তারার মেলার মুখোমুখি শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। ওপার বাংলার শীর্ষস্থানীয় নায়িকা। এপার বাংলার দর্শকের কাছেও প্রিয় মুখ তিনি। চার বছর আগে যৌথ প্রযোজনার ছবি 'শিকারি'তে অভিনয়ের সুবাদে বাংলাদেশে আসেন তিনি। ছবিটি সুপার হিট ব্যবসা করায় ঢাকাই ছবির নির্মাতাদের মনেও আগ্রহের সৃষ্টি করেন। 'শিকারি'র পর বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শ্রাবন্তী। সম্প্রতি 'বিক্ষোভ' নামের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য শনিবার ফের ঢাকায় এসেছিলেন এ অভিনেত্রী। এফডিসিতে একটানা কাজ শেষ করে গতকাল বুধবারই কলকাতায় ফিরে যান। যাওয়ার আগে তারার মেলাকে আলাদা করে খানিকটা সময় দেন তিনি। ি

প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

জাহাঙ্গীর বিপস্নব
শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়
এবারই প্রথমবার... বিক্ষোভ ছবির গল্প কেমন মনে হচ্ছে? আর এতে আপনার চরিত্রটি কেমন? জবাবে শ্রাবন্তী বলেন, 'চিত্রনাট্য পাওয়ার আগে মনে হয়েছিল সাদামাটা একটি গল্প হবে হয়তো। কিন্তু চিত্রনাট্য দেখার পর আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। এর গল্প গতানুগতিক ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আর কাজ করতে গিয়ে বারবার নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। আর এখানে আমি একজন স্কুল শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করছি। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে সেই শিক্ষিকা কীভাবে যুক্ত হলেন সেই গল্পই উঠে আসবে চলচ্চিত্রে। যদিও ছবির গল্প শোনার পর আলাদাভাবে চরিত্রটি বুঝিয়ে নিয়েছি পরিচালকের কাছ থেকে। আমি মনে করি, কোনো চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চাইলে সবার আগে সেই চরিত্রকে ভালোবাসতে হবে। ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো কোনো স্কুল শিক্ষিকার চরিত্রে অভিনয় করছি; ফলে উত্তেজনাটা একটু বেশিই।' নায়িকা নই, অভিনেত্রী আমি... বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিতে এখনো অনেক নায়িকা গস্নামারসর্বস্ব চরিত্রকে বেশি প্রাধ্যান্য দেন। সে ক্ষেত্রে এ ছবিতে একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষিকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন। বিষয়টি একটু গোলমেলো হয়ে গেল না? শ্রাবন্তীর ঝটপট জবাব, আমি বরাবরই নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবেই দেখি, নায়িকা নয়। আমি বারবার বলি, আমি অভিনেত্রী হতে চেয়েছি; দর্শকরা ভালোবেসে আমাকে নায়িকা বানিয়েছে। পছন্দের চরিত্র যে ধরনেরই হোক না কেন আমি করি। চরিত্রটা আমার মনে ধরেছে সে কারণেই করছি। চরিত্রের মধ্যে ভেরিয়েশন থাকলে সেটা দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য ও সমাদৃত হবেই, এটা আমার বিশ্বাস। আর একটা কথা বলতেই হবে, সব অভিনয়শিল্পীরই উচিত গস্নামার নয়, চরিত্রের গভীরতা ও বৈচিত্র্য খোঁজা। আমি নিজেও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি কথাটা।' আমার কোনো আপত্তি নেই... এক এক করে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেন। অনেকেই ঢাকাই ছবিতে নিয়মিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে শ্রাবন্তী বলেন, 'ভারত-বাংলাদেশ প্রযোজনার ছবি করতে গেলে যে বাংলাদেশে গিয়েই থাকতে হবে, এমন তো নয়। বাংলাদেশের কাজ করার ধরনটা আবার আলাদা। বাংলাদেশে আমার প্রচুর ভক্ত। ওরা সত্যিই বাংলা ছবি দেখে। যেটা কলকাতায় আমরা দেখতে পাই না। বাঙালি ছেলেমেয়েদের নাকি বাংলা ছবি দেখতে ইচ্ছে করে না! এদের ওপর আমার ভীষণ রাগ হয়। বাংলাদেশে কিন্তু সবাই আগে বাংলা ছবি দেখে। আপাতত বিক্ষোভ করছি। এটা করতে থাকি; পরে ভালো কোনো চিত্রনাট্য পেলে অবশ্যই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র করব। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে খুব ভালোবাসে। তাদের জন্যই ভালো ভালো কিছু কাজের সঙ্গে আমি যুক্ত হতে চাই। ঢাকার মানুষ সত্যি খুবই আন্তরিক। অভিনয় করাটাই আমার কাজ; আর কাজ করতে গিয়ে মানুষের আন্তরিকতা পেলে আনন্দে মনটা ভরে যায়। এখানে গিয়ে কাজ করতে কিন্তু আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি এ দেশেরই মেয়ে... 'আগেও বলেছি, এখনও বলছি, আমি বাংলাদেশি। এ দেশেরই মেয়ে আমি।' বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলতেই বিরামহীন বলতে শুরু করেন শ্রাবন্তী, বলেন, 'আমি এর আগে যখন প্রথম বাংলাদেশে কাজ করি ২০১৬ সালে, তখন প্রথম বাংলাদেশে আসি। যদিও ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশে আসার জন্য মন ব্যাকুল হয়েছিল। আমার পূর্বপুরুষ বাংলাদেশি। আমার দাদু বরিশালের। দাদুর মুখে অনেক গল্প শুনেছি বাংলাদেশের। আমরা গর্বের সঙ্গে নিজেকে বাঙাল বলে পরিচয় দিই। আমার ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল এ দেশে আসার। আমার মন বলতো একদিন না একদিন যাবই। বলে না মন থেকে যদি কেউ কিছু চায় ভগবান সেটা পূরণ করে। তাই আমি বাংলাদেশে আসতে পেরেছি। সেই যে শুরু। তারপর থেকে কিছুদিন পর পরই বাংলাদেশে আসছি। আশা করি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে আজীবন।' বলিউডের কথা ভাবি না... টলিউড ও ঢালিউউ- দুই মাধ্যমেই কাজ করছেন। বলিউডের ছবিতে কাজ করার ইচ্ছেও আছে নাকি? উত্তরে শ্রাবন্তী বলেন, 'যদি মুম্বাইয়ে গিয়ে কাজের কথা বলেন, তাহলে বলব আমি এতটাই কুঁড়ে যে এখন মুম্বাইয়ে গিয়ে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করার কথা ভাবতে পারব না। আগেও চেষ্টা করিনি। তাহলে ওখানে গিয়ে থাকতে হতো। স্ট্রাগল করতে হতো। আসলে টলিউডে আমি এত স্বাচ্ছন্দ্য আর খুশি যে, কোনো দিন মুম্বাইয়ে যাওয়ার কথা ভাবিইনি। এত ছোট থেকে এখানে কাজ করছি, যে পরিচালক-প্রযোজক সবাই ভালোবাসেন।' চেষ্টা করছি ভালো থাকার... নতুন বিয়ে নতুন সংসার। কেমন মনে হচ্ছে। শ্রাবন্তীর ভাষায়, সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছে। আসলে বিয়ে নিয়ে সবাই এত প্রশ্ন করছে যে, এবার আমার অস্বস্তি হচ্ছে। যদিও প্রশ্ন তোলাও স্বাভাবিক। এটা আমিও বুঝি। তবে ভালো লাগছে নতুন করে জীবনটা শুরু করতে পেরে। আমি একটু সংসারী মেয়ে। সবাইকে নিয়ে সংসার করতে ভালোবাসি। চেষ্টা করছি নতুন জীবনে ভালো থাকার। সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।'