কমে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র

মুখিয়ে রয়েছেন তারকারা

প্রকাশ | ১২ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
বিদ্যা সিনহা মিম
নাটক ও চলচ্চিত্র- দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। নাটক ও চলচ্চিত্রকে বলা হয় আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। যার মাধ্যমে আদর্শ জীবন গড়া ও ব্যক্তি জীবনের মননশীলতার উন্নয়ন সাধন করা যায়। ভুল-ত্রম্নটি শোধরে নিয়ে উৎকৃষ্ট জীবন গড়ে তোলা যায়। আবার নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা ইতিহাসকেও তুলে ধরা হয় চলচ্চিত্র ও নাটকের মাধ্যমে। এ প্রজন্মের দর্শকরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। কিন্তু সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার জন্য যে পরিমাণ মুক্তিযুদ্ধের নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করা উচিত, সেই পরিমাণ নির্মিত হচ্ছে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই কমছে এর নির্মাণ সংখ্যা। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নাটক নির্মাণ হলেও তা কেবল বিশেষ দিবসেই প্রচার করা হয়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র একদম হাতে গোনা। হাতের আঙুল গুনে গুনেই এর সঠিক হিসাব পাওয়া যায়। চলছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। অথচ প্রেক্ষাগৃহে নেই মহান মুক্তিযুদ্ধ গল্প নিয়ে নির্মিত নতুন কোনো ছবি। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে টিভি চ্যানেলে মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত পুরনো ছবি প্রচার হয়। যে ছবিগুলোর বাইরে বর্ণিল এ ইতিহাস নিয়ে নতুন কোনো ছবিই নির্মাণ হচ্ছে না। অথচ নতুন প্রজন্মের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মুক্তিযুদ্ধের গল্পে কাজ করতে মুখিয়ে আছেন। তারা চাইছেন নিজেদের গর্বের এ ঘটনাটি নিয়ে নির্মিত হোক ছবি এবং নাটক। কিন্তু অনেকটা অবহেলিতই রয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধের নাটক। কেন নির্মিত হচ্ছে না এর উত্তরে অনেকে অনেক কথাই বলেছেন। যার মূলভাব হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধনির্ভর ছবিতে যেমন অ্যারেজমেন্ট থাকা দরকার সেটি নেই। এ ছাড়া এ ধরনের ছবিতে সরকারের সহায়তারও প্রয়োজন পড়ে। সেটিও গুটিকয়েক নির্মাতা ছাড়া তেমন কেউ পান না। আগে এ ধরনের ছবি নির্মিত হলেও এখন আর হচ্ছে না। তবে মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে তারকাদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে খুব। নির্মাতা ও তারকারা এখনও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের ছবিতে অভিনয় করতে অধীর আগ্রহ নিয়েই থাকেন। কিন্তু এখন যে মুক্তিযুদ্ধের ছবি নির্মিত হচ্ছে না তা কিন্তু নয়। যেগুলো নির্মিত হচ্ছে তাতে অনেকটাই মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নাটক ও ছবি যা-ই নির্মিত হয়েছে, তাতেই অভিনয় করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন শিল্পীরা। দেখাচ্ছেন এখনও। বলা যায়, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধের গল্পের ছবি বা নাটকে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকাই ছবির অন্যতম চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা বলেন, ''মুক্তিযুদ্ধের গল্পের প্রতি আমার দারুণ আগ্রহ। আমি চাই 'ওরা এগারোজন' ও 'আগুনের পরশমণি'র মতো আরও অনেক ছবি নির্মিত হোক। সেই ছবিগুলোর একজন হয়ে অভিনয় করি। আমাদের আগের সময়ে বেশ আয়োজন করেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্প নিয়ে ছবি নির্মিত হতো। এখন সেটি হচ্ছে না। প্রতি বছরই শুনি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গল্পের ছবি নির্মিত হচ্ছে। খোঁজ নিলে আগের ছবির বাইরে নতুন ছবি খুঁজে পাই না।'' আরেক তরুণ অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের অন্যতম কারণ। আমরা যুদ্ধ দেখিনি। নাটক, সিনেমা দেখে ও বইয়ে পড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও তখনকার অবস্থা এবং আমাদের সাহসিকতার পরিচয় পেয়েছি। এখন যদি এ ধরনের ছবিতে আমাকে প্রস্তাব দেয়া হয় তা হলে অবশ্যই আমি অন্য ছবির চেয়ে এ ধরনের ছবিকে গুরুত্ব বেশি দেব। আমি চাই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি নির্মিত হোক। জানি না, এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করার যোগ্যতা এখনও আমার হয়েছে কিনা। তবে আমি নিজের সবটুকু দিয়েই অভিনয় করার চেষ্টা করব।' চিত্রনায়িকা আইরিন বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধ আমাদের আবেগের জায়গা। যে স্বাধীনতার জন্য আমাদের ভাইবোনদের রক্ত দিতে হয়েছে সেই ইতিহাস বা তার ওপর নির্মিত ছবিই নয়, তথ্যচিত্রেও কাজ করতে আগ্রহী আমি।' একই সঙ্গে এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চলচ্চিত্রের তরুণ নায়ক সাইমন সাদিক। তিনি বলেন, 'চাষী নজরুল ইসলাম স্যারের ওরা ১১ জন দেখেই মুক্তিযুদ্ধের ছবির প্রতি আগ্রহ জেগেছে। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। এ ধরনের ছবিতে অভিনয় করলে অন্তত অভিনয়ের মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্টের দিনগুলো, তাদের সংগ্রামের বিষয়টি কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারব।'