সুবর্ণজয়ন্তীতে নন্দিতা দাস

নন্দিতা দাস। বিশ্ব চলচ্চিত্র পরিবারে আলোকিত অভিনেত্রী ও নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি এই ভারতীয় তারকা। নন্দিতা দাসই প্রথম ভারতীয়, যিনি শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক নারী ফোরামের কাছ থেকে খ্যাতি অর্জন করেন। পাশাপাশি নারী আন্দোলনের অগ্রপথিক বলেও আলোচিত তিনি। ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তালিকায় নন্দিতা দাস অন্যতম উলেস্নখযোগ্য এক নাম। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে তিনি নজর দিয়েছেন রাজনৈতিক সচেতনমূলক গল্পে। যে সিনেমাই তিনি নির্মাণ বা অভিনয় করুন, তার পছন্দের চিত্রনাট্যে থাকে রাজনৈতিক ও আদর্শিক মতাদর্শের ছাপ। ১০টিরও বেশি ভাষায় নির্মিত ৪০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করা নন্দিতা দৃঢ়তার সঙ্গেই নিজেকে সবার কাছে প্রমাণ করেছেন। বিশিষ্ট এই তারকার আজ জন্মদিন। তবে অন্যসব জন্মদিনের চেয়ে এবারের জন্মদিনটা তুলনামূলক একটু বেশি ভারী। কারণ, আজ তার জীবনের সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হচ্ছে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই তারকার সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা হলো-

প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নন্দিতা দাস
নন্দিতা দাস ভারতের মুম্বাইয়ে ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পড়াশোনা করেন ভূগোলে। নন্দিতা দাসের বাবা বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যতীন দাস এবং মা লেখক বর্ষা দাস। নন্দিতা দাস চলচ্চিত্রে আসেন থিয়েটার থেকে। তিনি একটা পথনাট্য গোষ্ঠীতে ছিলেন। চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ১৯৮১ সালে প্রকাশ মেহরা পরিচালিত 'লাওয়ারিশ' সিনেমায়। ১৯৮১ সালে শুরু করলেও তিনি প্রথম আলোচনায় আসেন ১৯৯৬ সালে দীপা মেহতার 'ফায়ার' সিনেমায় অভিনয় করে। এ সিনেমার মাধ্যমে তিনি বোদ্ধা, সমালোচক ও চলচ্চিত্রপ্রেমীদের বিশেষ নজর কাড়েন। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবগুলোয় 'ফায়ার'-এর ব্যাপক প্রদর্শন নন্দিতা দাসকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এই খ্যাতি আরও বেড়ে যায় ২০৯৮ সালে দীপা মেহতার আরেকটি সিনেমা 'আর্থ'-এ অভিনয়ের পর। এ পর্যন্ত তিনি ১০টি ভাষায় অর্ধশতের বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন। তার বেশিরভাগ সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত, প্রশংসিত ও আলোচিত হয়। নন্দিতা দাস সিনেমা পরিচালনাও করেন। নির্মাতা হিসেবেও তিনি আলোচিত। ২০০৯ সালে তিনি নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। প্রথম নির্মিত সিনেমার নাম 'ফিরাক'। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য 'ইন ডিফেন্স অব ফ্রিডমে'র মতোই গত বছর মুক্তি পাওয়া পূর্ণদৈর্ঘ্য 'মান্টো' চলচ্চিত্রটিও দুটি সুধী মহলে প্রশংসা পেয়েছে। অভিনয় ও পরিচালনার বাইরে একজন সমাজকর্মী হিসেবেও নন্দিতা দাসের খ্যাতি রয়েছে। চলচ্চিত্রে তার অভিনীত চরিত্রগুলো যা বলে, অনেক সময়ই একজন সমাজকর্মী হিসেবে তিনি একই কথা বলেন। সে হিসেবে বলা যায় শুধু ভারত নয়, একজন সমাজকর্মী হিসেবে তিনি সারা বিশ্বে তৎপর। নন্দিতা দাশ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও সামাজিক ফোরামে আমন্ত্রিত হয়ে বিষয়ভিত্তিক বক্তৃতা করেন। তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নন্দিতা দাস শিশুদের অডিও বুক সিরিজ 'আন্ডার দ্য ব্যানিয়ান'-এর বক্তা। এ ছাড়া তিনি মহাত্মা গান্ধীর আত্মজীবনী 'দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রু'-এর যে অডিও সংস্করণ, তাতে কণ্ঠ দেন তিনি। নন্দিতা দাস কয়েকটি বাংলা সিনেমায়ও অভিনয় করেন; এসবের মধ্যে মৃণাল সেনের 'আমার ভুবন' ও ঋতুপর্ণ ঘোষের 'শুভ মহরৎ' উলেস্নখযোগ্য। এ ছাড়া তিনি মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস অবলম্বনে গোবিন্দ নিহালনি পরিচালিত 'হাজার চুরাশি কি মা'তেও অভিনয় করেন। অভিনয় ও পরিচালনার জন্য তিনি বেশ কিছু পুরস্কার পান। এসবের মধ্যে ২০০০ সালে জগমোহন মুন্দ্রার 'ব্যাওয়ান্ডার'-এ অভিনয়ের জন্য সান্তা মনিকা চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার, ২০০২ সালে 'আমার ভুবন'-এ অভিনয়ের জন্য কায়রো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার, তেলেগু সিনেমা 'কমলি'র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার এবং 'ফিরাক' পরিচালনার জন্য ফিল্মফেয়ারের বিশেষ অ্যাওয়ার্ড উলেস্নখযোগ্য। দুই দশকেরও বেশি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নন্দিতা বেশ কিছু দুর্লভ সম্মাননা পেয়েছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি দু'বার বিচারক হিসেবে ছিলেন। "ওমেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড" প্রকল্পের আওয়তায় ফ্রান্স ২০০৯ সালে নন্দিতার ছবি সংবলিত একটি স্ট্যাম্প প্রকাশ করে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে 'হ্যাশট্যাগ মি টু' আন্দোলনের অন্যতম পথিক নন্দিতা। যেখানেই যান, সেখানেই তিনি নারীদের জেগে ওঠার আহ্বান জানান। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের 'ঢাকা লিট ফেস্ট'-এ এসে নন্দিতা দাস বলেন, 'এই সমাজটা পুরুষপ্রধান। এখানে নারীর অধিকার কখনোই পুরুষের সমান ছিল না। তাই অনিবার্য ছিল এই আন্দোলন। তবে সতর্ক থাকতে হবে। সত্যিই যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেই মেয়েদের এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এটার অপব্যবহার যাতে না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রকৃত অর্থে এ আন্দোলন পুরুষের বিরুদ্ধে নয়, ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে।'