পুরনো গানই দর্শক পছন্দ করেন

সানিয়া সুলতানা লিজা। এক সময়ের আলোচিত কণ্ঠশিল্পী। ২০০৮ সালে 'ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ' প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে সবার নজর কাড়েন। তার সমসাময়িক অনেকেই পিছিয়ে থাকলেও তিনি গানকে আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেন। মেধা, যোগ্যতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে আজ সংগীতাঙ্গনে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছেন। গান ও সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে তারার মেলার সঙ্গে কথা বলেছেন এই সংগীতশিল্পী।

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
সানিয়া সুলতানা লিজা
তারার মেলা : অসুস্থ ছিলেন, অপারেশনও হয়েছিল। এখন কি অবস্থা? লিজা : বড় ধরনের কোনো অপারেশন নয়, ছোট একটা অপারেশন হয়েছিল। পিত্তে পাথর হয়েছিল। এখন আলস্নাহর রহমতে পরিপূর্ণ সুস্থ্য আছি। তারার মেলা : গানের কী খবর, কেমন ব্যস্ততা চলছে? লিজা : ব্যস্ততা ভালো যাচ্ছে। স্টেজ শোর পাশাপাশি টিভি প্রোগ্রামও করছি। সামনে শীতের মৌসুম থাকায় ধীরে ধীরে স্টেজ শোর ব্যস্ততা বাড়তেছে। আগামী ২৬ অক্টোবর ফেনী ও ২৯ অক্টোবর ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে স্টেজ শো করব। আরও কিছু স্টেজ শো নিয়ে কথা চলছে, কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। সম্প্রতি দুটি টিভি চ্যানেলের জন্য দুটি রেকর্ডিং প্রোগ্রাম করেছি। একটি চ্যানেল আইয়ের 'পালকি' অন্যটি বৈশাখী টিভির 'বৈশাখী সকালের গান'। এ ছাড়া টিভি লাইভ প্রোগ্রামও করছি। কয়েকদিন আগে মাছরাঙা ও এনটিভিতে লাইভ করেছি। তারার মেলা: কোন পস্নাটফর্মে গান করতে ভালো লাগে। লিজা: একেক জায়গার একেক অভিজ্ঞতা। স্টেজ, টিভি ও সিনেমা সবখানেই গান করতে ভালো লাগে। আমি গান ভালোবাসি তাই গান করাটাই আমার কাছে বড় বিষয়। তারার মেলা : এখন নতুন গান কি করছেন? লিজা : ধ্রম্নব মিউজিক স্টেশনের ব্যানারে নতুন একটি গান করেছি। 'অনেক কিছু' শিরোনামের গানটি লিখেছেন রবিউল ইসলাম জীবন। সুর করেছেন কলকাতার আকাশ সেন। সঙ্গীতায়োজন করেছেন সাজিদ সরকার। সেড রোমান্টিক ঘরানার গান। গানটি নিয়ে ৭ মিনিটের একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম তৈরি হয়েছে। এখানে চমৎকার একটা গল্প আছে। শিগগিরই ইউটিউবে এই মিউজিক্যাল ফিল্মটি অবমুক্ত করা হবে। গানটি করে অনেক ভালো লেগেছে। এ ছাড়া নিজের ইউটিউব চ্যানেলের জন্য চারটি গান করেছি। গানটি নিয়ে একটি মিউজিক্যাল ফিল্ম তৈরি হয়েছে। এখানে চমৎকার একটা গল্প আছে। শিগগিরই ইউটিউবে এই মিউজিক্যাল ফিল্মটি অবমুক্ত করা হবে। তারার মেলা : আপনার ইউটিউব চ্যানেলের খবর কি? লিজা : 'লিজা' নামে ২০১৫ সালে ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলাম কিন্তু সচল ছিল না। মূলত একবছর ধরে চ্যানেলটিতে গান প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার একলাখ ছাড়িয়ে গেছে। চ্যানেলটি নিয়ে ভালো কিছু করার পরিকল্পনা আছে। তারার মেলা : ইউটিউব নির্ভর গান ও শিল্পী নিয়ে আপনার মন্তব্য কি? লিজা : সময়ের পরিবর্তনে অনেক কিছুই নতুন আবিষ্কার হয়। ইউটিউব এ সময়ের নতুন আবিষ্কার। দিনদিন এর গুরুত্ব বাড়ছে। ইউটিউবে প্রকাশের জন্য শুধু গানই নয়, নাটকও তৈরি হচ্ছে। আগে অ্যালবামে গান প্রকাশ পেত, এখন ইউটিউবে প্রকাশ পায়। কিছু প্রতিভাবান শিল্পী আছেন তারা টিভি চ্যানেলে সুযোগ পায় না। ইউটিউবের কল্যাণে তারা নিজেদের মেধাকে প্রকাশ করতে পারছে। এটা খারাপ কিছু নয়। তবে ইউটিউবের ব্যবহারটা যথাযথ হতে হবে, মানসম্মত হতে হবে। অনেক ভালোভালো শিল্পীরাও ইউটিউবের জন্য গান করছেন। তারার মেলা : ইউটিউব-ফেসবুকের মাধ্যমে ভাইরাল শিল্পীর জন্ম নিয়ে কী বলবেন? লিজা : একজন শিল্পীর সাময়িক সময়ের জন্য জন্ম হয় না। মেধা, পরিশ্রম ও সাধনা করে শিল্পী হয়। এ জন্য অনেক সময়ও লাগে। গান সাধনার বিষয়। এটা রাতারাতি রপ্ত করে শিল্পী হওয়া সম্ভব নয়। হুট করে আসার মানেই হচ্ছে সাময়িক বা ক্ষণস্থায়ী। হঠাৎ করে কোনো কিছুই মঙ্গল বয়ে আনে না। হাওয়ায় যা আসে তা হাওয়াতেই উড়ে যায়। ভাইরাল শিল্পীদের মধ্যে কজনা টিকে আছেন? তারা কিন্তু অল্পতেই হারিয়ে গেছেন। তারার মেলা : অভিযোগ, নতুনরা রাতারাতি খ্যাতি পেতে চান! লিজা : সবার বেলায় না। নতুনরাও অনেক পরিশ্রমী। আগ্রহও প্রচুর। শিল্পী হওয়ার মনবাসনা নিয়ে অনেক নতুনরাই গানের সাধনা করে যাচ্ছেন। আগে গান প্রকাশের মাধ্যম কম ছিল, এখন অনেক মাধ্যম। অনেক টিভি চ্যানেল বেসরকারি রেডিও আছে বেশ কিছু। আগের তুলনায় এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। অন্যদিকে দর্শকদের একটি বিষয়ও থাকে। তাদের কাছে কারো কারো গান ভালো লাগে। ইউটিউবে ভিউয়ার্সের একটি বিষয় যেমন থাকে, অন্যদিকে শিল্পীর কিছু গুণও থাকে বলেই মানুষ তাকে পছন্দ করেন। লাখ টাকা খরচ করে তাকে আমন্ত্রণ করেন। তারার মেলা : দর্শক সাড়ার রহস্য কি বলে মনে হয়? লিজা : আসলে এটা বলা যায় না। দর্শক কখন কোন গান পছন্দ করেন তা বুঝা কঠিন। দেখা গেছে, খুব গুরুত্ব নিয়ে গান করেছি, সেটার ফলাফল ততটা ভালো আসেনি। আবার যে গানে তেমন গুরুত্ব দেইনি সেই গান থেকে অসম্ভব সাড়া পেয়েছি। তারার মেলা: পুরনো গান নতুন করে, আবার অশ্লীল কথার গানও হচ্ছে? লিজা: কথা ও সুর ঠিক রেখে নতুন কম্পজিশনে পুরনো গান নতুন করে হতে পারে। কিন্তু এমন কিছু করা ঠিক নয়- যা বেমানান। আবার কেউ কেউ গান না বুঝে এমন কিছু করছেন হয়তো সে মনে করে ভালো কিছু হচ্ছে। গান করার আগে তো গান বুঝতে হবে। আর গানে অশ্লীলতা এক সময় ছিল, এখন নেই। সিনেমার গল্পের কারণে হয়তো অশ্লীল কথার গান হয়। কিন্তু এখন সিনেমার পরিবেশ ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে, অশ্লীল কথার গানের পক্ষে আমি নই। তারার মেলা : আপনার কি মনে হয় সঙ্গীতাঙ্গন ভালো যাচ্ছে? লিজা : আমার মনে হয় ভালোই যাচ্ছে। এখন প্রচুর গান হচ্ছে। গানের শিল্পীও কম নয়। ভালো-মন্দ মিলিয়ে চলছে। আবার এটাও ঠিক অসংখ্য গানের ভিড়ে হয়তো ভালো কিছু গান হারিয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় গানের সময়টা খারাপ যাচ্ছে না। তারার মেলা : মৌলিক গানের কি অভাব? নাকি ইচ্ছে করেই পুরনো গানেরই চর্চা চলছে? লিজা : চর্চা করার জন্য অবশ্যই পুরনো গান গাইতে হবে। কিন্তু মৌলিক গানের অভাব নেই। প্রচুর মৌলিক গান হচ্ছে। এটা নির্ভর করবে শিল্পীর ওপর। সে কোন ধরনের গান গাইতে চায়। তবে পুরনো কিংবা কালজয়ী গান দর্শক পছন্দ করেন। দীর্ঘ সময়ের পরেই তো একটি গান কালজয়ী হয়ে ওঠে। এসব গান গাইতেও ভালো লাগে। এ সময়ের কিছু কিছু গানও এক সময় কালজয়ী হয়ে থাকবে। তারার মেলা : অনেকদিন ধরে পেস্নব্যাকে নেই কেন? লিজা : এ পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি সিনেমায় গান করেছি। সর্বশেষ দেবা শীষ বিশ্বাসের 'শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ-২' ছবিতে গান করেছিলাম ইমরানের সঙ্গে দ্বৈত কণ্ঠে। আসলে এখন তো সিনেমা কম তৈরি হচ্ছে তাই সিনেমায় গান করা হচ্ছে না।