সময় নেই কনার হাতে...

সংগীতাঙ্গনের এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত কণ্ঠশিল্পীর নাম কনা। পুরো নাম দিলশাদ নাহার কনা। অডিও, চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপনচিত্রের জিঙ্গেল- সবখানেই কনার আনাগোনা। এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস কনার। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন গান, স্টেজ শো নিয়ে তুমুল ব্যস্ত এই কণ্ঠশিল্পী। কনার ভাষায়, কাটায় কাটায় শিডিউল। কথা বলারই যেন সময় নেই তার। তবে এত ব্যস্ততার মাঝেও ক্লান্তির বিন্দুমাত্র ছাপ নেই কনার চোখে-মুখে। খুব অল্প সময়েই তরুণ প্রজন্মের নয়নমণিতে পরিণত হওয়া এ তারকা একফাঁকে কথা বলেন তারার মেলার সঙ্গে।

প্রকাশ | ২৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
দিলশাদ নাহার কনা
বিন্দু বিন্দু জলের মতই বিশাল এক সিন্ধু গড়ে তুলেছেন সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা। গুটি গুটি পায়ে একটু একটু করে খুব সাধারণ থেকে অসাধারণ এক গায়িকায় পরিণত হয়েছেন এই কণ্ঠশিল্পী। প্রতিনিয়তই তিনি নতুন নতুন গান নিয়ে শ্রোতাদের সামনে হাজির হচ্ছেন। অডিও, চলচ্চিত্র কিংবা বিজ্ঞাপন চিত্রের জিঙ্গেল, ভয়েস ওভার- সবখানেই কনার আনাগোনা। গানে গানে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। শীতের আগমনে স্টেজ মাতাতে ডাক পড়তে শুরু হয়েছে কনার। ইতোমধ্যে চলতি মাসের দুই সপ্তাহেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পাঁচটি কনসার্ট করেছেন কনা। তিনি বলেন, 'সারা বছর গান নিয়ে ব্যস্ততা চললেও শীতের মৌসুমে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ সময় রেকডিং, সিনেমা, টেলিভিশনের পাশাপাশি স্টেজ শোর প্রস্তাব পাই অনেক। এখন শো ধীরে ধীরে বাড়ছে। চলতি মাসে এ পর্যন্ত পাঁচটি শো করেছি। এর মধ্যে একটি রাজশাহীতেও ছিল। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেজ শোর ব্যস্ততাও বাড়বে।' শুধু স্টেজেই নন, সম্প্রতি দুটি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কনা। গত ১৭ নভেম্বর 'লাইভ ফর লাইফ' সিনেমায় পেস্নব্যাক করেছেন। এর আগে 'এনকাউন্টার' সিনেমার একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। আরও কয়েকটি সিনেমার গান নিয়ে কথা হচ্ছে। সিনেমায় গান করে চলচ্চিত্রেও একটি শক্ত অবস্থান গড়েছেন কনা। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দেশীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম নির্ভরযোগ্য কণ্ঠে পরিণত হয়েছেন তিনি। এ জন্য সিনেমার গানে তার ব্যস্ততা একটু বেশিই বটে। তবে কি সিনেমার গানেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন? জবাবে কনা বলেন, 'গান গাওয়াতেই আমার স্বাচ্ছন্দ্যবোধ। গানকে ভালোবাসি, গান গেয়ে যাচ্ছি। গান ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না। আর সেই গান যে মাধ্যমেই গাই তাতেই আমার ভালো লাগে। তবে গত কয়েক বছরে সিনেমায় আমার গাওয়া অনেক গানই পছন্দ করেছেন দর্শক-শ্রোতারা। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কয়েকটি ছবির গানে কণ্ঠ দিয়েছি। সামনেও কিছু গান হওয়ার কথা রয়েছে। ব্যাটে-বলে মিললে করে ফেলব।' বিভিন্ন ধরনের গানে নিজের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন কনা। গানের বাইরে জিঙ্গেল ও বিজ্ঞাপনে কণ্ঠ দেয়াও চলছে নিয়মিত। এখনকার ৮৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনের ভয়েস কনার। টিভি খুললেই প্রচারিত বিজ্ঞাপনে শোনা যায় তার কণ্ঠ। যদিও অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল ও ভয়েস ওভারের ব্যস্ততা নিয়ে কনা বলেন, 'মাঝেমধ্যে বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল করা হয়। তবে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রচুর ভয়েস ওভার করছি। এর কোনো হিসাব নেই। দেখা যাচ্ছে সপ্তাহের পাঁচ দিনই আমাকে কোনো না কোনো বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভার দিতে হচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে, আমি এমনভাবে ভয়েস ওভারগুলো দেই, প্রচারের পর অনেকে ধরতেই পারে না এটা আমার কণ্ঠ।' বিজ্ঞাপনে নিয়মিত কণ্ঠের কাজ করলেও এর আগে মডেলিংয়ে দেখা গেছে কনাকে। ছোটবেলায় আফজাল হোসেনের পরিচলনায় 'বেঙ্গল বিস্কুটে'র বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছিলেন কনা। ছোট্ট মেয়ের কণ্ঠে 'কামড়ে কামড়ে মজা' কাথাটি সেই সময় বেশ প্রশংসিত হয়। মডেলিংয়ের বাইরে নাটকে অভিনয় করেও আলোচনায় ছিলেন কনা। বর্তমানে অভিনয়ে দেখা-না দেখা নিয়ে কনা বলেন, 'কিছু নাটকে অভিনয় করেছিলাম ঠিক, তাও অনেক আগে। কিন্তু এখন আর অভিনয় করছি না। অভিনয় আমার পেশাও নয়। ভবিষ্যতে আর অভিনয় করা হবে কিনা তা বলতে পারছি না।' দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভিনদেশি সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন কনা। বাংলার পাশাপাশি সিংহলি ও আরবি ভাষায়ও গান গেয়েছেন। কনা দেশের অনেক জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছেন। সিনেমার গান, স্টেজ শো, টিভি অনুষ্ঠান ছাড়াও কনা নতুন গানও করছেন। কিছু করা আছে। আবার কিছু করছেন। নিজ উদ্যোগে একটি কাজ করছেন তিনি। জানালেন সেটা ভালোভাবে সামনে ভিডিওসহ প্রকাশ করবেন বলে ঠিক করেছেন। আগে গান শুধু শোনার ছিল। এখন দেখারও বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গান অডিওর সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও নির্মাণ হয়। গান এখন ভিডিওনির্ভর হয়ে গেছে। এ বিষয়ে কনার বক্তব্য, খুব সহজে মানুষের কাছে গান পৌঁছানো আর জনপ্রিয়তা পাওয়ার একমাত্র উপায় ভিডিও। তাই গান তৈরির সময়ই ভিডিওর কথা মাথায় রাখতে হয়। গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে গল্প আর গস্ন্যামারকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি এসব গানের ভিডিও জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। তাই আমরা সেই পথেই এগুচ্ছি। কারণ সারা বিশ্বেই এখন শ্রোতারা ইউটিউবে অথবা মোবাইলে গান শুনছে। আমরা গত বছর থেকে এ ধারাটিতে অভ্যস্ত বেশি হয়েছি। তো বেশির ভাগ গানই ডিজিটালি প্রকাশ হচ্ছে। সঙ্গীতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও এগুচ্ছি।' গানের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে কনা বলেন, 'কোম্পানিগুলো ভালো গানে বিনিয়োগ করছে। পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ছে। ডিজিটালি গান প্রকাশ হচ্ছে। যে কেউ ইউটিউবে গান প্রকাশ করতে পারছেন। এর নেতিবাচক ও ইতিবাচক দুই দিকই আছে। তবে ইতিবাচক দিকটাকে গ্রহণ করেই এগিয়ে যেতে হবে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আমি আশাবাদী। আমার বিশ্বাস ইন্ডাস্ট্রি সামনে আরো ভালো দিকে যাবে।' গানের মঞ্চে কনাকে যেমন দেখা যায় গাইতে, তেমনই কখনো তাকে দেখা যায় গানের বিচারক হিসেবেও। বর্তমানে আরটিভির একটি রিয়েলিটি শোর বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে কনা বলেন, 'গানের ফাঁকে কখনো কখনো গানের বিচারকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখন আরটিভিতে প্রচারিত ক্যাম্পাসভিত্তিক রিয়েলিটি শো 'আরটিভি ডাবর ভাটিকা ক্যাম্পাস স্টার' প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে কাজ করছি। এখানের সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন। পড়াশোনার বাইরেও নানা বিষয়ে দক্ষ শিক্ষার্থীদের প্রতিভা তুলে ধরতেই এ আয়োজন।' চলতি বছরের মাঝসময়ে বিয়ে করেছেন কনা। বর ব্যবসায়ী গোলাম মো. ইফতেখার। বন্ধুমহলে তিনি গহীন নামে পরিচিত। দুই পরিবারের চাওয়া থেকে বিয়ের কাজটি সেরেছেন কনা। নতুন জীবন নিয়ে জানতে চাইলে কনা বলেন, 'আমরা দুজন খুব ভালো আছি। ও খুব ভালো মনের একজন মানুষ। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।'