রহস্যেরও অপমৃতু্য!

প্রকাশ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সালমান শাহ
তারার মেলা রিপোর্ট সালমান শাহ। এ দেশের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় একটি তারকার নাম। আজ থেকে প্রায় ২৩ বছর আগে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিরবিদায় নেন তিনি। তবে এখনো বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি তার আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তায়। চরিত্র রূপায়ণে সাবলীলতা ও নৈপুণ্য এবং কেতাদুরস্ত মনোভাবের সমন্বয়ে সময়কে ছাপিয়ে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তার চোখ, মুখ, চুলের ছাঁট আবহমান সুদর্শন পুরুষের সৌন্দর্যের প্রতীক। সিনেমাপ্রেমী দর্শক হৃদয়ে এখনো অমর হয়ে আছেন বাংলাদেশের সিনেমার 'ওয়ান্ডার বয়'খ্যাত সালমান শাহ। মহানায়ক বলেও বিবেচনা করা হয় তাকে। তার অগণিত ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। সালমানের অনেক ভক্ত শোক সহ্য করতে না পেরে আত্মাহুতির পথও বেছে নিয়েছিল। ধস নেমেছিল চলচ্চিত্রে। আগামীকাল তার মৃতু্যবার্ষিকী। যদিও বছর জুড়েই চলচ্চিত্র মহলে আলোচনায় থাকেন সালমান, তারপরও সালমানের মৃতু্যবার্ষিকী নিয়ে ভক্ত ও চলচ্চিত্র পরিবারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি সালমান শাহর মৃতু্যর প্রকৃত রহস্য জানতে চান। কিন্তু তার মৃতু্যর রহস্য এখনও যেন রহস্যই রয়ে গেছে। আজো নতুন কোনো শিল্পীর কথা উঠলেই স্বাভাবিকভাবেই উদাহরণ হিসেবে চলে আসে সালমান শাহর নাম। তবে তার মৃতু্য এখনো এক বিরাট রহস্য। হত্যা নাকি আত্মহত্যা- এর পরিষ্কার জবাব মেলেনি এখনো। মৃতু্যর কয়েক বছর পর সালমানের মা নীলা চৌধুরী সালমান শাহ হত্যা মামলাটি আবার তদন্ত করে দেখতে আদালতের স্মরণাপন্ন হন। কিন্তু শেষমেষ প্রয়াত এই নায়কের মৃতু্যর ঘটনায় করা মামলায় পুনঃতদন্ত করতে পারবে নার্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব)। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ঢাকার বিশেষ জজ-৬ এর বিচারক ইমরুল কায়েস এ রায় দেন। এর আগে মামলাটির্ যাবকে তদন্ত করতে দেয়ার আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৯ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা দায়ের করে। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি মঞ্জুর করে মামলাটি পুনঃতদন্তর্ যাব করতে পারবে না বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃতু্যর মামলা করেন তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃতু্যর মামলার সঙ্গে হত্যাকান্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহর মৃতু্যর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃতু্যকে আত্মহত্যা বলে উলেস্নখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান আদালত। এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। এদিকে রায়ের পর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়ে দুই সপ্তাহ আগে তার নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। স্ট্যাটাসে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী লিখেছিলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, 'এই কোর্টেও সমঝোতা হয়ে গেছে। ন্যায়বিচার না করে জজ সাহেব বলছেন, দুই পক্ষকে খুশি করার জন্য এই রায় দিলাম। কিন্তু এখানে দুই পক্ষকে খুশি করার ব্যাপার ছিল না। বিষয়টা ছিল ন্যায় ও অন্যায়ের। ন্যায়বিচারের রায় হওয়াটা উচিত ছিল। সবাই পেট ভরে খেয়েছে। আলহামদুলিলস্নাহ, দুনিয়াতে খাবারের শেষ নেই। কিন্তু আখিরাতে এই খাবারের হিসাব দিতে হবে। প্রিয় দেশবাসী আপনারা জেনে রাখুন সালমান শাহর মৃতু্য নিয়ে লীলাখেলা চলছে। কিন্তু আমি এই হত্যার প্রকৃত বিচার চাই। যতদিন বেঁচে থাকব, লড়ে যাব। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।'