তারার মেলার মুখোমুখি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

দুই বাংলার আলোচিত অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাই ছবির সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। সাগরিকা, আমি সেই মেয়ে, রাঙা বউসহ ঢালিউডের বেশ কয়েকটি হিট ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি। আগের মতো না হলেও মাঝে মধ্যেই তার দেখা মেলে ঢাকাই ছবিতে। তার সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি নায়ক আলমগীরের পরিচালনায় 'একটি সিনেমার গল্প'। সম্প্রতি নঈম ইমতেয়াজ নেয়ামুলের 'জ্যাম' ছবিতে কাজ করার জন্য আবার ঢাকায় এসেছেন তিনি। এফডিসিতে শুটিংয়ের ফাঁকে একসময় তারার মেলার সঙ্গে দীর্ঘ এক আড্ডায় বসেন ঋতুপর্ণা। বলেন, চলমান ব্যস্ততা এবং দুই বাংলার চলচ্চিত্র নিয়ে নানা কথা। লিখেছেন তারার মেলার প্রতিবেদক...

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
এই সময়ের ঢাকা... ঢাকাকে সবসময়ই আমার আপন মনে হয়। এর রাস্তাঘাট অনেকটাই আমার চেনা। সবকিছুই ঠিকঠাকই আছে মনে হচ্ছে। তবে চলচ্চিত্রের পরিবেশ অনেকটা বদলে গেছে। এখানে আগের মতো আর হইহলস্না নেই। চেনাজানা মানুষজনকেও কম দেখতে পাচ্ছি। বেশ কয়েকদিন ধরে ঢাকায় আছি। তবে বেশ কিছু নতুন মুখ দেখতে পাচ্ছি। এর আগে চিত্রনায়ক আলমগীর পরিচালিত 'একটি সিনেমার গল্প' ছবিতে কাজ করার সময়ও এফডিসি অনেক প্রাণবন্ত ছিল। সব কিছুরই ছোঁয়া আছে... এই চলচ্চিত্রে অনেকগুলো চরিত্র আছে। রাস্তা যখন জ্যাম হয়ে যায় তখন অনেক চরিত্র হয়ে যায়। সেখানে চার থেকে পাঁচটি চরিত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন পরিচালক। তার মধ্যে একটি চরিত্র হচ্ছে শুভ, একটি চরিত্র নিতা আর একটি চরিত্র হলো আমি নুসরাত। বর্তমান প্রেক্ষাপটেই গল্পটা তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে রোমান্টিক, স্যাড, অ্যাকশন- সব কিছুরই ছোঁয়া আছে এতে। এক চলচ্চিত্রেই দর্শক সব ধরনের স্বাদ পাবে। মোট কথা, মানুষের জীবনের সত্য কিছু ঘটে যাওয়া গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে 'জ্যাম'। দুই বাংলার মানুষ... আমি মূলত নিজেকে এপার-ওপার দুই বাংলার চলচ্চিত্রেরই মানুষ ভাবি। ঢাকা-কলকাতা আলাদা করে দেখি না। একজন শিল্পীর মূল লক্ষ্য হলো ভালো একটি চলচ্চিত্র। সেটি এপার আর ওপার হোক না কেন। আর তা ছাড়া এপারে অসংখ্য ছবিতে কাজ করেছি। এর মধ্যে মান্না ভাইয়ের সঙ্গে আমার একাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করা হয়েছে। তার অকাল মৃতু্যর পর মান্না ভাইয়ের স্ত্রী শেলী ভাবির ইচ্ছে ছিল আমি যেন আবার কৃতাঞ্জলি প্রোডাকশনের হয়ে কাজ করি। আমারও ইচ্ছে ছিল। দুজনের ইচ্ছের ফসলই হচ্ছে জ্যাম। মান্না ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে আমার একটি আত্মার মিল রয়েছে। একটি পারিবারিক বন্ধনের জায়গা থেকেই এই কাজটি আমার করা। আমি ঢাকায় এলে একবার হলেও মান্না ভাইয়ের বাসায় যাই। মান্না জন্মোৎসব নিয়ে... আমি 'জ্যাম' চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে এসে শেলী ভাবি ও কয়েকজন বিনোদন সাংবাদিকের কাছে শুনলাম আগামী এপ্রিলের ১৪ তারিখ মান্না ভাইয়ের 'জন্মোৎসব' পালন করা হবে। বিষয়টি আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। তার মতো একজন শিল্পীকে নিয়ে সেলিব্রেট করতে পারা সত্যি আনন্দের। তার প্রতিটি চলচ্চিত্র দেশের মানুষকে অনেক বিনোদন দিয়ে গেছেন এবং তার অভিনীত প্রতিটি ছবি অনেক ব্যবসায়িকভাবেও সফল করেছেন। তিনি তো এই ইন্ডাস্ট্রিজকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। তিনি তো আমাদের রিয়েল সুপারস্টার। আমার কাছে মনে হয়, তার ছবির মাধ্যমেই তো তাকে আমরা মনে রাখব। এটি তার ভালোবাসার একটি জায়গা ছিল। এটি যদি আমরা যত্ন করে তার অভিনীত প্রতিটি চলচ্চিত্র দর্শকের কাছে পৌঁছে দেই। চলচ্চিত্র যারা অনেক ভালোবাসেন, যারা মান্না ভাইকে অনেক ভালোবাসেন তারা অবশ্যই এই উদ্যোগ ভীষণভাবে গ্রহণ করবেন। সেটি হলে সব মান্নাভক্তের জন্য অনেক আনন্দের। আমিও অবশ্যই এই অনুষ্ঠানে থাকতে চাই। শুধু তাই নয়, আমার সঙ্গে মান্না ভাইয়ে একাধিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। অবশ্যই যেন আমাদের জুটির একটি চলচ্চিত্র সেখানে দেখানো হয়। আয়োজকদের কাছে আমার পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। অনেক স্মৃতি আছে..... বাংলাদেশে সব চলচ্চিত্রের মধ্যে প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্না ভাইয়ের সঙ্গে বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করা হয়েছে। অনেক অনেক মজার স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তিনি হয়তো আরও বেশি বেঁচে থাকলে ভালো কিছু চলচ্চিত্র উপহার দিতে পারত। তাকে নিয়ে আমার একটি স্মৃতি মনে পড়ছে, আগে এফডিসিতে প্রায় রাতেই শুটিং থাকতো। সেখানে রাত প্রায় ১টার দিকে একটি কান্নার দৃশ্যের জন্য চোখে গিস্নসারিন দেয়ার সময় মান্না ভাই পাশে এসে বলছিলেন একটি সংসার সচ্ছল রাখার জন্য কত কষ্টই না করছে মেয়েটি। আমি তার কথা শুনে শুটিংয়ের ভেতর হেসে দিয়ে বলেছিলাম 'আমি কি একাই নাকি! আপনিও তো।' একজন হিরো হিসেবে সে খুব কেয়ারিং ছিল। ভবিষ্যৎ নিয়ে... আমার খুব ভালো লাগছে, তাই আমি আবার বাংলাদেশে কাজ করছি। পরবর্তী সময়ে আরও কাজ করব আশা রাখি। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। আমি ইতোমধ্যে একটি হিন্দি ছবি শেষ করলাম। বম্বেতেও কাজ করছি। এ ছাড়াও কলকাতাতে 'আহারে' নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করলাম। চলচ্চিত্রটি ইতোমধ্যেই দর্শকদের মধ্যেই অনেক সাড়া ফেলেছে। এটার পর আমরা সিকু্যয়েল হিসেবে 'আহারে-২' নিয়ে ভাবছি। অন্যদিকে ড্যান্সের ওপর একটি চলচ্চিত্র করার ইচ্ছে রয়েছে। সেই চলচ্চিত্রটির পরিচালক আমি নিজেই থাকব। আমি যেহেতু একজন ড্যান্সার, সেই সুবাদে ভবিষ্যতে একটি ড্যান্সের স্কুল খোলার ইচ্ছা আছে। আমার পক্ষ থেকে সবার প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা রইল।