বছর জুড়ে মেহজাবিন সৌরভ

মেহজাবিন চৌধুরী। গত কয়েক বছর ধরেই ছোটপর্দায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে নিজস্ব এক অবস্থান তৈরি করেন তিনি। আর চলতি বছরটি যেন তার কাছে ছিল স্মরণীয় একটি বছর। বলা চলে রকমারি ও বৈচিত্র্যময় অভিনয় দিয়ে বছর জুড়েই দু্যতি ছড়িয়েছেন মেহজাবিন।

প্রকাশ | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

তারার মেলা রিপোর্ট
মেহজাবিন চৌধুরী
ঠিক যেন খরস্রোতা নদীর মতোই ছুটে চলেছেন মেহজাবিন। নানান রঙে, নানান ঢঙে দেখা গেছে তাকে। কখনো 'পাগলী', কখনো 'পাকিস্তানি মেয়ে' আবার কখনো 'কাজের বুয়া'র মতো বৈচিত্র্যময় চরিত্র দিয়ে মাত করেছেন দর্শককে। টিভির পর্দা হোক আর ইউটিউবের হ্যান্ডেল- সর্বত্রই ছিল মেহজাবিনময়। দর্শপ্রিয়তার বিচারে, তাকে চলতি বছরের সবচেয়ে আলোচিত অভিনেত্রী হিসেবে মূল্যায়ন করলে ভুল হবে না। দিনকে দিন তিনি টিভি নাটকে অপরিহার্য হয়ে উঠছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার অভিনীত নাটকগুলোতেই। শুরু করা যাক 'পতঙ্গ' দিয়ে। নাটকটি নির্মাণ করেছেন রাফাত মজুমদার রিকু। কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। ঈদুল আজহায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর দর্শক রীতিমতো 'থ' হয়ে যায়। রোমান্টিক নাটকে মেহজাবিনকে দেখতে দেখতে লোকে কল্পনাও করেনি তাকে দেখা যাবে পাগলের চরিত্রে। তবে মেহজাবিন পেরেছেন, চিরচেনা বৃত্তের বলয় ভেঙে অভিনয় করেছেন অনন্য উচ্চতায়। এ নাটকে মানবজীবনের চিরাচরিত কিছু বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়েছে। এমন একটি চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছিলেন অভিনেত্রী নিজেও। গত বছর মেহজাবিনের ওপর সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল, কান্নার চরিত্র ছাড়া জমাতে পারেন না তিনি। তবে 'পতঙ্গ'তে অভিনয় করে সমালোচকদের হয়তো মোক্ষম জাবাবটাই দিয়েছেন। টিভি নাটক মানেই যাদের কাছে ভাঁড়ামো, অশালীন কথাবার্তা কিংবা অযাচিত সংলাপ- তাদের একহাত দিয়েছেন আবার 'বিউটিফুল' নাটকে অভিনয় করে। কাজল আরেফিন ওমির এ নাটকে মেহজাবিন অভিনয় করেছেন দাঁতালো মেয়ের চরিত্রে। আমাদের সমাজে একজন মেয়ের দাঁত উঁচু থাকলে তাকে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সেটা চাকরির বাজার হোক কিংবা বিয়ে- সাদির বিষয়। সমাজের এমন কিছু চিত্র 'বিউটিফুল' নাটকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক। এতে আফরান নিশোর সঙ্গে জুটিবেঁধে অনবদ্য অভিনয় করেছেন এ লাক্স তারকা। ধনীর দুলালী অথবা ভার্সিটি পড়ুয়া চরিত্রে দেখা মেহজাবিনকে এমন চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্রে আবিষ্কার করে দর্শক- যারপরনাই মুগ্ধ। নাটকটি প্রচারের পর হু হু করে জনপ্রিয়তা পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যম; সব জায়গায় এর ইতিবাচক রিভিউ মেলে। চরিত্রে বৈচিত্র্য আনতে এখানেই দাড়ি টানেননি এ অভিনেত্রী। আবারও ছুটে গেছেন আরেক চরিত্রে। অভিনয় করেছেন, 'এই শহরে' ও 'আবারও স্বপ্ন দেখি'র মতো নাটকে। আশফাক নিপুণের 'এই শহরে' নাটকে মেহজাবিনকে দেখা গেছে নার্স চরিত্রে। নিম্নবিত্ত সংসারের মানুষ। তার দায়িত্বই হচ্ছে হাসপাতালের নবজাতক শিশুদের দেখভাল করা। সেখানেও সফলভাবে পাস করেছেন এ অভিনেত্রী। এক কথায় মেহজাবিন যেখানেই হাত দিয়েছে, সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন অভিনয়ের মুন্সিয়ানায়। সে জন্যই হয়তো 'কাজের বুয়া' চরিত্রেও মানানসই ছিলেন। হ্যা কাজের বুয়া! মাহমুদুর রহমান হিমির পরিচালনায় 'স্বপ্ন দেখি আবারো' শিরোনামে একটি নাটকে কাজের বুয়া চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, নাটকটি মেহজাবিনের নিজের লেখা। নাটকে কাজের বুয়া ও ড্রাইভারদের যে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা থাকতে পারে সেটাই দেখানো হয়েছে। এ নাটকটিও গত ঈদে প্রচারিত হয়েছিল। এমন জীবন সাদৃশ্য গল্পের নাটক আজকাল কম নির্মাণ হয়। গুটি কয়েক যাও তৈরি হয়, নানাবিধ কারণে আলোচনায় আসে না। তবে ব্যতিক্রম 'স্বপ্ন দেখি আবারো'। নাটকটি প্রচারিত হওয়ার পর বেশ প্রশংসিত হয়। চরিত্রের সঙ্গে একজন শিল্পী কতটা মিলেমিশে একাকার হতে পারেন- তার জলজ্যান্ত প্রমাণ ছোটপর্দার এ মিষ্টি কন্যা। মেহজাবিন বলেন, 'আমি সব সময়ই নিজেকে ভাঙতে চাই। প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হতে চাই। চলতি বছরটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যরকম একটা সাফল্য এনে দিয়েছি। নতুন বছর নিয়ে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। চলমান ধারাটাই অব্যাহত রাখতে চাই।'