পপি: কন্যা সাহসিকা

সাদিকা পারভিন পপি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ব্যতিক্রমী এক চিত্রনায়িকা। একজন পরিপূর্ণ নায়িকা হওয়ার যা যা গুণ থাকা প্রয়োজন- তার সবই আছে পপির মধ্যে। তার সমসাময়িক এমনকি জুনিয়র অনেক নায়িকাই বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন, পপি সেখানে আগের মতোই অবিচল। বয়স চলিস্নশ পেরুলেও আগের মতোই সৌন্দর্য ধরে রেখেছেন ক্যারিয়ার সচেতন এই নায়িকা। সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন নাটক, সিনেমা ওয়েব সিরিজ এবং বিজ্ঞাপনের কাজ। কেবল পর্দাতেই নয়, পর্দার বাইরেও সমান আলোচিত তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এ অভিনেত্রী। সোজা-সাপটা ও সত্য বলায় আপসহীন পপির লাইফস্টাইলও মুগ্ধ করে সবাইকে। এ কারণে অনেকেই তাকে অগ্নিকন্যা বলেও মন্তব্য করেন। সম্প্রতি শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে তার আগুন ছড়ানো সাহসী বক্তব্যে আবারও তার প্রমাণ পাওয়া গেল। শিল্পী সমিতির নির্বাচন, চলচ্চিত্রের চলমান অবস্থা ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যতিব্যস্ততা নিয়ে কথা বলেন পপি। প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন- মনিরুজ্জামান ও জাহাঙ্গীর বিপস্নব

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সাদিকা পারভিন পপি
সত্যটা মুখ ফসকে বলে ফেলি... শুরুতেই চলচ্চিত্র নির্বাচন প্রসঙ্গ। বিষয়টি তুলতেই কথা কেড়ে নিয়ে একটানা বলতে শুরু করেন পপি। বলেন, এটা নিয়ে জানাচ্ছি। নতুন কমিটিকে আমি স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু নবনির্বাচিত কমিটির কাছে আমার আকুল আবেদন তারা যেন শিল্পী সমিতিকে দালালমুক্ত রাখেন। কেউ যেন শিল্পীদের নিয়ে কোনো দালালি করার সুযোগ না পায়। 'নির্বাচিতরা হবে সকল শিল্পীর প্রতিনিধি। তাদের মাধ্যমে সব ধরনের শিল্পীর আশার সঞ্চার হবে। এখানে কে ছোট, বড়, ধনী, গরিব, দুস্থ এসব ভাবা যাবে না। শিল্পী শিল্পীই। এখন একজন শিল্পীকে আপনি সাহায্য করে সেটা আবার ফেসবুকে ছবিসহ পোস্ট করবেন তাহলে শিল্পীর কদরটা কোথায় গেল? আমি চাইব এসব বিষয় যেন পরিহার করা হয়। আমার কারও প্রতি রাগ বা ক্ষোভ নেই। সবাই আমার কাছে সমান। নির্বাচিতদের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। হয়তো আমি অপরাধ মানতে পারি না, সত্যটা মুখ ফসকে বলে ফেলি, এটা অনেকের কাছে সমস্যার কারণ হয়ে থাকতে পারে।' অনেক কিছুর সাক্ষী আমি... নির্বাচন নিয়ে পপি আরও বলেন, দুই দশক ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ইন্ডাস্ট্রির অনেক উত্থান-পতনের সাক্ষী আমি। কম সামর্থ্যবান অনেক শিল্পীর পরিবারের কারও বিয়ে, অসুস্থতা এসব মিলিয়ে বহু মানুষকে সাহায্য করেছি। কিন্তু কখনও শো-অফ করিনি। কাজের বাইরে অন্যকিছু নিয়ে প্রচারে আসতে চাইনি। এই ইন্ডাস্ট্রির মানুষের কাছে আমি লাখ লাখ টাকা পাব। তাদের থেকে কখনো প্রেসার দিয়ে টাকা নেইনি। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের তত্ত্বাবধানে বহু শো করেছি পুলিশ,র্ যাবের। বিভিন্ন অজুহাতে ওইসব শো-এর পারিশ্রমিক আমার কাছে আসেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সম্মান দেখিয়ে অন্যান্য কর্পোরেট শো থেকেও অনেক কম পারিশ্রমিক দেয়ার কথা থাকে। নামমাত্র যাতায়াত এবং ড্রেস ও নৃত্যশিল্পী যারা থাকে, তাদের খরচটাই শুধু দেয়ার কথা থাকে। কিন্তু এই টাকাগুলো জায়েদের তত্ত্বাবধানে থাকত। সে সবকিছু অ্যারেঞ্জ করত। সে সবের একটি টাকাও আমার হাতে আসেনি। আমি টাকা চাইলে জায়েদ একেক সময়, একেক টাল-বাহানা করত। বলত- পুলিশ, র?্যাব তাদের কাছে টাকা চাওয়া যায় না, আবার বলেছে পরে পৌঁছে দেবে। সেসব কোনোকিছুই আমার হাতে আসেনি। এসব টাকা জায়েদ কী করেছে আমার জানা নেই। এসব হাস্যকর অভিযোগ... কিন্তু জায়েদ খান বলছেন, সাবেক আইজিপির ফান্ড গঠন করতে উনি একাই খেটেছেন। এটাকে হাস্যকর মন্তব্য করে পপি বলেন, বিভিন্ন সময়ে সমিতির কাজে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছি। সেখান থেকে কি টাকা নিয়েছি? পুলিশের একজন সাবেক আইজিপির একটি ফান্ড কালেকশনের জন্য আমরা সবাই মিলে গিয়েছি, শো করেছি। সেখান থেকেও টাকা এসেছে, কিন্তু আমি কি পেয়েছি? থাক এসব নিয়ে আর নাই বা বলি! জায়েদ খানের চেহারা দেখে টাকা দেয়নি। সেখানে আমি, রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমা সবাই ছিলাম। উনি আমাদের সবাইকে দেখে টাকা দিয়েছেন। শুধু এটা নয়, সমিতির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেসব স্পন্সর আনা হতো সেগুলো আমাদের ফেস দেখেই দেয়া হতো। সবাই আমরা এসবের জন্য খেটেছি? এখানে কোনো একজন ব্যক্তিকে দেখে দেয়া হতো না। এত কাজ করলাম টাকা নিলাম না, আর অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য চ্যারিটি শো করে শুধু ৫০ হাজার টাকা নিলাম? এটা প্রাপ্ত সম্মানি হতে পারে? হয়তো তার অপকর্মের সহযোগী হচ্ছি না, তাই সে এখন উল্টাপাল্টা কথা বলছে। হাতে আমার অনেক কাজ... এবার আসা যাক চলমান ব্যস্ততায়। বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে পপি বলেন, 'কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছি। এ কারণে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারিনি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চলচ্চিত্রটির শুটিং শুরু হবে কক্সবাজারে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এর শুটিং হবে। আমি চরিত্রটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছি। অন্যদিকে 'ইয়েস ম্যাডাম' ছাড়াও কোনোটির শুটিং অর্ধেক শেষ হয়েছে, কোনোটির শুটিং সবে শুরু হয়েছে আবার কোনোটির শুটিং শেষ হয়ে এখন ডাবিং চলছে। 'সেভ লাইভ' নামের একটি সিনেমার শুটিং অনেকটাই শেষ। 'সাহসী যোদ্ধা' একটি সিনেমার শুটিং শেষের পথে। 'কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র' সিনেমার শুটিংও ইতিমধ্যে শেষ। চলচ্চিত্রের বাইরে ওয়েব সিরিজও করছি। বহুল আলোচিত 'ইন্দুবালা' ওয়েব সিরিজে। এছাড়া 'গার্ডেন গেম' ও 'ক্যান্ডেল লাইট' নামে দুটি ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছি। আসলে এ মাধ্যমটা বর্তমানে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বড় তারকারা ওয়েব সিরিজে কাজ করছেন। কাজের ক্ষেত্রটা ভালো থাকলে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করা মন্দ নয়। ইন্টারনেটভিত্তিক সবকিছুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে... একজন নামকরা নায়িকা হয়ে ওয়েব সিরিজে কেন অভিনয় করলেন? পপির জবাব, 'আমার মন্তব্য হলো, বাংলাদেশে এখন সিনেমার অবস্থা ভালো নয়। ব্যবসা মন্দা, প্রযোজক নেই। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সবকিছু মানুষের হাতের মুঠোয় পাওয়া যাচ্ছে। তাই ইন্টারনেটভিত্তিক সবকিছুর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সেই ভাবনা থেকেই ওয়েব সিরিজে কাজ করা। যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী এবং অভিনয় আমার পেশা, তাই গল্প, চরিত্র এবং বাজেট ঠিক থাকলে সিনেমা কিংবা ওয়েব সিরিজ যে কোনো মাধ্যমেই আমার কাজ করতে আপত্তি নেই। ডিজিটালের নামে সস্তা ছবি হচ্ছে... খুব সংকটাপন্ন অবস্থা বিরাজ করছে চলচ্চিত্রে। ছবি মেকিংয়ের সংখ্যাই কমে গেছে। ডিজিটালের নামে সস্তা ছবি নির্মাণ হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের পদক্ষেপ নেয়ার কিছু নেই। সরকার যদি পদক্ষেপ নেয় তাহলে কিছু করা সম্ভব। ক্রিকেট আমাদের জাতীয় খেলা না কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আজ বেশ জনপ্রিয়। প্রতিটি খেলোয়াড়ের নাম বাংলাদেশের ঘরে ঘরে সবাই জানে- চেনে। সরকার পদক্ষেপ নিলেই কেবল আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব।