আসল গানের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে: ন্যান্সি

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করছেন নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। শ্রোতাপ্রিয় এ কণ্ঠশিল্পী এখনো আগের মতোই গানে গানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কনসার্ট, টিভি প্রোগ্রাম, চলচ্চিত্র ও মৌলিক গান- সবখানেই সরব উপস্থিতি তার। গত বছরে তিনি বেশ কিছু গান দিয়ে আলোচনায় ছিলেন। নতুন বছরেও থাকছে তার নতুন গান, নতুন পরিকল্পনা।

প্রকাশ | ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি
তারার মেলা : শুরুতেই নতুন বছরের পরিকল্পনা জানতে চাচ্ছি। \হন্যান্সি : বছরের পরিকল্পনা নিয়ে আমি আসলে কাজ করি না। তাই কোনো পরিকল্পনাও নেই। সময় বুঝেই কাজ করা হয়। যে সময় যে ধরনের কাজ আসে তখন সেই কাজকে গুরুত্ব দিই। বছর জুড়ে আমি কি কি করব তা কখনো কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ করি না। তারার মেলা : গত বছরটি নিশ্চয়ই গানে গানেই কেটেছে? ন্যান্সি : আমি আসলে খুব বেশি ব্যস্ত থাকার শিল্পী নই। তবুও মোটামুটি ভালোই কেটেছে। কিছু নতুন গানের পাশাপাশি ৫/৬টি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছি। প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে দুটি গানে কণ্ঠ দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই গান দুটি প্রকাশ হবে। এ ছাড়া সারা বছর প্রায় একই রকম স্টেজ শো করেছি। সাধারণত করপোরেট প্রোগ্রামগুলোই বেশি করা হয়। এ ছাড়া টেলিভিশন প্রোগ্রামেও ব্যস্ততা ছিল। তারার মেলা: এখন তো কনসার্টের মৌসুম? আপনিও হয়তো দারুণ ব্যস্ত? ন্যান্সি : শহর থেকে শুরু করে গ্রামের যে ধরনের কনসার্ট বোঝায়, আমি ওই ধরনের কনসার্ট করি না। ঢাকার বাইরে গ্রামের কনসার্টগুলোতে আমার একদম যাওয়া হয় না। ওইসব অনুষ্ঠানে ফোক ঘরানার গানই মানানসই। আমি যে ধাঁচের গান করি, তা ওই পরিবেশে মানায় না। পরিতৃপ্তির একটি বিষয় থাকে। শুধু টাকার জন্য গাইলেই তো হবে না। শিল্পী হিসেবে আমি ওখানে গিয়ে ফোক গাইলাম কিংবা মমতাজের একটি গান করার চেষ্টা করলাম। তাতে হয়তো দর্শক-শ্রোতা কিন্তু আমাকে সেভাবে গ্রহণ করবেন না। তাই প্রস্তাব এলেও তা ফিরিয়ে দিতে হয়। সারা বছর সাধারণত করপোরেট ধরনের প্রোগ্রামে আমার ডাক থাকে। আমি নিজেও এসব পরিবেশে গান করতে পছন্দ করি। তারার মেলা : গত বছর দেশের বাইরেও কয়েকটি কনসার্ট করেছেন? ন্যান্সি : গত বছর কনসার্টের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে তিনটি অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছি। আমার সঙ্গে বড় মেয়ে রোদেলাও সেখানে গান করেছে। খুব ভালো আয়োজন ছিল। এ ছাড়া বছরের শেষের দিকে ভারতে গিয়েছিলাম তিনটি গানের রেকর্ডের জন্য। সত্যি বলতে, অনেক প্রস্তাব এলেও দেশের বাইরে কনসার্টে যাওয়া হয় না। তাতে যে সম্মানী দেওয়া হয় তার থেকে দেশের অনুষ্ঠানগুলো করাই ভালো। একটা সময় দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ এলে খুব উচ্ছ্বসিত হতাম। এখন তেমন লাগে না। এলে একটা প্রোগ্রাম বাবদ যা চুক্তি থাকে তার প্রায় অর্ধেক আমাদের হাতে আসে। মিউজিশিয়ানদের সম্মানিসহ অন্যান্য কস্ট মিটিয়ে হাতে খুব একটা থাকে না। তারার মেলা : এর কারণ কি? ন্যান্সি : আগে কোনো প্রোগ্রামের জন্য একটি/দুটি মাধ্যম থাকত। এখন বেড়ে গেছে। কয়েক স্তর পার হতে হয়। এতে ঝামেলাও পোহাতে হয় আমাদের। প্রতি স্তর পার হয়ে শেষে আমাদের পর্যন্ত আসে। এ জন্য আসলে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভালো হয়। অন্য দেশের মতো শিল্পীদের ম্যানেজার কিংবা পিআরও থাকলে এসব সমস্যায় পড়তে হয় না। আয়োজকরা সরাসরি ম্যানেজার-পিআরওর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তারাই অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত করবেন। এতে শিল্পীর জন্য অনেক সুবিধা। তারার মেলা: নতুনরা গানে সরব থাকলেও সিনিয়র শিল্পীদের বেলায় তা দেখা যাচ্ছে না কেন? ন্যান্সি : এটা এখন নয়, সব সময়ই নতুনদের কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। ভবিষ্যতেও তাই হবে। তাদের মধ্যে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন থাকে। তাই উঠে-পড়ে লেগে যায়। কিন্তু এখন সিনিয়র শিল্পীদের গান খুব বেশি প্রকাশ হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রোগ্রামেও ততটা থাকছেন না। টেলিভিশন মঞ্চেও তারা অনুপস্থিত। এর কারণ হচ্ছে একজন ভালোমানের শিল্পীকে আনতে গেলে যে সম্মানী দেওয়া দরকার তা আয়োজকদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। এতে করে আয়োজক কিংবা প্রডিওসারদেরও কিছু করার থাকে না। কারণ বাজেট কম। আবার অনেক ক্ষেত্রে চ্যানেল কর্তৃপক্ষও অপারগ। তারা স্পন্সর পাচ্ছে না। কিন্তু নতুন একজন শিল্পীর বেলায় সেই ঝামেলা নেই। তারা অল্প টাকায় কাজ করছেন। অনেক শিল্পী তাও পায় না। বিনে পয়সার কাজ করেন। তারার মেলা: গানের পরিবেশ কতটা অনুকূলে বলে আপনার মনে হয়? ন্যান্সি: আমি জুনিয়র নই। আবার ততটা সিনিয়রও না। ক্যারিয়ারে আমার ১৫ বছর। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এখন গানের সময় ভালো যাচ্ছে না। গত কয়েক বছরে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে এমন কোনো গান হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। মৌলিক গানের অভাব। ফিউশন হচ্ছে অনেক। কখনো কখনো ফিউশনের নামে আসল গানের সৌন্দর্য নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো না। গত বছর একেবারে কম ছবি মুক্তি পেয়েছে। তাই চলচ্চিত্রে তেমন গানও নেই। তারার মেলা : অনেকেই নিজস্ব চ্যানেল খুলেছেন। আপনার তেমন কিছু দেখতে পাচ্ছি না কেন? ন্যান্সি : হ্যাঁ, শিল্পীদের অনেকেরই ইউটিউব চ্যানেল আছে। আমিও এমন কিছু ভাবছি। তবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয়। নিজের গানগুলো সংরক্ষণের জন্য। যেখানে আমার বাছাই করা গানের পাশাপাশি রোদেলার গানও থাকবে।