'হালদা'য় আলোকিত তিশা

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নুসরাত ইমরোজ তিশা
মাসুদুর রহমান দুই পর্দার সু-অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। গান দিয়ে তার মিডিয়ায় পথচলা শুরু হলেও পরিচিতি পেয়েছেন অভিনেত্রী হিসেবে। নাটক-চলচ্চিত্রে এখন তিনি একজন পুরোদস্তুর অভিনেত্রী। ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন তিশা। শিশুশিল্পী হিসেবে মূলত গান করতেন। ১৯৯৭ সালে অনন্ত হীরার 'সাতপেড়ে কাব্য' নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে শখের বশে অভিনয় করেন। সেই শখের কাজটি যে, এখন তাকে এতদূর নিয়ে আসবে তা হয়তো ভাবতেও পারেননি এ অভিনেত্রী। গানের প্রতি তিশার এতটাই আগ্রহ ছিল 'এঞ্জেল ফোর' নামের একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সাল থেকে অভিনয় ও মডেলিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অনেকের অজানা তিশা গানের শিল্পী ছিলেন। পর্দায় তিশার উপস্থিতি দর্শকদের বরাবরই বাড়তি আগ্রহ তৈরি করে। তিশা নাটকে যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন চলচ্চিত্রেও তেমন। অভিনয় স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিকবার পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। দ্বিতীয়বারের মতো এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন দুই পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তাও আবার সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রীর পুরস্কার। ২০১৭ সালের সিনেমা 'হালদা'র জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে সম্প্রতি ঘোষণা করা হয়েছে তার নাম। এটি নির্মাণ করেছেন তৌকীর আহমেদ। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এ সংবাদে দারুণ উচ্ছ্বসিত এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, 'যে কোনো পুরস্কারই ভালো লাগার বিষয়। আমিও যখন শুনেছি হালদা সিনেমার জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কারটি পাচ্ছি, তখন থেকেই অন্যরকম আনন্দ কাজ করছে। অনেক খুশি আমি। কাছের মানুষরা ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে মনের মাঝে। আরও খুশি হয়েছি হালদা সিনেমার জন্য জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, রুনা খান পুরস্কার পেয়েছেন।' এর আগে তিশা ২০১৬ সালের 'অস্তিত্ব' সিনেমার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। সে ছবিতে তিশা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক বড় লোকের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অনবদ্য অভিনয়ই প্রমাণ করে তিনি সেরা অভিনেত্রী। দু'বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার প্রাপ্তির আগে কাজগুলো করতে গিয়ে কখনো ভাবেননি তার জন্য পুরস্কার পাবেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেত্রী বলেন, 'অভিনয় শিল্পীর কাজ অভিনয় করা। পুরস্কারের কথা ভেবে কোনো শিল্পী কাজ করেন না। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে তা নিয়ে থাকি। হালদা সিনেমাটির কাজ অনেক কষ্ট করে শেষ করেছিলাম। সারাক্ষণ গল্পে ও চরিত্রের ভেতরে ছিলাম। হালদা সিনেমায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় সংলাপ ছিল আমার। ওটার জন্য অনেক কষ্ট হতো। আরেকজনের কাছ থেকে ভাষা রপ্ত করে তারপর ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে হতো। যাই হোক, কাজ ভালো করার চেষ্টাটা সর্বদা-ই থাকে যখন কোনো কাজ করি।' তবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাওয়ার মতো বড় প্রাপ্তি একজন শিল্পীর অনেকখানি দায়িত্ব বাড়িয়ে দেয়। তিনি বলেন, কাজের জন্য প্রাপ্তি ঘটলে আরও ভালো কাজ করার জন্য প্রত্যাশা ও দায়িত্ব বেড়ে যায়। এটা আমার বেলায় ঘটে। নিজের প্রতি আস্থাটাও বাড়ে। তিশা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হলো 'মায়াবতী'। গেল ১৩ সেপ্টম্বর এটি মুক্তি পায়। পরিচালনা করেন অরুণ চৌধুরী। ডিসেম্বরে মুক্তি পাবে তিশা অভিনীত 'ইতি তোমারই ঢাকা'। মুক্তির আগেই ছবিটি আলোচনায় এসেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎসবেও প্রদর্শিত হয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে 'শনিবার বিকেল' ছবিটি। বর্তমানে চলচ্চিত্রে তিশার ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় নাটকে খুব কম কাজ করেন। কিন্তু এখন তার ব্যস্ততা চলছে ছোট পর্দা নিয়ে। সামনে বিজয় দিবস ও নতুন বছরের জন্য কয়েকটি নাটকে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে দুটি নাটকের শুটিং শেষ করেছেন তিনি। নাটক দুটির একটি হলো মিজানুর রহমান আরিয়ানের 'শহর ছেড়ে পরানপুর'। এটিতে তার সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন ইয়াশ রোহান। এর আগে এ অভিনেতাকে তিশার বিপরীতে দেখা গেছে 'মায়াবতী' চলচ্চিত্রে। এ ছাড়া গত ৪ নভেম্বর তিশা বিজয় দিবসের জন্য 'নৈবেদ্য' শিরোনামের একটি নাটকের শুটিং শেষ করেন। শ্যামল চন্দ্রের লেখা মুক্তিযুদ্ধের গল্প থেকে এর চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন মান্নান হীরা। নাটকে বীরাঙ্গনার ভূমিকায় দেখা যাবে তিশাকে। বর্তমান ব্যস্ততা প্রসঙ্গে তিশা বলেন, 'চলতি বছর এখন শেষের দিকে। তাই বিজয় দিবস ও আসছে নতুন বছরের নাটকে কাজ করছি। হাতে কয়েকটি নাটক-টেলি ছবির স্ক্রিপ্ট আছে। গল্প চরিত্র পছন্দ হলে এ বছর আরো দুয়েকটি নাটকে কাজ করব। গত কয়েক বছর আমি চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বিশেষ দিবসের নাটক-টেলি ছবিতেই শুধু কাজ করছি।' এদিকে তিশা অপেক্ষায় আছেন তার প্রথম প্রযোজিত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর 'নো ল্যান্ডস ম্যান' ছবিটি প্রযোজনা করছেন এ অভিনেত্রী। তার সঙ্গে সহ-প্রযোজক হিসেবে আছেন বলিউড অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। প্রযোজনার পাশপাশি তিশা এ ছবিতে অভিনয়ও করবেন বলে জানান। প্রযোজনায় আসা নিয়ে তিশা বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে- নিজেরা উদ্যোগ না নিলে তো হবে না। আমরা যদি সিনেমা প্রযোজনার উদ্যোগ নিই তাহলে অনেক নতুন নতুন সিনেমা আসবে। আমাদের সিনেমার উন্নতি হবে। এই ভেবেই 'নো ল্যান্ডস ম্যান' প্রযোজনায় আসছি। তবে, এই সিনেমার আরও বড় বড় প্রযোজক আছেন। আমিও তাদের সঙ্গে আছি।' নতুন কিছু সিনেমা নিয়ে কথা হচ্ছে। ব্যাটে-বলে মিলে গেলে সেগুলোতে অভিনয় করবেন তিশা। নাটক-সিনেমার বাইরে এই অভিনেত্রী এখন কিছু ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছেন বলে জানান তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিশা ২০১০ সালের ১৬ জুলাই টিভি ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শুধু পর্দায় দর্শক মাত করেননি তিনি। জীবন সঙ্গী ফারুকীকেও মুগ্ধ করেছেন বাস্তব জীবনে। মাঝেমধ্যেই মিডিয়া পাড়ায় অনেকের বিচ্ছেদের খবর রটলেও দাম্পত্য জীবনে সুখে আছেন তিশা-ফারুকী।