'ভালো লাগার মতো গান খুব কম হচ্ছে'

একটা সময়ে নিয়মিত গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা ডলি সায়ন্তনী। দীর্ঘ বিরতি শেষে মাস তিনেক আগে বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবরের সঙ্গে মিলে ভালোবাসি তোকে শিরোনামে নতুন গান ও গানের ভিডিও প্রকাশ করেন ডলি। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে নতুন একটি গান। আগামী সপ্তাহে আরও একটি গান প্রকাশ পাবে। গানে ফেরা না ফেরা ও গানের নানা বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান।
ডলি সায়ন্তনী
নতুন গান... ২২ আগস্ট জন্মদিন উপলক্ষে একটি গান প্রকাশিত হয়েছে ইউটিউবে। 'তুমি বড় সুখে আছ' গানটির কথা ও সুর করেছেন জাহাঙ্গীর রানা। সঙ্গীত আয়োজন করেছেন আকাশ। এর মিউজিক ভিডিও করেছেন আকাশের ভাই আশিক। প্রকাশের পর থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আরেকটি গান প্রকাশ হবে। 'দেখলে তোমায় লাগে ভালো' শিরোনামের গানটির কথা লিখেছেন ইমন লিটন এবং সুর করেছেন জাহাঙ্গীর রানা। সঙ্গীত আয়োজন করেছেন আকাশ। ভিডিও আশিকের। দুটি গানেই আমার উপস্থিতি রয়েছে। গানে অনিয়মিত... নানা কারণে গানে অনিয়মিত ছিলাম দীর্ঘদিন। আগে গানের যে পরিবেশ ছিল এখন তা নেই। ঘরে ঘরে স্টুডিও, জনে জনে শিল্পী। অনেকেই এক গানেই ভাইরাল হচ্ছে। সম্মান ও শ্রোদ্ধাবোধ যেমন হারিয়ে গেছে। গানের প্রতি ভালোবাসা ও সাধনাও কমে গেছে। এখন প্রায় জনেই নিজেকে প্রচারের জন্য ব্যস্ত থাকে। তারপরেও যেহেতু গানের মানুষ, তাই চাইলেও গানকে ছাড়তে পারিনি। অসখ্য ভক্তদের ভালোবাসা আমাকে গান ছাড়তে দেয়নি। ভক্তদের ভালোবাসা... ফারুক নামে আমার এক ভক্ত আছেন, যিনি আমার প্রায় সব গানের খবর রাখেন। আমি নিজেও হয়তো ততটা জানিনা; তিনি যতটা জানেন। মিলু ভাইয়ের সঙ্গে গাওয়া 'কবিতা' শিরোনামের একটি গান ফেনপেজে দিয়েছেন। আমার কিন্তু মনে নেই, এটা আমার গান। আমি তাকে জিজ্ঞেস করাতে তিনি বললেন, 'আপনার প্রায় সব গান সম্পর্কে আমার ধারণা আছে। আপনার এত গান আমার কাছে আছে যা আপনি নিজেও জানেন না।' ও আমার গানগুলো সংগ্রহ করছে। ছেলেটা যা করছে তা আমার করা দরকার ছিল। এ ছাড়া এখনো মঞ্চে উঠলে আগের মতো দর্শকদের ব্যাপক সাড়া পাই। আমি অবাক হয়ে যাই। তাদের ভালোবাসার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। নতুন উদ্যোগ... আমার গানগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছি। জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবছি। ইতোমধ্যে ১০টি গান নতুন সঙ্গীতায়োজনে প্রকাশের উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। বেশ কিছুদিন আগেই এর কাজ শুরু হয়েছে। গানগুলো একটি একটি করে ভিডিওতে প্রকাশ পাবে। মিউজিক ভিডিও... এক সময় গান প্রকাশ হতো অ্যালবামে। বছরে একটি কিংবা দুটি ক্যাসেট নিয়ে সারা বছর ব্যস্ত থাকতে হতো। তখন একটি গানের ক্যাসেট বাজারে আসা মানে একজন কণ্ঠশিল্পীর জন্য অনেক কিছু। কোম্পানিগুলোও সারা বছর ব্যস্ত থাকতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছু। পরিবেশের পাশাপাশি বদলে গেছে গান প্রকাশের ধরন এবং মাধ্যম। ৮/১০টি গান নিয়ে এখন অ্যালবাম প্রকাশ হয় না। একক গান প্রকাশ পায় ইউটিউবে। এখন গান শোনার সঙ্গে সঙ্গে দেখারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিউজিক ভিডিও, ইউটিউবের গুরুত্ব আছে তবে যাচ্ছেতাই হলে চলবে না। নিজে নিজে গান করে ইউটিউবে ছেড়ে দিচ্ছে আর তাতে প্রচুর ভিউ হচ্ছে। এতে পরিতৃপ্ত হচ্ছে ওই শিল্পী। কিন্তু আসলে কি সে শিল্পী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলছে? পুরনো গানের নতুন বাজার... এখন খুব কম গানই স্থায়িত্ব পাচ্ছে। পুরনো গানগুলো এখনো জনপ্রিয় হয়ে আছে। আগের গানে মাদকতা ছিল। কথা, সুর মিলে শিল্পীর কণ্ঠে দারুণ শোভা পেত। সব শ্রেণির শ্রোতাদের কাছে এসব গান গ্রহণযোগ্য। এখন বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও আগের গান ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেক সময় পুরনো গানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। আগের গানগুলোকে নতুন করে সংগীতায়োজন করা যেতে পারে তবে তার মৌলিকত্ব রাখতে হবে। মৌলিকত্ব বাদ দিয়ে কথার পরিবর্তন করা অন্যায়। যেমন হচ্ছে এখনকার গান... ভালোলাগার মতো গান খুব কম হচ্ছে। গান নিয়ে তেমন একটা ভাবা হচ্ছে না। খুব দ্রম্নত গান প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা গানের পেছনে সময় ব্যয় করেছি। গীতিকার, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা প্রতি নিয়ত গান নিয়ে বসেছি। গানের কথা ও সুর নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণের পর শিল্পীর কণ্ঠে উঠতো। সবার প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর গান তৈরি হতো। সে জন্যই তখনকার গানগুলো এত জনপ্রিয় হয়ে কালজয়ী হয়ে আছে। কেউ একটি গান লিখলে তা দেখতাম, সুর করলে সবাই বলতাম দেখি কেমন হয়েছে, আবার শিল্পীর কণ্ঠে গানটি শুনতাম কেমন লাগছে। আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। এখন কমার্শিয়াল চিন্তাটাই বেশি। শিল্প হওয়া সহজ নয়... এখনকার মতো সহজেই শিল্পী হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। মিল্টন খন্দকারের কথা ও সুরে আমার প্রথম একক অ্যালবাম 'হে যুবক' বাজারে আসে। এ জন্য নিজেকে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। তখন বিটিভিতে 'গীতি বিচিত্রা' নামে একটি গানের অনুষ্ঠান হতো। এটি প্রযোজনা করতেন ফিরোজ মাহমুদ। এই অনুষ্ঠানে যার গান প্রচার হতো তার পরের দিন সে হিট হয়ে যেত। এই অনুষ্ঠানে গান করা সৌভাগ্যের বিষয় ছিল। এই অনুষ্ঠানের জন্য মিল্টন খন্দকার আমার গানগুলো ফিরোজ মাহমুদকে দেন। মিল্টন খন্দকার তখন বিটিভির মেকাপম্যান ছিলেন। কারো গান শুনে যদি পছন্দ হতো তবে সঙ্গে সঙ্গে ফিরোজ ভাই তাকে ডাকতেন। আমার অ্যালবামের গানগুলো থেকে তার 'এক জনমে ভরবে না মন ভালোবাসার' গানটি তার পছন্দ হয়। এটির জন্য আমায় ডেকেছিলেন। কিন্তু আমরা ভেবেছিলাম 'রংচটা' গানটি তার পছন্দ হবে। এটি তখন খুব জনপ্রিয় গান ছিল। তারা মেলা: চলচ্চিত্রের গানে... ডলি সায়ন্তনী: সর্বশেষ চলচ্চিত্রে গান করেছিলাম ৫/৬ বছর আগে। শফিক তুহিনের সংগীতায়োজনে কিশোরের সঙ্গে। তবে গানটির কথা ও সিনেমার নাম মনে পড়ছে না। এক সময় সিনেমায় প্রচুর গান করলেও এখন করা হয় না।