নিজেকে শান্ত রাখতেই চুপ ছিলাম

মিডিয়া তো এমনই। এখানে পান থেকে চুন খসলেই হই চই পড়ে যায়। মিথিলার ক্ষেত্রেও তাই হলো। ফেসবুকে দু'তিনটা ছবি পোস্ট। আর তাতেই হুলস্থূল। তারকা বলে কথা। গান, মডেলিং, অভিনয় এবং উপস্থাপনা- সব মাধ্যমেই আলোচিত তিনি। এ কারণেই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও যেন ঝড় উঠেছে মিডিয়াঙ্গনে। তর্ক-বিতর্কের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে সত্য-মিথ্যার ধূম্রজাল। বিষয়টি নিয়ে প্রথম দিন মুখ না খুললেও দ্বিতীয় দিনে এসে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন মিথিলা। সে সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন এ তারকা।

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রায়হান রহমান
রাফিয়াত রশিদ মিথিলা
'কী ঘটেছে তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে আসিনি। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার কিছু ব্যক্তিগত ছবি নিয়ে যা হয়েছে সেই সম্পর্কে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাই। এসব ছবির কিছুটা বাস্তব, কিছুটা মনগড়া। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে কিছু অপরাধী প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এগুলো অনলাইনে ছেড়ে দিয়েছে।' এভাবেই ভাইরাল হওয়া অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। সোমবার সন্ধ্যায় নির্মাতা ইফতেখার আহমেদ ফাহমির সঙ্গে কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তার। এ নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় নিজের ভেরিফাইট ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন এ অভিনেত্রী। যদিও মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার পর স্ট্যাটাসটি মুছে ফেলা হয়েছে। ততক্ষণে অবশ্য স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। এ স্ট্যাটাসে ফাহমির সঙ্গে টানা এক বছরের প্রেম ছিল বলেও দাবি করেন মিথিলা। সেই সম্পর্ক থাকাকালীন সময়ে তোলা কিছু ছবি ফাঁস হয়েছে জানিয়ে মিথিলা লিখেন, 'তার (ফাহমি) ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হয়েছিল। তখনই অপরাধীরা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য এগুলো খুঁজে নিয়েছে। এখানে ডেটিং শব্দটির ওপর জোর দিতে চাই, যার অর্থ আমরা একটি সম্পর্কে ছিলাম। সহজভাবে বললে দুটি মানুষ একে অপরের সঙ্গে জড়ালে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটায়, ছবি তোলে। প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা এগুলো ভাগ করে নেয়। তবে নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারার দায় আমারই।' তবে ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রস্ততিও নিচ্ছেন তিনি। ইতোমধ্যে সাইবার অপরাধ বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগও জানিয়েছেন মিথিলা। বিষয়টি নিশ্চত করে তিনি লিখেছেন, 'আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যারা আমার মান-সম্মান নিয়ে খেলেছে সেই দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে ছাড়ব। শপথ করছি, নিজের জন্য এবং হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীদের শিকার হওয়া সবার জন্য লড়বো।' এদিকে তার সঙ্গে কথা না বলেই কয়েকটি নিউজ পোর্টাল তাকে উদ্ধৃত করে খবর প্রকাশ করায় ক্ষেপেছেন মিথিলা। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'আমার লজ্জা লাগছে এই ভেবে, দেশের কিছু কুৎসিত লোক আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইচ্ছেমতো পোস্ট, শেয়ার ও ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। আমার খ্যাতি ও ভাবমূর্তিকে অসম্মান করে তারা সাবস্ক্রিপশন বাড়াচ্ছে ও নানান খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাকে কার্যত ধর্ষণ করা হচ্ছে। আমার লজ্জা হয় সেইসব মিডিয়ার জন্য, বিশেষ করে কয়েকটি নিউজ পোর্টাল আমার অনুমতি ছাড়াই আমাকে উদ্ধৃত করে এই খবর প্রকাশ করেছে। অথচ আমি এ নিয়ে কখনোই কথা বলিনি বা কোনো বক্তব্য দেইনি। ঘরে-বাইরে, ভার্চুয়াল জগৎসহ সর্বত্র যে কোনো জায়গায় নারীদের যৌন হেনস্তা করা হলে একইভাবে লজ্জিত ও ক্ষিপ্ত হই।' যদিও এসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন এ অভিনেত্রী। নিজেকে শান্ত রাখতে বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি চুপ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, 'আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার সম্মান ও মর্যাদা শুধু আমার আকার আর পোশাকের কিংবা ব্যক্তিগত ছবির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনে কঠোর পরিশ্রম, সৃজনশীলতা ও শিক্ষার মাধ্যমে সব অর্জন করেছি। আমার অতীতের ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো চুরি করে কিছু অপরাধীর কু-কর্মের কারণে এসব ভেঙে যাওয়ার মতো ঠুনকো নয়।' এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় ফাহমির সঙ্গে মিথিলার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ও আপত্তিকর স্ক্রিনশট ফাঁস হওয়ার পরই হুলস্থূল পড়ে যায় মিডিয়া অঙ্গনে। এ নিয়ে রীতিমত বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন মিডিয়া অঙ্গনের অনেক শিল্পী ও কলাকুশলীরা। পাশাপাশি ব্যক্তিগত বিষয় উলেস্নখ করে এটা নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি না করার জন্যও মন্তব্য করেছেন অনেকে। মিথিলার পাশে দাঁড়িয়েছেন ঢাকাই শোবিজ অঙ্গনের বেশ কয়েকজন তারকা। এর মধ্যে অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা একজন। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেন, 'কারও ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি শেয়ার বা পোস্ট করা, ইথিক্যালি কোনো রাইট আপনি রাখেন না; বিকৃত মানসিকতার আমূল পরিবর্তন হোক।' কণ্ঠশিল্পী আঁখি আলমগীর মিথিলার পক্ষ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, 'অন্যের কিছু (তা যতই খারাপ হোক) যখন আপনি শেয়ার করছেন তখন আপনিও খুব ভালো কিছু করছেন না।' অভিনেত্রী রুনা খানও হেঁটেছেন একই পথে। তিনি লিখেছেন, 'যে যে তার নিজের ওয়ালে অন্যের পার্সনাল এবং নেগেটিভ নিউজ শেয়ার করবে আমি তাদের বস্নগ করব।' আয়নাবাজি খ্যাত নির্মাতা অমিতাভ রেজা স্ট্যাটাস দিয়েছেন একটু কড়া ভাষায়। তিনি লিখেন 'যে দেশে ভালোবাসা খারাপ...। সে দেশে সাংবাদিকতা খুব স্বাভাবিক বিচারে এরকম হবে। বি স্ট্রং।' অভিনেতা পাভেল ইসলাম লিখেছেন, 'মিথিলা নামে আপনার একটা বোন আছে, যে একজন শিক্ষিকা, যার একটি ছোট কন্যা সন্তান আছে, সম্প্রতি তার ডিভোর্স হয়েছে। পরবর্তীকালে তার কারো সঙ্গে একটি সম্পর্ক হয়েছে, হোক তা বৈধ বা অবৈধ; আপনি কি পারতেন আপনার বোনের সেইসব গোপন ছবি ভাইরাল করতে? এগুলো করে কী আপনার সম্মান বাড়ে? না সমাজের, না দেশের! কী লাভ বলেন! আপনি আজ মরলে কাল দুদিন! মাথা মোটা হইয়েন না।' অভিনেত্রী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি লিখেছেন, 'কেউ পাবলিক ফিগার বা জনপ্রিয় হলে তার ব্যক্তিগত মুহূর্তগুলো বা ভালোবাসার অধিকার কি উধাও হয়ে যেতে হবে? যেন আপনারা সবাই ধোয়া তুলসীপাতা! আদরে, ভালোবাসায় আবৃষ্ট থাকতে সবাই চায়, সবাই ভালোবাসে। বোঝা গেল?' এর আগে ব্যান্ড সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা জন কবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে পড়েন এ মিথিলা। তখন অবশ্য নিজেদের বন্ধু বলেই চালিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপর কলকাতার পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে একাধিক খবরের শিরোনাম হোন তিনি। শিগগিরই তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছেন বলেও গুঞ্জন চাউর হয়। এমনকি বিয়ের শপিংয়ের জন্য নেপালের নাগরকোটের একটি শপিংমলেও দেখা যায় সৃজিত ও মিথিলাকে। সেখানেও তারা একান্ত সময় কাটিয়েছেন কয়েকদিন। যার একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ দু'য়ে দু'য়ে চার মেলাতে চাইছেন। বলছেন, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসানের সঙ্গে বিচ্ছেদের নেপথ্যে রয়েছে মিথিলার এমন খামখেয়ালি জীবনযাপন। উলেস্নখ্য, ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট ভালোবেসে সংগীতশিল্পী তাহসানকে বিয়ে করেন মিথিলা। তবে দু'জনের বনিবনা না হওয়ায় ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিচ্ছেদে যান তাহসান-মিথিলা। তাদের সংসারে আইরা তেহরীম খান নামের এক কন্যা সন্তানও রয়েছে।