উপস্থাপনায় দু্যতি ছড়াচ্ছেন নীল

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নীল হুরে-এ জাহান
তারার মেলা রিপোর্ট নাম তার নীল হুরে-এ জাহান। নামের মতোই ব্যতিক্রম তার হিসাব-নিকাশ। পোশাক-আশাক আর চলন-বলনেও নিজস্বতা বজায় রেখে চলেন সবসময়। আর দশজনের মতো জোয়ারে গা ভাসিয়ে চলতে মোটেও রাজি নন তিনি। মিডিয়ায় নেমে সবাই যেখানে একসঙ্গে অভিনয়, মডেলিং আর উপস্থাপনার মাধ্যমে অলরাউন্ডার বনে যান, নীল সেখানে কেবল উপস্থাপক হিসেবেই থাকতে চান। শুধুমাত্র উপস্থাপনা করেই যে আলোচনায় আসা যায়- তা যেন নতুন করে জানিয়ে দিলেন এই সুন্দরী। নীলের সৌন্দর্য, কথা বলার নান্দনিক ধরন এবং মিষ্টি হাসি, ভিন্ন ধরনের পোশাক- উপস্থাপনায় নীল নিজেই আলাদা একটি স্টাইল তৈরি করে নিয়েছেন তিনি। এ কারণেই উপস্থাপনায় রীতিমতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। একটি-দুটি নয়, বর্তমানে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে উপস্থাপনা করতে দেখা যাচ্ছে তাকে। অনেক দর্শকই নীলের উপস্থাপনা উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করেন। তাই বলে যে, তিনি অভিনয় করতে পারেন না, তা কিন্তু নয়। অভিনয়, নাচ, আবৃতি সবকিছুতেই পারদর্শী বিজ্ঞানের এই ছাত্রী। বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন চিত্রেরও মডেল হয়েছেন তিনি। মিডিয়ায় তার যাত্রা শুরু হয় অভিনয় দিয়েই। তিন বছর আগে নাটকের চিরসবুজ জুটি আফজাল হোসেন ও সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে বদরুল আনাম সৌদের পরিচালনায় 'অক্ষর থেকে উঠে আসা ভালোবাসা' নাটকে প্রথম অভিনয় করেছিলেন নীল। এরপরেও তিনি আরো দুটি নাটকে অভিনয় করে প্রশংসা পান। কিন্তু অভিনয়ে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য নন বলে নিজেকে উপস্থাপনাতেই ব্যস্ত করার নেশায় ছুটে চলেন। উপস্থাপনায় শুরুটা ছিল তার বাংলাভিশনে। এই চ্যানেলের টানা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি 'দিন প্রতিদিন' অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন। এরই মধ্যে আবার অনেক সিনেমাতেও অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পান তিনি। সিনেমার প্রধান নায়িকা হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েও শুধুমাত্র উপস্থাপনাতেই প্রতিষ্ঠিত করতে নীল নিজেকে ব্যস্ত করে তুলেছেন। এক সময় বাংলাভিশন থেকে নিজেকে বের করে দেশের বেশ ক'টি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কাজ শুরু করেন। শুরু করেন বিভিন্ন করপোরেট শো'র উপস্থাপনা। নীল বর্তমানে নিউজটোয়েন্টিফোরের 'ইটস অ্যামাজিং', গাজী টিভির দুটি স্পোর্টস শো, চ্যানেল নাইনের 'গস্ন্যামার জোনে'র নিয়মিত উপস্থাপনাসহ আরটিভির বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোর উপস্থাপনা করছেন। আরটিভিতে প্রচার চলতি রিয়েলিটি শো 'ক্যাম্পাস স্টারে'র উপস্থাপনা করছেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবেও বেশ প্রশংসিত নীল। আদনান আল রাজীবের নির্দেশনায় তিনি প্রথম এশিয়ান পেইন্টসে'র বিজ্ঞাপনে মডেল হন। এরপর তিনি সাবরিনা আইরিনের 'জিপি', মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর 'ক্লোজআপ কাছে আসার অসমাপ্ত গল্প', 'রুচি চানাচুর' রনি ভৌমিকের 'স্যামসাং মোবাইল', মেজাবাউর রহমান সুমনের 'ম্যাগি নুডুলসসহ আরো বেশকিছু বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করে দারুণ জনপ্রিয়তা পান। নীল হুর-এ জাহান বলেন, 'অভিনয়ের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা আছে আমার। প্রতিনিয়তই নাটক সিনেমাতে অভিনয়ের প্রস্তাব পাচ্ছি। কিন্তু আমার মনের একান্ত ভালোলাগা উপস্থাপনাকে ঘিরে। তাই নিজেকে একজন উপস্থাপক হিসেবেই আমি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। চাই সবার সহযোগিতা।' ফেনির কন্যা ফেনীর ছাগলনাইয়া একাডেমি থেকে এসএসসি পাস করেছেন নীল। এরপর ঢাকায় এসে ভর্তি হয়েছেন কুইন্স কলেজে। উচ্চমাধ্যমিক পেরোনোর পর তার ঠিকানা হয়েছে ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ)। সাংবাদিকতায় পড়ার ইচ্ছে ছিল হুর-এ জাহানের। মা-বাবার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে ভর্তি হন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগে। কিন্তু এই বিভাগে কিছুতেই মন টিকছিল না। অবশেষে বিভাগ পরিবর্তন করে থিতু হয়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে। নীল জানান, স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত বিতর্ক আর আবৃত্তি করতেন। নাচে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তবে স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে বড়রা নাচের মুদ্রা শিখিয়ে দিত। দেখে দেখে একটু একটু করে শিখেছেন তিনি। এরপর বাফায় ক্লাসিক্যাল। কিন্তু নিয়মিত চর্চা করা হচ্ছে না। কারণ ব্যস্ততা যে অন্য দিকে আরও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে নাচ, আবৃত্তি, উপস্থাপনা তো করেনই; ক্লাবের ছোট ভাইবোনদের প্রশিক্ষণও দেন হুর-এ জাহান। শেখানর্ যাম্পের হাঁটাচলা। মঞ্চের সাজসজ্জা তদারকির ভার থাকে তার ওপর। চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন ক্লাব থেকে। মাঝে মাঝে কর্মশালার আয়োজন করেন। আর 'ট্যালেন্ট হান্ট' প্রতিযোগিতায় কাজ করেন বিচারক হিসেবে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো প্রতিযোগিতা হলে দলবল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে এত কিছু কী করে সামলান? নীল বলেন, 'কাজটা সত্যিই কঠিন। বন্ধুরা সাহায্য করে। ক্লাস মিস করলে ওদের কাছ থেকে জেনে নিই, কী কী পড়ানো হলো। কখনো বা সকালে ক্লাস করে তারপর যান শুটিংয়ে। শুটিংয়ের দলটাও খুব সাহায্য করে আমাকে। পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না হয়, সে জন্য তার ওপর কাজ চাপিয়ে দেয়া হয় না। আর পরিবার তো সব সময় পাশে আছেই।'