মাহীর ভেতর-বাহির

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী। রুপালি পর্দায় তার শুরুটা ছিল অনেকটা জমকালোভাবেই। শুরু থেকেই ক্যারিয়ারের পালে লাগে সুখের হাওয়া। খুব অল্প সময়ে চিত্রপাড়ায় সবার নজর কাড়েন এই গস্নামার কন্যা। প্রযোজক ও পরিচালকরা তাকে নিয়ে প্রত্যাশার জাল বুনেন তিনি। উপহার দেন একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র। প্রেক্ষাগৃহে মাহীর ছবি মানেই দর্শকদের বাড়তি আনন্দ। ক্রমেই দর্শকদের প্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠেন তিনি। আলোচিত এ নায়িকাকে নিয়ে দর্শকদের কৌতূহলের শেষ নেই। শুধু সিনেমা নয়, পর্দার বাইরেও মাহীর জীবনযাত্রার নানা বিষয়ে জানতে মুখিয়ে থাকেন ভক্তরা। সিনেমার বাইরে মাহীর অফ ট্র্যাক নিয়েই আমাদের এবারের আয়োজন।

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

মাসুদুর রহমান
মাহিয়া মাহী
বিকেল ৫টায় ঘুম থেকে উঠি... সোমবার বিকেলে মাহীর সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি বাসাতেই ছিলেন। জানালেন, ঘুম থেকে ওঠেছেন কিছুক্ষণ আগে। রাতে কখন ঘুমাতে যান আর কখন ঘুম থেকে ওঠেন? প্রশ্ন ছিল মাহির কাছে। বললেন, 'এটা দুই রকম। শুটিং থাকলে ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠতে হয়। শুটিং শেষ করে রাতে কখন ঘুমাতে যাই তার ঠিক নেই। তবে শুটিং না থাকলে ভোরের দিকে ঘুমাতে যাই আর ঘুম থেকে উঠি বিকেল ৫টার দিকে। এরপর ফ্রেশ হয়ে আমি লাঞ্চ করি।' এভাবেই হয়ে আসছে; আর এতে তার শরীর খারাপ হয় না বলেও জানালেন তিনি। অবসরে টিভি দেখি ... সবারই প্রয়োজন হয় অবসরের। হাজারো ব্যস্ততায় প্রতিটি মানুষ একটু অবসর খোঁজেন। ক্লান্তির রেশ দূর করতে এই সময়টা নিজের মতো করেই বেছে নেন। মাহির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি অবসরে কি করেন? এই নায়িকা বলেন, 'অবসরে আমি একান্তই নিজের মতো করে কাটাই। টিভি দেখি, গান শুনি, সেই রকম কেউ হলে আড্ডা দিই। কখনো কখনো শপিং করা হয়। এ ছাড়া নিজের কিছু কাজ করার থাকলে করে নিই। গান আমার অনেক প্রিয়... এ সময়ে টিভি সেটের সামনে বসে নাটক কিংবা কোনো অনুষ্ঠান উপভোগ করার দর্শক খুবই কম। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণা, মানহীন অনুষ্ঠান থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু মাহী টেলিভিশনে কোন ধরনের অনুষ্ঠান দেখেন ? নাটক, না অন্যকিছু? তিনি বলেন, 'টেলিভিশনে নাটক দেখা হয় না। হঠাৎ দেখা হয়। তবে আমি গানের অনুষ্ঠানগুলো বেশি দেখি। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখি কোনটায় কী ধরনের গান হচ্ছে। গান গাইতে না পারলেও গান শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে। কোনো অনুষ্ঠানে অনুরোধ করলে বাধ্য হয়ে গাইতে গিয়ে এক লাইনের বেশি কণ্ঠ থেকে বের হয় না।' নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে ছিল না... গানের প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। তবুও গানের শিল্পী না হয়ে অভিনয়ের খাতায় নাম লিখিয়েছেন মাহী। তবে কি নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন... কথা শেষ না হতেই মাহী বলেলেন, 'না। নায়িকা হওয়ার ইচ্ছে আমার কখনো ছিল না। তবে বিল বোর্ডে অন্যদের ছবি দেখে মনে মনে ভাবতাম আমারও যদি এমন কোনো ছবি থাকত বিলবোর্ডে। তবে ফটোশুট করতাম। সেই সুবাধে জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে আমাকে ডাকা হয় সিনেমার জন্য। এরপর 'ভালোবাসার রং' ছবি করে নায়িকা হয়ে গেলাম। প্রথমবার ক্যামেরার সামনে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম... প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে অনেকেই ভয় পান। ভালোলাগার পাশাপাশি আতঙ্কও কাজ করে। এ জন্য ক্যামেরার সামনে বারবার শট দিতে হয়। কিন্তু মাহীর বেলায় তা হয়নি। কারণটা জানালেন তিনি। বলেন, 'প্রথমবার ক্যামেরার সামনে শট দেওয়ার সময় আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। দৃশ্যটি ছিল এমন যে, আমি ঘুমিয়ে থাকব, আমার বাবা না দাদা (মনে নেই) এসে আমাকে ডাকবে। দৃশ্যটি ওকে হয়ে যাওয়ার পর প্রায় সবাই চলে গেছে তখনও আমি কিছুই জানি না। আমি ঘুমিয়ে আছি। পরে মা এসে আমাকে ডেকে তুলেন। ওই দিন ভোরে মেকাপ নিয়ে শটের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। সেই শট নিতে নিতে সারাদিন পার করে রাতে শট নিয়েছিল।' আমি অনেক রাগী... নিজের বড় গুণ ও বড় দোষ জানতে চাওয়া হয় মাহীর কাছে। এ নিয়ে খানিকটা ভেবেও নিজের গুণ বলতে পারেননি তিনি। তবে দোষ নিয়ে চট জলদি বলে ফেলেন- 'আমি অনেক রাগী। কখনো কখনো হুট করে ভীষণ রেগে যাই। সেই রাগ অল্পতেই ম্স্নান হয়ে যায়, আবার কখনো অনেক সময় থাকে।' প্রেম প্রস্তাব দিতে সাহস পেত না কেউ...? কথায় আছে সবার জীবনে প্রেম আসে। সবাই নাকি তাই প্রেমেও পড়েন। কিন্তু প্রেম নিয়ে মাহী বলেন ভিন্ন কথা। বললেন, 'ছোটবেলায় আমি দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। অনেক দুষ্টমি করতাম। আমি অনেকের চোখে চোখ রেখেছি। যে ছেলের চোখে চোখ রেখেছি সে তো অবাক হয়ে যেত; কিন্তু আমাকে কিছু বলার সাহস পেত না। কারণ মা সবসময় আমার সঙ্গে থাকতেন। তাই কোনো ছেলেই আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে সাহস করত না। অপু মোটেও রোমান্টিক নয়... দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখী বলেই জানালেন মাহী। তিনি যেমন স্বামী অপুকে ভালোবাসেন, তেমনই অপুও ভালোবাসেন তাকে। মাহী একটু চঞ্চল প্রকৃতির হলেও স্বামী অপু তা নন। অনেকটা নরম স্বভাবের। মাহী বলেন, 'ও প্রচন্ড ভালোমানুষ হলেও রোমান্টিক নন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুঁনসুটির বিষয়গুলো ও বুঝতে পারেন না। আমি চাই ও একটু রোমান্টিক হোক। কিন্তু তা হয়ে উঠছে না। তবে ও আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, সারাক্ষণ আগলে রাখেন। আমিও কিন্তু ওকে কম ভালোবাসি না। মনে হয়, আমার ভালোবাসাটাই বেশি।' বোরকা পরে সিনেমা দেখায় মজা আছে... দর্শকদের ভালোবাসাতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেন একজন তারকা। এই জনপ্রিয়তায় বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় অনেককে। বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক পথই অবলম্বন করতে হয়। মাহীও একবার বোরকা পরে নিজের ছবি দেখতে গিয়েছিলেন সিনেমা হলে। সরাসরি দর্শকদের প্রতিক্রিয়া জেনেছিলেন। আলোচিত এ নায়িকা বলেন, 'বোরকা পরে নিজের সিনেমা দেখার মজার অভিজ্ঞতা আছে। সবার মাঝে গিয়ে বসেছিলাম। সিনেমা চলার সময় নানা জনের নানা প্রতিক্রিয়া জেনেছি। পাশের অনেকেই আমার অভিনয়ের প্রশংসা করছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এখানে ভালো করেনি। এরকম নিজের ভালোমন্দ জেনে ভালো লাগে। কিন্তু সব সময় হওয়া তো সম্ভব নয়। সর্বশেষ গত বছর হলে গিয়ে 'অন্ধকার জগৎ' সিনেমাটি দেখেছিলাম। ইচ্ছে ছিল খল চরিত্রে অভিনয় করব... দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মাহী নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসা পেয়েছেন। কিন্তু কখনো খল চরিত্রে অভিনয় করা হয়নি। নায়িকা থাকা অবস্থায় এ সুযোগ ও সাহস সবাই করতেও পারেন না। সম্প্রতি 'বস্নাড' নামের একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন চলচ্চিত্রের এই গস্নামার নায়িকা। ছবিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'খল চরিত্রের অভিনয় আমার খুব ভালোলাগে। মিশা সওদাগরসহ অন্যান্য খল চরিত্রের অভিনেতাদের অভিনয় আমাকে টানে। মনে হতো আমিও যদি এমন অভিনয় করতে পারতাম। তো এই সুযোগ পেয়ে গেলাম। 'বস্নাড' ছবিতে একসঙ্গে দুই চরিত্র। নায়িকা ও খল চরিত্রে দর্শকরা আমাকে দেখতে পাবেন। ছবিটির শুটিংয়ের জন্য আমি মুখিয়ে আছি। নিজেকে প্রস্তুত করছি। শিগগিরই এর শুটিং শুরু হবে।' বছরটি ভালোই যাবে মনে হচ্ছে... ২০১৯ সাল পার হয়ে শুরু হয়েছে ২০২০ সাল। গেল বছরে মাহী অভিনীত 'অন্ধকার জগৎ' ও 'অবতার' ছবি মুক্তি পেয়েছে। কোনটিই ব্যবসা সফল হয়নি। তাই এ নিয়ে কিছু বলতেও চান না এ অভিনেত্রী। তবে চলতি বছর নিয়ে বলেন, 'গত বছর নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এ বছরটি মনে হয় আমার জন্য ভালোই যাবে। কয়েকটি ছবি মুক্তি পাবে এবং ছবিগুলো দর্শক টানতে সমর্থ হবে। 'আনন্দ অশ্রম্ন' ছবির শুটিং শেষ। 'মন দেব মন নেব' সেন্সরে। 'প্রেমের বাঁধন' ছবির কাজ অর্ধেক হয়েছে।