বাড়ছে নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র

বিশ্বের সব চলচ্চিত্রই মূলত নায়কনির্ভর। চলচ্চিত্রের সূচনালগ্ন থেকেই এমনটি দেখে আসছেন দর্শক। কালে-ভদ্রে দুয়েকটা নারী কিংবা নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র নির্মিত হতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে চলচ্চিত্রের ধারা। বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই হলিউডে বেড়েছে নারীকেন্দ্রিক সিনেমা নির্মাণের সংখ্যা। সেগুলো সুপার-ডুপার হিট ব্যবসাও করেছে। হলিউডের পাশাপাশি বলিউডেও চলছে এখন নারীকেন্দ্রিক সিনেমা নির্মাণের ধুম। থেমে নেই আমাদের ঢালিউডও। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি নায়িকানির্ভর সিনেমা প্রশংসিত হয়েছে ঢালিউডের। যত সময় যাচ্ছে ততই বাড়ছে এর সংখ্যা। লিখেছেন- জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
'বিউটি সার্কাস' চলচ্চিত্রে জয়া আহসান
একটা সময় চলচ্চিত্রের পোস্টারে দেখা যেত নায়কের বড় একটা ছবি। পাশে অন্যান্য অভিনয়শিল্পীদের ছবি। কিন্তু এখনকার পোস্টারের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। এখন দেখা যায় নায়িকাকে ফোকাস করেই বানানো হয়েছে পোস্টার। শুধু পোস্টারেই নয়, নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র ধীরে ধীরে বলিউড বক্স-অফিসে আলাদা জায়গা করে নিচ্ছে। একটি নারীর জীবন সিনেমার পর্দায় দেখা দারুণ রোমাঞ্চকর ব্যাপার। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের জীবন ট্যাবু কেন্দ্রিক। নারী বাধার পাহাড় পেরিয়ে সফল হচ্ছে, সংগ্রাম করতে করতে লড়ছে, হাসছে, কাঁদছে, নিজের জীবন নিয়ে ভাবছে- এটা দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র দর্শকের কাছে নতুনই বলা যায়। কারণ শুধু নারীর জীবনের সংগ্রামও সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে হাতে গোনা কিছু ভালো ছবি নির্মিত হয়েছে। এবং সেগুলো সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছেই নন্দিত। শুধু দর্শক হৃদয়ই জয় করেনি, এসব চলচ্চিত্র জিতে নিয়েছে অনেকগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারও। বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে নির্মিত হয়েছে বেশকিছু নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র। তবে সংখ্যার বিচারে তুলনামূলক অনেক কমই বলা যায়। কিন্তু যে কটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, সবগুলোই দর্শক ও সুধীমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। হুমায়ূন আহমদের উপন্যাস 'জনম জনম' অবলম্বনে আবু সাইয়ীদের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র 'নিরন্তর'। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন শাবনূর। তার চরিত্রের নাম তিথি। শাবনূরের ক্যারিয়ারে এই চলচ্চিত্রটি অনন্য হয়ে থাকবে আজীবন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মাননাসহ বাংলাদেশের হয়ে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করে চলচ্চিত্রটি। এরপর মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা 'মন ছুঁয়েছে মন'-তে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন শাবনূর। আলোচিত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর চলচ্চিত্র 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' এর রুবা চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করে আলোচনায় আসেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্রটিও বাংলাদেশের হয়ে অস্কারে প্রতিনিধিত্ব করে। সম্প্রতি আরও একটি নারীপ্রধান চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দূতি ছড়ান এই অভিনেত্রী। চলচ্চিত্রের নাম 'মায়াবতী'। অরুণ চৌধুরী পরিচালিত এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় গত মাসে। একটি যৌনপলস্নীর ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্রটি নির্মিত। অভিনেত্রী জয়া আহসানও একের পর এক নারীকেন্দ্রিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের প্রশংসায় ভাসছেন। সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান' ও পরিচালকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে নির্মিত নাসিরউদ্দিন ইউসুফের চলচ্চিত্র 'গেরিলা'তে ভিন্ন ধারার এক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ সময়কার গ্রামীণ ও শহুরের প্রেক্ষাপটে অপূর্ব সংমিশ্রণ এই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র বিলকিসের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। সরকারি অনুদানে নির্মিত অনন্য এই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রটি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ১১টি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার লাভ করে। এরপর দুই বাংলায় জয়া আহসান যতগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন, তার সবগুলোই নারীকেন্দ্রিক। প্রতিটি চলচ্চিত্রেই মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অচিরেই মুক্তি পাচ্ছে তার আরেকটি নতুন চলচ্চিত্র 'বিউটি সার্কাস'। এখানে একজন সার্কাস কর্মীর চরিত্রে দেখা যাবে জয়াকে। আরেক অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষও আলোচনায় আছেন 'সুতপার ঠিকানার মাধ্যমে। নারীপ্রধান এ চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। এটি পরিচালনা করেছেন প্রসূন রহমান। শুধু পুরস্কার অর্জন এবং সুধী মহলে প্রশংসাই নয়, বাণিজ্যিকভাবেও ব্যবসা সফল হয়েছে অনেক নারীপ্রধান চলচ্চিত্র। যার মধ্য প্রথমেই নাম আসে মাহিয়া মাহীর 'অগ্নি' ছবিটি। এই চলচ্চিত্রটির সাফল্যের পর নির্মিত হয় 'অগ্নি-টু। এতেও মূল চরিত্রে অভিনয় করেন মাহী। চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ােিত মুক্তি পাওয়া মাহী অভিনীত 'অন্ধকার জগত' চলচ্চিত্রটিতেও আলোচনায় আসে। এতে পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যায় তাকে। সদ্য মুক্তি পাওয়া মাহীর আরেক ছবি 'অবতার'। এ ছবিটিও নির্মিত হয়েছে একজন সংগ্রামী নারীর গল্প নিয়ে।