্য অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। তবে নিজস্বতাকে খুবই গুরুত্ব দেন দুয়া লিপা। আজকের ডিজিটাল তারুণ্যের কাছে আইকন হয়ে ওঠা লিপা এগিয়ে চলেছেন এভাবেই।