ফিরতে চাই লাইট-ক্যামেরার দুনিয়ায়

এটিএম শামসুজ্জামান। একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য এ অভিনেতা দীর্ঘদিন পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় ভুগে টানা চার মাসেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। দুই মাস রাজধানীর পুরনো ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে এবং পরবর্তী সময়ে রাজধানীর শাহবাগের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়। আজগর আলী থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আসার পর তার বড় একটি অপারেশন হয়। তার পরপরই এটিএম শামসুজ্জামান ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। বর্তমানে তিনি বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। হাঁটা-চলায় কিছুটা সমস্যা হলেও কথা বলতে পারছেন স্বাভাবিকভাবে। রোববার বিকালে তার বসুন্ধরার বাসায় তারারমেলার সঙ্গে প্রাণবন্ত এক আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি। লিখেছেন-জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এটিএম শামসুজ্জামান
দর্শকের ভালোবাসাতেই বেঁচে আছি... পূর্ব প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী বিকেল সাড়ে ৩টায় তারার মেলা হাজির হয় এ টি এম শামসুজ্জামানের বাসায়। তখন তিনি ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম ভাঙিয়ে দিলেন তার সহধর্মিণী। ঘুম থেকে উঠেই অকপটে কথা বলতে শুরু করেন এই তারকা। বলেন, 'আলস্নাহর রহমতে আমি এখন অনেকটাই সুস্থ। মহান আলস্নাহ চাইলে একজন মানুষকে হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখতে পারেন আবার এক সেকেন্ডের মধ্যে নিয়েও যেতে পারেন। কেবলমাত্র আলস্নাহর রহমত আর আমার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীদের ভালোবাসাতেই আমি সুস্থ হয়েছি। মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে, অসুস্থ না হলে বুঝতে পারতাম না।' বলতে বলতেই আবেগাপস্নুত হয়ে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এ সময় তার স্ত্রী রুনী জামান বলেন, 'কত মানুষ যে হাসপাতালে দেখা করতে এসেছেন তা বলে শেষ করতে পারব না। এমনকি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পরেও প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ দেখতে আসছেন। আজ এসেছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শবনম। তাকে পেয়ে অনেকটাই আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন তিনি। কথা বলেন প্রায় তিনঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।' শিল্পীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী... কথার ফাঁকে ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টানেন এ টি এম শামসুজ্জামান। তার চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিধাতার যেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘ আয়ু দেন, যাতে তাকে অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে অন্যরাও শিল্পীদের তার মতো যেন ভালোবাসেন। আজ বাংলাদেশ সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যতটা এগিয়েছে তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অবদান অন্যতম। কোথায় কে অসুস্থ হলো তিনিই সবার আগে খোঁজ নেন। শুধু আমি কেন তিনি সবারই খোঁজ নেন। তাই আমি তাকে উপাধি দিয়েছি শিল্পীবান্ধব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। অবশ্যই তার প্রতি আমি, আমার পরিবার কৃতজ্ঞ। আর যে মানুষটির কথা না বললেই নয়- তিনি হলেন, আমার সহধর্মিণী। আমার অসুস্থতার দীর্ঘ এই সময়ে তিনি যে কী অমানবিক কষ্ট করেছেন, তা আমি উপলব্ধি করেছি। তার জন্য মন থেকে অনেক অনেক দোয়া।' ইবাদত বন্দেগি আর বই পড়েই সময় কাটে... সারাক্ষণ অভিনয় নিয়ে মেতে থাকা চঞ্চল মনের এই মানুষটি এখন অভিনয় থেকে অনেক দূরে রয়েছেন। এই অবসর সময় কাটছে কিভাবে? জবাবে এ টি এম বলেন, ইবাদত বন্দেগি আর বই পড়েই বেশিরভাগ সময় কাটে। বই পড়ার অভ্যাস আমার দীর্ঘদিনের। কোরআন-হাদিসের বই, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যের বই। বিশেষ করে বিক্রম শেঠ এর 'সৎপাত্র' আমার অনেক পছন্দের। পাশাপাশি আমার বাসা ভর্তি বই। যে বই পড়তে চাই, আমার স্ত্রীকে বলি, সে এনে দেয়। আবার যারা দেখতে আসছেন, অনেকেই বই নিয়ে আসছেন। তাদের বইগুলোও পড়ছি। বন্ধু বুলবুল আহমেদের স্ত্রী ডেইজি আহমেদ চাচি অনেকগুলো বই উপহার দিয়েছেন। রামেন্দু মজুমদার ও ফেরদৌসী মজুমদার এসেছিলেন। তারাও বই উপহার দিয়েছেন। এক সময় প্রচুর কবিতা লিখতাম। অনেক সিনেমার গল্প লিখেছি। তবে এখন মাঝে মাঝে কবিতা লিখি।' কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই... সম্প্রতি এ টি এম শামসুজ্জামান অভিনীত নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত 'আলফা' চলচ্চিত্রটি অস্কারে পাঠানো হয়েছে। এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে চলচ্চিত্রটির অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীদের দেখা গেছে। এ বিষয়ে নির্মাতার পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে, এ টি এমের মেয়ে কোয়েল বললেন, 'না, আমরা কিছুই জানতাম না। পরেরদিন পত্র পত্রিকার মাধ্যমে জানলাম আলফা অস্কারে যাচ্ছে। বাবা তো যেতে পারতেন না, কিন্তু সৌজন্যমূলকভাবে বলার প্রয়োজন ছিল। শুধু তাই নয়, চলচ্চিত্রের অনেকেই অনেক কাছের মানুষ বাবার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেও দেখা করেননি। আলমগীর, শাকিব খান, সালাউদ্দিন লাভলু আসবেন আসবেন করেও আসেননি।' মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বিনয়ের সঙ্গে এ টি এম শামসুজ্জামান বলেন, 'আরে, এগুলো দোষের বিষয় না, সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ কিংবা ক্ষোভ নেই। এক জীবনে অনেক সম্মাননা পেয়েছি। একুশে পদক পেয়েছি, পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছি। আর কী! আর কোনো কিছু পাওয়ার নেই।' ফিরতে চাই লাইট-ক্যামেরার দুনিয়ায়... অভিনয়ে ফেরার জন্য যেন অস্থির হয়ে উঠেছেন এ টি এম শামুসুজ্জামান। মাঝে মাঝেই সেই অস্থিরতার ছাপ ফুটে ওঠে তার চোখে মুখে। বলেন, 'আমি অভিনয়ের মানুষ। অভিনয় না করতে পারার যন্ত্রণায় কুড়ে কুড়ে মরছি। আমি আবারও লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের জগতে ফিরতে চাই। আমি মনে করি, এখনও আমার সেরা অভিনয় করতে পারিনি। শ্রেষ্ঠ অভিনয়টা এখনো করা হয়নি। তবে এর জন্য অপেক্ষায় আছি। এতদিন পরিচালকরা আমাকে হনুমান বানিয়ে রেখেছে। অভিনয় করার সুযোগ দেয়নি। আগামীতেও অভিনয় করার সুযোগ দেবে কিনা সেটাও বলতে পারছি না। তবে আমি চাই ভালো অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মনে আজীবন বেঁচে থাকতে। এটাই আমার শেষ ইচ্ছে।'