কেমন হলো শ্রদ্ধা কাপুরের 'ছিছোরে'!

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শ্রদ্ধা কাপুর
তারার মেলা ডেস্ক বেশিরভাগ ছাত্রদের জীবনের সঙ্গে হোস্টেল শব্দটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেখানে চলে রাতভর হই-হুলেস্নাড়, সারাদিন দুষ্টুমি আর পরীক্ষার আগের রাতে চলে দলে বলে পড়ার তোড়জোড়। এসবের মধ্যে কেউ হাঁটে উল্টো পথে। জীবনের মাহেন্দ্রক্ষণে এসে অনেকেই ঝিমিয়ে পড়ে হতাশায়। উঠে আসে সংবাদ শিরোনামে। যেমন, স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করায় আত্মহত্যা করেছে। সেই খবর নিয়ে কিছুদিন চলে তর্ক-বিতর্ক। তারপর আবারও শুরু হয় সেই ইঁদুর-দৌড় প্রতিযোগিতা। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, বাবা-মা কখনোই বুঝতে চান না, তার সন্তানের মধ্যে কখন অবসাদ ও পরীক্ষায় হেরে যাওয়ার ভয় বাসা বেঁধেছে। এ বিষয়টিই সবিস্তারে আলোকপাত করেছে শ্রদ্ধা কাপুর অভিনীত সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউড সিনেমা ছবি 'ছিছোরে'। এটি পরিচালনা করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি। হাল সময় বলিউডে এমন একটি ছবিরই প্রয়োজন ছিল, সেখানে কোনো রোমান্টিকতা নয়, সাধারণ মানুষের কাহিনি শোনাবে। সেই বিষয়টিকেই 'ছিছোরে' পরিচালক প্রাধান্য দিয়েছেন। মুক্তির তিন দিনের মাথায় ছবিটির নির্মাণ খরচ উঠে এসেছে। এখন বক্স-অফিসে ছবিটি দৌড়াচ্ছে লভ্যাংশ গুণতে। পরিচালক নীতেশ তিওয়ারি অত্যন্ত মেধার সঙ্গে ছবির প্রত্যেকটি চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ছবি শুরু হয় এমন এক ছাত্রকে দেখিয়ে যে তার জীবনের একমাত্র টার্গেট করেছে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এর ব্যত্যয় ঘটলে সবাই তাকে হেরো বলে ডাকবে। লজ্জায় মা-বাবার মাথাকাটা যাবে। কারণ ছাত্রটির মা-বাবা দুজনেই নামি-দামি স্কলার। তবে রেজাল্টের দিন নিজের ব্যর্থতাকে কীভাবে নেবে বুঝতে না পেরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে। একপর্যায় ছাত্রটিকে ধরে হাসপাতালে আনা হয়। তখন ডাক্তারের মুখ দিয়ে পরিচালক ছবির মূল বিষয়টি বের করে নিয়ে আসেন। ছাত্রটিকে দেখে ডাক্তার বলেন, 'ছেলেটি তখনই বাঁচবে যখন তার মধ্যে বাঁচার ইচ্ছেটা থাকবে।' এরপরই শুরু হয় ছবির মূল গল্প- যেখানে ছেলেটির অভিভাবক (সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও শ্রদ্ধা কাপুর) নিজের জীবনের সেই সময়কে মনে করতে থাকেন। নিজেদের কলেজ জীবনে নিজেরাই 'লুজার' নামে পরিচিত ছিলেন। নিজের কলেজ জীবনের সেই সব ছিছোরে বন্ধুদের আসতে বলেন তাদের ছেলের কাছে। কারণ, এই কাহিনি বলা শুরু হলে মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াইয়ের তাগিদ খুঁজে পাবে ছাত্রটি। শুরু হয় বাবা-মায়ের বন্ধুদের নিজের জীবনের কাহিনি। হেরো হয়েও কীভাবে জীবনের দৌড়ে টিকে থাকা যায় দেখানো হয় সে ফিরিস্তি। এই গল্প দর্শককে হাসাবে, কাঁদাবে, নতুন প্রজন্মকে বাঁচার তাগিদ যেমন দেখাবে, তেমনই প্রবীণদের নস্টালজিক করে তুলবে। এক কথায় অনবদ্য একটি দৃশ্যায়ন বলিউডের দর্শকের সামনে দাঁড় করিয়েছেন এ ছবির পরিচালক। এ বিষয় পরিচালক নীতিশ তিওয়ারি ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমি মনে করি এই ছবিটি দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছবিটি তাদের বিনোদন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিও বাতলে দেবে।' ছবির নামকরণ নিয়ে নীতিশ বলেন, 'অনেকেই ছাত্রজীবনে হোস্টেলে কাটিয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুষ্টুমি করেছেন। কেউ প্রথম দিকে তো কেউ কলেজের শেষের দিকে। এই দুষ্টুমিটা নিজেদের মনের মধ্যে থেকে গেছে জীবনের বিভিন্ন সময়ে। তাই আমার মনে হয়েছে এই 'ছিছোরে' নামটাই সেই হোস্টেল জীবনকে ব্যাখ্যা করবে।' যদিও প্রথম দিকে ছবিটির ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিল আর দশটা কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের দুষ্টমি, প্রেম, বন্ধুত্ব ও নস্টালজিয়া নিয়ে সিনেমাটি। তবে মুক্তির পর এসব ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। ছবি শেষ হতে হতে এক নির্মম সত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে দর্শক। এ বিষয় শ্রদ্ধা কাপুর বলেন, 'ছোট্ট ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকটি ছবি করার সুযোগ হয়েছে। তবে ছিছোরের মতো কোনো গল্পে আর কখনো সুযোগ হবে কিনা জানি না। এমন বাস্তবধর্মী সিনেমা বলিউডে খুব কম হয়। আমার মনে হয় 'ছিছোরে' ছবিটি নতুন প্রজন্মের দর্শককে জীবন সম্পর্কে নতুন দিশা দেবে। অনাবিল আনন্দের সঙ্গে সমাজের এক ভয়াবহ সত্যকে হাঁসির ছলেই পরিচালক বিষয়টি দেখিয়েছেন।' এদিকে ছিছোরেতে শ্রদ্ধার অনবদ্য অভিনয় তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সংযোজন হিসেবে দাবি করছেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা। গত মাসের ২৯ তারিখে শ্রদ্ধার আরেকটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। এক সপ্তাহ ব্যবধানে দুই ছবি নিয়ে কার্যতই উচ্ছ্বসিত শ্রদ্ধা কাপুর। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'এমনটি আগে কখনো হয়নি। তবে 'সাহো' ছিল বিগ বাজেটের ছবি। সেখানে একরকম শ্রদ্ধা। তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের ছবি 'ছিছোরে'তে আরেক শ্রদ্ধা। এত দ্রম্নত সময়ের মধ্যে দুইটি চমকপ্রদ চরিত্র নিয়ে দর্শকের মাঝে হাজির হতে পেরে সত্যিই সৌভাগ্যবান মনে করছি।'