৪ আগস্ট বন্ধু দিবস

বন্ধুত্বের অটুট বন্ধনে ২০ বছর

'বন্ধু'। ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তি অনেক। কোনো কিছু দিয়েই এর পরিমাণ কিংবা পরিধি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কোনো সংজ্ঞাতেও একে বাঁধা যায় না। মনের সব অসঙ্কোচ প্রকাশের জায়গাতো ওই একটাই। কেউ বলে ছেলে-মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না। কেবলমাত্র ছোটবেলার স্কুলের ছেলেমেয়েদের মধ্যকার সম্পর্কই স্থায়ী বন্ধুত্বে রূপ নেয়। আবার অনেকে বলে, শোবিজ অঙ্গনের বন্ধুত্ব হচ্ছে দুধের মাছির মতো। তবে বৃত্তের বাইরেও জীবন থাকে। আমাদের এমন কয়েকজন তারকা রয়েছেন, যারা তাদের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব দিয়ে শক্ত একটা বন্ধন গড়ে তুলেছেন। আমাদের চলচ্চিত্রেও বন্ধুত্বের কিছু দৃষ্টান্ত রয়েছে। এমনই দুই বন্ধু হলেন মৌসুমী আর ফেরদৌস। আগামী ৪ আগস্ট বিশ্ব বন্ধু দিবস উপলক্ষে এই দুই তারকার বন্ধুত্ব নিয়ে লিখেছেন- জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ০১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মৌসুমী ও ফেরদৌস
চলচ্চিত্র পরিবারেরও সবাই জানেন মৌসুমী ও ফেরদৌসের বন্ধুত্ব কতটা গভীর এব নিবিড়। না, ছোটবেলা থেকে নয়, ছিল না কোনো পূর্ব পরিচয়। কেবলমাত্র চলচ্চিত্রে কাজ করতে করতেই তাদের মধ্যে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেখতে দেখতে ২০ বছর পূর্ণ হলো তাদের এই বন্ধুত্বের। মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে ফেরদৌস প্রথম অভিনয় করেন ১৯৯৯ সালে 'মিস ডায়না' ছবিতে। প্রথম কাজেই তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। তাদের এই বন্ধুত্ব কেবল দুজনের মধ্যেই সীমিত নেই। পারিবারিকভাবেও গড়িয়েছে এই বন্ধুত্ব। আলাপচারিতার শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়, তাদের দৃষ্টিতে বন্ধুত্ব মানে কি? বন্ধুত্বের কী সত্যি কোনো সংজ্ঞা আছে? বন্ধুত্ব মানে... প্রথম জবাব আসে মৌসুমীর কাছ থেকে, বললেন, 'বন্ধুত্বকে সংজ্ঞায় প্রকাশ করা কঠিন। কারণ শ্রেণি-পেশা-বয়স কোনো কিছু দিয়েই বন্ধুত্বকে বাঁধা যায় না। কখন কার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে বলা মুশকিল। বন্ধুত্বের মূল কথা, একে অন্যকে বুঝতে পারা আর পারস্পরিক সহমর্মিতা। বন্ধুত্ব আমি তাকেই বলব যেখানে কোনো স্বার্থ থাকে না। আজকাল হীনস্বার্থের কারণে মেকি বন্ধুত্বে ছড়াছড়ি দেখি চারপাশে। স্বার্থ ফুরালেই শেষ। একে আমি বন্ধুত্ব বলে মানতে পারিনি।' বন্ধুত্বের সংজ্ঞা ফেরদৌস বললেন কাব্যিকভাবে। তিনি বলেন, 'বন্ধু মানে খোলা জানালা বা মুক্ত আকাশ। যে জানালা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খেলা করে দখিন হওয়া। যে জানালায় দাঁড়ালে দেখা যায় বিশাল আকাশ। সহানুভূতি, সহমর্মিতা, একে অন্যকে বুঝতে, সুখে-দুখে পাশে থাকা সব মিলিয়েই বন্ধুত্ব।' চমৎকার বোঝাপড়া... \হফেরদৌস ও মৌসুমী জুটি বেঁধে কাজ করেছেন প্রায় ৩০টির মতো ছবিতে। প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর ফেরদৌস তার প্রথম ছবি 'এক কাপ চা'তে সবার আগে কাস্ট করেছেন বন্ধু মৌসুমীকে। এ প্রসঙ্গে ফেরদৌস বলেন, 'মৌসুমীর অভিনয় আমার সবসময় পছন্দ। চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলার দুর্লভ ক্ষমতা আছে তার। মৌসুমীর সঙ্গে অভিনয়টাও আমার দারুণ জমে। তার সঙ্গে এ পর্যন্ত যত কাজ করেছি তার সবই ছিল আমার কাছে উপভোগ্য। তাই প্রথম ছবি প্রযোজনা করতে গিয়ে সবার আগে বন্ধু মৌসুমীকেই বেছে নেই। ফেরদৌস প্রসঙ্গে মৌসুমী বললেন, 'ফেরদৌস আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। এই বন্ধুত্বটা গড়ে উঠে কাজ করতে গিয়েই। আমাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া চমৎকার। শুটিং অবসরের সময়টা ফেরদৌস হাসি-ঠাট্টায় দারুণ জমিয়ে রাখতে জানে। কাজের আনন্দটা টের পাওয়া যায় তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে। ফেরদৌসের সঙ্গে কোনো কাজের অফার এলে তাই সহজে তা আমি হাতছাড়া করি না।' মৌসুমী আরো বললেন, 'ফেরদৌসকে আমি আমার পরিবারেরই একজন বলে মনে করি। ওর যে কোনো বিষয়ে যেমন আমার সঙ্গে শেয়ার করে, আমিও তেমনি যে কোনো বিষয় ওর সঙ্গে শেয়ার করে থাকি। অনেক বিষয়েই আমরা একে অন্যের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। আমার পরিবারের সবাই ফেরদৌসকে পছন্দ করে।' কঠোর সমালোচকও বটে.. মৌসুমীকে নিয়ে ফেরদৌস বলেন, 'মৌসুমীর প্রতি আমার যেমন অধিকার আছে, তেমনি আছে দায়িত্বও। ওর ভালো-মন্দের কঠোর সমালোচক আমি। কোনো ছবিতে তাকে ভালো লাগেনি, সঙ্গে সঙ্গে আমি তা তাকে জানাতে পারি। মৌসুমীও আমার অভিনয়ের সমালোচনা করে। আমি যেমন তাকে ক্যারিয়ারের বিষয়ে নানা পরামর্শ দেই, তেমনি নানা বিষয়ে মৌসুমীও আমাকে পরামর্শ নিয়ে থাকে। আসলে এই তো বন্ধুত্ব।' মৌসুমী আর ফেরদৌস বর্তমানে একসঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় না করলেও বড় বড় স্টেজ শোতে দেখা যায় তারা দুই বন্ধু মিলে পারফর্ম করছেন। অনেক অনুষ্ঠানেও এই দুই বন্ধু পাশাপাশি উপস্থাপনাও করেছেন। জুটিতে দুটিতে... তারা কেবল সফল বন্ধুই নন, চলচ্চিত্রের সফল জুটি বলা যায়। শুরুটা ভালো না হলেও অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবি উপহার দিয়েছেন ফেরদৌস আর মৌসুমী। শুরু থেকেই শুরু করা যাক। তখন ১৯৯৯ সালের মাঝামাঝি। বাদল খন্দকার পরিচালিত নায়িকাপ্রধান ছবি 'মিস ডায়না'য় জুটিবদ্ধ হয়ে প্রথম অভিনয় করেন মৌসুমী ও ফেরদৌস। এ ছবিতে মৌসুমীর স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেন ফেরদৌস। নির্যাতনের শিকার এক অসহায় নারী থেকে প্রতিবাদী 'মিস ডায়না'য় রূপান্তরের গল্প 'মিস ডায়না'। ব্যবসায়িকভাবে ছবিটি সফলতা পায়নি। কিন্তু এ ছবি থেকে আরম্ভ হয় মৌসুমী ও ফেরদৌসের পথচলা। যা এ বছর দুই দশক পূর্ণ করলো। গত বিশ বছরে একসঙ্গে প্রায় অর্ধশত ছবিতে অভিনয় করেছেন মৌসুমী ও ফেরদৌস। এই দুই তারকা যখন জুটি বাঁধেন তখন মান্নার সঙ্গেই ছিল মৌসুমীর গাঢ় বন্ধন। দর্শক মান্না-মৌসুমী জুটিকে পছন্দও করতেন। মান্না অন্যান্য নায়িকার সঙ্গেও চুটিয়ে অভিনয় করতেন। মৌসুমীর ছিল নায়ক সংকট। তার সঙ্গে মেলানোর মতো নায়ক ছিল কম। এ সময়ই নির্মাতাদের নজরে পড়েন মৌসুমী- ফেরদৌস। নাচ-গান-অ্যাকশনসমৃদ্ধ ছবির মধ্য দিয়েই এই জুটির যাত্রা শুরু। কিন্তু ধীরে ধীরে ফর্মুলা ছবির পাশাপাশি মৌসুমী-ফেরদৌস ভিন্নধারার ছবির অনবদ্য জুটিতে পরিণত হোন। এ ধারার ছবির মধ্যে রয়েছে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত 'ধ্রম্নবতারা', মুশফিকুর রহমান গুলজার পরিচালিত 'বিন্দুর ছেলে' ইত্যাদি। মৌসুমীর নিজের পরিচালনায় প্রথম ছবি 'কখনো মেঘ কখনো আকাশ' এবং 'মেহেরনেগারে'ও অভিনয় করেন ফেরদৌস। নায়কের প্রথম প্রযোজনা 'এক কাপ চা'য়ে আবার অভিনয় করেছেন মৌসুমী। 'খায়রুন সুন্দরী' ও অন্যান্য... এই জুটির জনপ্রিয়তা শুরু বাণিজ্যিক ঘরানার ছবি, গানের ছবি, মাটির ছবি 'খায়রুন সুন্দরী'র অভাবনীয় সাফল্যের পর থেকে। হারিয়ে যাওয়া ফোকধর্মী ছবির পুনর্জন্ম দেন ফেরদৌস-মৌসুমী 'খায়রুন সুন্দরী'তে। বছরের সেরা ব্যবসাসফল ছবিই শুধু 'খায়রুন সুন্দরী'র অর্জন নয়, নোংরা ছবির ভিড়ে নারী দর্শকদের হলমুখী করে মৌসুমী-ফেরদৌস জুটি অবদান রাখেন ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসেও। 'খায়রুন সুন্দরী' সুপারহিট হওয়ার পর এই জুটি অনেকগুলো ফোকধর্মী ছবিতে অভিনয় করেন। কিন্তু কোনোটিই রেকর্ড ভাঙতে পারেনি। 'বাংলার বউ', 'গোলাপজান', 'দজ্জাল শাশুড়ি', 'ময়নামতির সংসার', 'সোনার ময়না পাখি', 'ওরে সাম্পানওয়ালা' ইত্যাদি ফোক ছবিতে মৌসুমী- ফেরদৌসকে পরপর অভিনয় করতে দেখা যায়। সামাজিক রোমান্টিক ছবিতেও এই জুটি ছিলেন ব্যস্ত। 'বধূবরণ', 'তুই যদি আমার হইতিরে', 'কুসুম কুসুম প্রেম', 'কিছু আশা কিছু ভালোবাসা' ইত্যাদি ছবিতে মৌসুমী-ফেরদৌস দর্শকদের দেখা দেন। সর্বশেষ গত বছর এই জুটিকে দুটি ছবিতে দেখা গেছে। একটি 'খায়রুন সুন্দরী'র নির্মাতা এ কে সোহেল পরিচালিত 'পবিত্র ভালোবাসা' এবং অপরটি নবীন নির্মাতা দিলশাদুল হক শিমুল পরিচালিত 'লিডার'। এখনো মৌসুমী-ফেরদৌস জুটি আছেন নির্মাতাদের ভাবনায়।