নতুন ছন্দে সাবিলা নূর

আজ উত্তরা কিংবা কাল নিকেতন। পরশু পুবাইল, তারপরের দিন পুরান ঢাকা। কখনও বা ঢাকার বাইরে। লোকেশন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে চরিত্র। অভিনয় করছেন কখনো শহুরে দস্যি মেয়ে, কখনো বোকা কিংবা ভূতের অবয়বে। এভাবেই চলছে সাবিলা নূরের শুটিং ব্যস্ততা। এককথায় দম ফেলার ফুরসত নেই তার। ফাঁকে ফাঁকে করছেন টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কাজও।

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

রায়হান রহমান
সাবিলা নূর
নাট্যপাড়ায় কান পাতলেই শোনা যায় সাবিলার পরিবর্তনের সুর। বিয়ের পর আরও পরিণত হয়েছেন তিনি। নাটকের গল্প নির্বাচন ও বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করছেন প্রতিনিয়ত। বর্তমান টিভি নাটকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, একঘেয়েমিতা। তবে এমন অভিযোগে খুব বেশি বিদ্ধ হতে হয়নি সাবিলা নূরের নাটকগুলোকে। শুরু থেকেই নানামুখী চরিত্রে দর্শকের মননে জায়গা করে নিয়েছেন এ শোবিজ কন্যা। কদিন বাদেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ উপলক্ষে বেশ কয়েকটি নাটকে কাজ করছেন সাবিলা। তার আগে প্রীতি দত্তের পরিচালনায় 'তবু তুমি' ও 'আমরা করব জয়' নামের নাটকের কাজ শেষ করেছেন। এতে সাবিলার বিপরীতে দেখা যাবে ইরফান সাজ্জাদ ও জোভান আহমেদকে। এ ছাড়াও হাতে আছে আরও বেশ কয়েকটি নাটকের কাজ। কাজ করতে করতে দম ফেলার ফুরসত নেই ছোট পর্দার এ অভিনেত্রীর। বিগত কয়েক বছর ধরেই ব্যতিক্রমী সব চরিত্রে কাজ করছেন সাবিলা। বিশেষ করে গত ঈদে প্রচারিত হওয়া বেশ কয়েকটি নাটক সবার নজর কেড়েছে। তারমধ্যে 'উবার', 'বেটার হাফ', 'ছঁ্যাকা খেয়ে বেঁকা', 'জোকার জসিম', 'টোটাল রিলোডেড' ও 'দ্য টেইলর' অন্যতম। এরমধ্যে উবার নাটকটি ছিল আলোচনার তুঙ্গে। এ নাটকে দেখা গেছে, মধ্যবিত্ত জীবনের হাজারো টানাপড়েন নিয়ে বহু নাটক নির্মিত হলেও 'উবার' নাটকটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। বাবা সরকারি চাকরি করেন। মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া। আসা-যাওয়ায় কষ্ট হওয়ায় বাবার কাছে আকুল আবেদন, একটা স্কুটি চাই। মেয়ের আবদার রাখতে, বাবা অফিস শেষে 'উবার' চালানো শুরু করেন। এদিকে অধৈর্য মেয়ে বাবার আশায় না থেকে বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে বাড়ি থকে পালান। উঠেন উবারে। অদ্ভুভভাবে সেই উবার চালক ছিলেন মেয়েটির বাবা। এভাবেই চলতে থাকে হৃদয়বিদারক নাটকটি। টিভি নাটকের পাশাপাশি করছেন টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের কাজও। সম্প্রতি স্বামী নেহাল সুনন্দকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন একটি বেসরকারি টেলিভিশনে। সেখানে ব্যক্তিজীবনের অনেক বিষয়ই ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন তিনি। বাদ যায়নি শ্বশুরবাড়ির প্রসঙ্গও। সাবিলা বলেন, 'সবাই খুবই আন্তরিকভাবে আমার কাজকে উৎসাহ দিচ্ছেন। বিয়ের পর প্রথম দিন শুটিংয়ে যাওয়ার সময় শাশুড়ি আমার জন্য টিফিনবক্সে করে খাবার দিয়ে দিয়েছেন। আবার শুটিং থেকে ফিরতে দেরি হওয়ায় খাবার টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন। এসব আমার কাজের শক্তি আরও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।' শ্বশুরবাড়িতে এসে নিজের দায়িত্বও বেড়েছে। এ বিষয় সাবিলা বলেন, 'বিয়ের পূর্বে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে কস্টিউম, নাটকের চিত্রনাট্যের বিষয়েও খেয়াল রাখতেন মা। বিয়ের পর তা নিজেকেই করতে হচ্ছে। নিজ দায়িত্বে এসব করছি, বেশ উপভোগও করছি।' এদিকে শহুরে দস্যি মেয়ে কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের চরিত্রে সাবিলাকেই সবাই চেনেন। তাই বলে ভূতের চরিত্রে! এও সম্ভব। হঁ্যা এটাও সম্ভব হয়েছে কেবল সাবিলার অভিনয়শৈলীর বলে। চরিত্রের প্রয়োজনে হয়েছেন ভূত। না! এটা কোনো বোকা ভূত নয়। সত্যি সত্যি ভৌতিক গল্পে কাজ করেছেন তিনি। গত বছর একটি ওয়েব সিরিজের জন্য ভূত হয়েছিলেন সাবিলা। এ নিয়ে তিনি বলেন, 'আমি ভূত অনেক ভয় পাই। তাও চরিত্রের জন্য ভূত হয়েছি। আর চরিত্রটিকে একদম ন্যাচারাল রাখার জন্য এখানে কোনো গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়নি। সবটা অভিনয় দিয়েই ফুটিয়ে তোলতে হয়েছে। আমরা পুরো ইউনিট মিলে গাজীপুরের একটি পুরনো বাড়িতে এই ভূতের দৃশ্যায়ন করেছি। সত্যিই অভিজ্ঞতাটা চমৎকার।' দিনকে দিন সাবিলার নিত্যনতুন গল্পের প্রতি আগ্রহ আরও তীব্র হচ্ছে। পরিণত চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করা সাবিলার নেশা হয়ে গেছে। একথায় নতুন গল্প যেখানে, সাবিলা সেখানে। এতো গেল ছোট পর্দার গল্পসল্প। কিন্তু বড় পর্দা! সেখানেও একই দশা। এখনো মনের মতো গল্প খুঁজে পাননি সাবিলা, তাই বড় পর্দার কোনো প্রজেক্টে দেখা যাচ্ছে না তাকে। এ নিয়ে সাবিলা বলেন, সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে। তবে বড় পর্দা বলেই প্রস্তুতিটা হওয়া চাই বড়োসড়ো। তাই সিনেমার কাজের জন্য আমার আরেকটু সময় প্রয়োজন'। প্রসঙ্গত, প্রেমিক সুনন্দকে ২৫ অক্টোবর বিয়ে করেন সাবিলা। এরপর যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মধুচন্দ্রিমার জন্য উড়াল দেন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। সেখানে ঘোরাঘুরি শেষে ফিরেছেন। মন দিয়েছেন কাজে। বিয়ের আগে ও পরে মাসখানেক সব ধরনের শুটিং থেকে দূরে ছিলেন তিনি।