আলোচনার নাম মৌসুমী

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মৌসুমী
মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পীদের নিয়ে গঠন করা ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। তফসিল অনুযায়ী ২ বছরের সময়সীমা থাকলেও বিগত নির্বাচনে চিত্রনায়ক শাকিব খান টানা ৪ বছর পর ক্ষমতা হস্তান্তর করলে নতুন করে নির্বাচিত হন সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান প্যানেল। কিন্তু এই কমিটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচন নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ উঠে কমিটির বিরুদ্ধে। কথা ছিল সমিতির বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে এলেই চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তিনি ফিরে আসার পর অনেক দিন চলে গেলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত নির্বাচনের ঘোষণা দেয়া হয়নি। তবে তিনি সভাপতি হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা নিয়ে শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অন্যদিকে শিল্পী সমিতির কর্মচারীরা সমিতির হিসাব-নিকাশ ঠিকঠাক করছেন। সবার মধ্যে এ নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও বর্তমান কমিটি চলছে শম্বুকগতিতে। ইতোমধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে মৌসুমী এবার সভাপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আর সভাপতি পদে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েই হুলস্থুল ফেলে দিলেন চিত্রনায়িকা মৌসুমী। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো নারী শিল্পী সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চলচ্চিত্র পাড়ায় এখন একটাই আলোচনা। আর এই আলোচনার নাম মৌসুমী। এ নিয়ে সাধারণ ভোটার ও শিল্পীদের মধ্যে চলছে নানা কথাবার্তা। সভাপতির পদে মৌসুমী কতটা সফল হবেন- এ নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের মনে। চলতি কমিটির নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মৌসুমী। নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তিনি পদত্যাগ করেন। শিল্পী সমিতির ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন নারী সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন। মৌসুমী বলেন, 'সবার অনুরোধেই প্রার্থী হতে যাচ্ছি। আমারও আগ্রহ ছিল। চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য আমি নতুন কিছু করতে চাই।' প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর মৌসুমীকে অভিনন্দন জানান বর্তমান কমিটির সহসভাপতি রিয়াজসহ অনেকেই। রিয়াজ বলেন, 'মৌসুমী চলচ্চিত্রে আছেন দীর্ঘদিন। মৌসুমীর প্যানেলে আমাদের মতো অনেকেই থাকবেন। আমরা বর্তমান কমিটির পরিবর্তনের পক্ষে।' সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন না হওয়া, কখনো কখনো কমিটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মতামত না নিয়ে কোনো কোনো নেতার একক সিদ্ধান্ত, আবার কোনো কোনো নেতার সমিতির কার্যালয়কে ব্যক্তিগত কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ আছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। এসব কারণে বর্তমান কমিটির বেশির ভাগ নেতাই নতুন নেতৃত্বের পক্ষে। তাই তারা সভাপতি হিসেবে সমর্থন দিচ্ছেন মৌসুমীকে। এই সারিতে শাকিব খান, অমিত হাসান থেকে বর্তমান কমিটিতে থাকা ফেরদৌস, পপি, পূর্ণিমারাও রয়েছেন। তারাও চাইছেন নেতৃত্বের পরিবর্তন। শাকিব খান গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'মৌসুমী নির্বাচন করবেন, ভালো কথা। তার জন্য আমার শুভকামনা। গত নির্বাচনেও আমি তাদের সমর্থন দিয়েছিলাম। এবারও আছি। পুরো প্যানেলটা ভালোভাবে যেন হয়। তাহলে শিল্পীদের জন্য ভালো কিছু হবে।' বিষয়টি নিয়ে মৌসুমী বলেন, 'আমার নিজের আগ্রহ আর সবার অনুরোধেই প্রার্থী হতে যাচ্ছি। এই জায়গাতে এসে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্রের শিল্পীদের জন্য কিছু করতে চাই। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠা পরিচালক রাজ্জাক আঙ্গেল আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই। তিনি থাকলে হয়তো তার দোয়া আর ভালোবাসা নিয়েই মাঠে নামতাম। এ ছাড়াও আরও বড় বড় গুণি শিল্পীদের কাছে যাব এবং তাদের আশীর্বাদ নিয়েই মাঠে নেমে প্রচারণার কাজ শুরু করব। আমার নির্বাচনের খবরে ইতোমধ্যে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন আমাকে। তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার বিশ্বাস, অতীতে যারা আমার সঙ্গে ছিলেন এবং নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন, এবারও তাদের পাশে পাব। এ ছাড়া অনেক সাধারণ ভোটারদেরও আহ্বান করব, আসুন সবাই মিলে আমরা আমাদের শিল্পী সমিতিকে নতুন একটি রূপদান করি।' এদিকে এরই মধ্যে জমতে শুরু করেছে নির্বাচনী মাঠ। অনেক ভোটারই মৌসুমীকে সাধুবাদ জানালেও কেউ কেউ আবার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন। এ নিয়ে একজন শিল্পী সমিতির ভোটার জানান, 'গতবার আমাদের ভোটে তাকে সহসভাপতি পদে নির্বাচিত করেছিলাম। কিন্তু তিনি তার স্বামীর ওপর ভর দিয়ে আর এখান থেকে পদত্যাগ করে নিজেরাই একটি সংগঠন তৈরি করলেন। আমরা আগেই বুঝে নিয়েছিলাম সেই সংগঠন থাকবে না। যদিও পরবর্তী সময়ে সেটাই হয়েছে। একজন অভিনেত্রী চলচ্চিত্রকে হৃদয়ে লালিত করে অন্য একটি সংগঠন কিভাবে তৈরি করে আসলে তা আমাদের জানা নেই। তারপরও চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় তাকে জানাই অভিনন্দন।' আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র শিল্পী বর্তমান পদে থাকা সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, 'অনেকই বলছেন, নির্বাচনের দেরি হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমি ছুটিতে দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আমি এসেই সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি। সবাইকে নিয়ে আগামী ৪ অক্টোবর বর্তমান সময়ের নির্বাচিতদের একটি জেনারেল মিটিংয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করব। এরপর নিয়ম অনুযায়ী আগামী মাসের ১৮ তারিখের দিকে নির্বাচন হবে। আমরা শিল্পীদের জন্য কি করেছি তা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছেন। যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আমি চাইব- আমরা যেন চলচ্চিত্র শিল্পীদের জন্য কিছু করে যেত পারি।